× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

কৃষি খাতে নতুন মূল্যায়ন এখন সময়ের দাবি

ড. জাহাঙ্গীর আলম

প্রকাশ : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৫:০০ পিএম

আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৭:০৬ পিএম

ড. জাহাঙ্গীর আলম

ড. জাহাঙ্গীর আলম

দেশের সবচেয়ে বড় উৎপাদনশীল খাত হচ্ছে কৃষি। অন্যান্য খাত তথা শিল্প, কলকারখানা এগুলো সহযোগী খাত। শিল্পের কাঁচামাল কৃষি থেকেই আসে। আর আমাদের জীবনধারণের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে খাদ্যনিরাপত্তা। অতীতের মতো বিদেশের ওপর নির্ভরশীল থেকে যে দেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে না তা এখন নিশ্চিত। তাই কৃষি খাতে উৎপাদন বাড়াতে হবে। 

বাস্তবতা হচ্ছে, আমরা একদিকে চাহিদামতো কৃষিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য উৎপাদন করতে পারছিলাম না, অপরদিকে ডলার সংকটের কারণে আমদানিও করা যাচ্ছিল না। অথচ গম, ভুট্টাসহ অন্যান্য কৃষিপণ্য আমদানি করতে হয়। এসব কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। গত বছরের নভেম্বরের খাদ্যমূল্যস্ফীতি এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ দাঁড়িয়েছিল তথা ১৩.৮ শতাংশ। আর ডিসেম্বরে 

কিছুটা কমলেও ১৩ শতাংশের কাছাকাছিই ছিল। বৈশ্বিক ও বাংলাদেশ উভয় প্রেক্ষাপটে এটি উচ্চ মূল্যস্ফীতি। এমন পরিস্থিতিতে কৃষি খাতে উৎপাদন বৃদ্ধি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৈশ্বিক পরিস্থিতি, বাংলাদেশের আর্থিক সংকট ও উচ্চ মূল্যস্ফীতি কমাতে হলে কৃষিপণ্যের উৎপাদন বাড়ানো ছাড়া উপায় নেই। উৎপাদন না বাড়িয়ে কোনোভাবেই খাদ্যমূল্যস্ফীতি দমানো যাবে না। যেমন করে প্রশাসনসহ বিভিন্ন খাতে সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার ১১টি কমিশন গঠন করেছে, ঠিক তেমনি কৃষি খাতকে সংস্কার করতে একটি কমিশন গঠন করতে হবে। কৃষি খাতে নতুন মূল্যায়ন এখন সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে। অ্যাগ্রিকালচার রিভিউতে বা কমিশনে এই খাতের বিশেষজ্ঞ তথা কৃষি অর্থনীতিবিদ, গবেষকদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। রিভিউতে আসতে পারে ক্রপস সেক্টর, লাইভস্টক সেক্টর, ফরেস্ট্রি অ্যান্ড ফিশারিজ সেক্টর। এসবের সমন্বিত বিশ্লেষণ দরকার। 

বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় কৃষি খাতে বাংলাদেশের ভর্তুকি খুব কম। আমাদের ৯২ শতাংশ কৃষক হচ্ছে ক্ষুদ্র। তারা প্রচুর বিনিয়োগ করতে পারে না। চীনে প্রত্যেক কৃষককে ভর্তুকি দেওয়া হয় ১৫৯ ডলার, বাংলাদেশে মাত্র ৭.৮ ডলার। এটি খুবই কম। কৃষি খাতে অর্থায়ন বড় সমস্যা। এজন্য গরিব কৃষকদের জন্য অর্থের জোগান দেওয়া দরকার। সাম্প্রতিক সময়ে অ্যাগ্রিকালচার ক্রেডিট গড়ে ৭-৮ শতাংশ হারে বাড়ছে। গত ১৫-২০ বছর যাবৎ কৃষিঋণ বাড়লেও দেশের কৃষকদের মধ্যে ৪০ শতাংশের বেশি লোক প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ পাচ্ছে না। ভর্তুকির মূল টাকাটা অ্যাগ্রিকালচার সেক্টরের বড় লোকেরা নিয়ে যাচ্ছে। এসব সমস্যা চিহ্নিত করতে কৃষিখা তে গভীর বিশ্লেষণ দরকার। এজন্যই কৃষি খাতে একটা রিভিউ হতে হবে। 

খাদ্যশস্য উৎপাদন থেকে শুরু করে মাছ-মাংস খাওয়ার যে পরিসংখ্যান আমরা পাচ্ছি তা খুব কম নির্ভরযোগ্য। গত বছর বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আউশের উৎপাদন কমপক্ষে ৪ ভাগের এক ভাগ নষ্ট হয়েছে। আমনের আবাদ ব্যাপকভাবে নষ্ট হয়েছে। যা টার্গেট ছিল তার তুলনায় ৩ লাখ হেক্টর কম জমিতে উৎপাদন হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, এ বছর আমনের উৎপাদন প্রায় ১ কোটি ৬৮ লাখ মেট্রিক টন হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ বলছে, আমনের উৎপাদন ১ কোটি ৪০ লাখ টন হবে। অন্যদিকে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) একটি পরিসংখ্যান দেয়। আর তাদের পরিসংখ্যান এত দেরিতে দেয় যা আর ব্যবহারযোগ্য থাকে না। বিবিএসকে আরও তাড়াতাড়ি তথ্য দিতে হবে। 

আমার মনে হয় ডিএই যে পরিসংখ্যান দেয় তা স্ফীত। আমার ধারণা, ২০২৪ সালে মোট চাল উৎপাদন ৩ কোটি ৮০ লাখ টন হতে পারে। সেখানে কৃষক, চাতাল, সরকার, ফড়িয়া যারা মজুদ করে সব হিসেব ধরলে বছরে ৪ কোটি ৭-৮ লাখ টন চাল দরকার হয়। আমরা সঠিক পরিসংখ্যান পাচ্ছি না। এমন পরিসংখ্যানের কারণে সঠিক নীতিগ্রহণ করতে পারছি না। 

দুধ, ডিম, মাছ ও মাংস সবকিছুর উৎপাদন ব্যয় আমাদের বেশি। ব্রাজিল ৫০০ টাকার কমে এক কেজি গরুর মাংস সরবরাহের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তার মানে তাদের উৎপাদন খরচ আরও কম। আর আমরা ৭৫০ টাকার বেশি দামে মাংস বিক্রি করছি। উৎপাদন খরচ কমানোর বুদ্ধি হচ্ছেÑ দক্ষভাবে টেকনোলজি ব্যবহার করা। প্রোডাকশন স্কিল বাড়ানো। এসব বিষয় বিশ্লেষণের জন্য অ্যাগ্রিকালচার রিভিউ দরকার। এর জন্য চাই অ্যাগ্রিকালচার কমিশন। কমিশনের যে সুপারিশ আসবে তা এই সরকার যতটুকু পারে বাস্তবায়ন করবে। আগামীতে নির্বাচিত সরকারের ওপর বাকিটা বাস্তবায়নের ভার থাকবে। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি কৃষি খাতে নতুন করে একটি মূল্যায়ন করে যেতে পারে তা হবে দেশের জন্য ভালো একটা কাজ। 

  • কৃষি অর্থনীতিবিদ ও ইউনিভার্সিটি অব গ্লোবাল ভিলেজের সাবেক উপাচার্য
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা