× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ঢাকার বুকে বিরল সোনাজঙ্ঘা

ড. আ ন ম আমিনুর রহমান

প্রকাশ : ৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ০৮:৫৭ এএম

ঢাকার কেরানীগঞ্জের বান্দের ঘাটের কাছে একটি সোনাজঙ্ঘা সারস। লেখক

ঢাকার কেরানীগঞ্জের বান্দের ঘাটের কাছে একটি সোনাজঙ্ঘা সারস। লেখক

গত দুই সপ্তাহ ধরে ফেসবুকে একটি পাখির ছবি ঘুরপাক খাচ্ছে। দেশের নানা প্রান্ত থেকে পরিচিত-অপরিচিত পাখি পর্যবেক্ষক ও আলোকচিত্রীরা আসছেন ওর ছবি তোলার জন্য। অথচ আমার বাসার এত কাছে হওয়া সত্ত্বেও ব্যস্ততার কারণে যেতে পারছি না। শেষমেশ কাল রাতে সিদ্ধান্ত নিলাম আজ যেভাবেই হোক ওর সন্ধানে যাব। সকাল পৌনে ৭টায় মোবাইল ফোন ভেজে উঠল। ওপাশ থেকে পক্ষী আলোকচিত্রী ইমরুল হাসান জিজ্ঞেস করলেন উনি পাখিটির সন্ধানে যাচ্ছেন, আমি যাব কি না? আমি বললাম, পাখিটি দেখার সঙ্গে সঙ্গে আমাকে ফোন করতে। সকাল ঠিক পৌনে ৯টার ইমরুলের ফোন পেলাম। 

ঘুম থেকে উঠে দ্রুত জামাকাপড় পরে অটোতে চেপে বসিলা গেলাম। ওখান থেকে কেরানীগঞ্জের কলাতিয়ার অটোরিকসায় চড়লাম। আঁটিবাজার পেরিয়ে বান্দের ঘাটে নেমে এক কিলোমিটারেরও বেশি হেঁটে স্পটে পৌঁছলম। স্পটটি একটি হাউজিং সোসাইটির ভেতর। তবে নামেই হাউজিং, বাস্তবে এক মাছের ঘেরে ঢুকলাম যেন! যাহোক, বেশ কয়েকটি মাছের পুকুরের পাড় মাড়িয়ে অবশেষে শেষ পুকুরপাড়ে গিয়ে থামলাম। বিশাল আকারের সারস পাখিটি ওখানে ঠায় দাঁড়িয়ে। মিনিট সাতেক ও যেন স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল! এরপর হাঁটাহাঁটি শুরু করল। শুকনো জায়গা থেকে হাঁটতে হাঁটতে পানিতে নামল। ঠিক বাইশ মিনিট পর আকাশে উড়ল এবং আধা মিনিটের মধ্যে দূর আকাশে মিলিয়ে গেল। 

২০২৩-এর নভেম্বরে পদ্মা নদীর দুটি চরে বিরল ও দুর্লভ পাখির সন্ধানে গিয়ে এই সারসের সন্ধান পেয়েছিলাম। জাকির মাঝির ইঞ্জিন নৌকা ঘাট থেকে ছাড়ার মিনিট তিনেকের মধ্যেই মাথার ঠিক ওপর দিয়ে দুটি ঝাঁকে ৩২টি একই প্রজাতির সারস উড়ে গেল। পাখিগুলো পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে চলে যাওয়ার আগেই দ্রুত ক’টি উড়ন্ত ছবি তুলে নিলাম। দূর আকাশে পুরোপুরি মিলিয়ে যাওয়া পর্যন্ত ওদের দিকে তাকিয়ে রইলাম। ভাবতেই পারিনি পাখিগুলোকে এখানে এভাবে দেখব। এদেশের প্রাক্তন আবাসিক পাখিগুলোকে এখন প্রতি শীতেই পরিযায়ী হয়ে এদেশে আসতে দেখি। যদিও সীমান্তবর্তী শেরপুর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে দুবার দুটি ছানা দেখা গিয়েছিল, কিন্তু বাসা ও ডিম দেখা যায়নি। আর এ কারণেই মনে আশা জাগে হয়তো একদিন আবারও ওদের এদেশে বাসা বাঁধতে দেখা যাবে। 

বিদেশের মাটিতে পাখিটিকে বহুবার দেখলেও, বহুবার ওর সুন্দর সুন্দর ছবি তুললেও নিজ দেশের মাটিতে প্রথম দেখলাম ২০১৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মৌলভীবাজারের জুড়িতে, হাকালুকি হওরে। তবে বেশ দূর থেকে উড়ন্ত একজোড়া পাখি দেখে মন ভরল না। আট-নয় বছর ধরে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে বহুবার ওদের দেখা গেলেও আমি দেখতে ব্যর্থ হয়েছি বারবার। অবশেষে দেশের মাটিতে ওদেরকে কাছ থেকে দেখার ইচ্ছে পূরণ হলো চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুরের চরইল বিলে ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষে ২৯ জুন ২০১৮-এ। আর আজ কেরানীগঞ্জে আরও বেশি কাছে পেলাম ওকে। এর আগে ঢাকায় পাখিটিকে তেমন একটা দেখা যায়নি। 

বিরল এই পাখিটি এদেশের প্রাক্তন আবাসিক ও মহাবিপন্ন পরিযায়ী পাখি সোনাজঙ্ঘা। রাঙা মানিকজোড়, রঙিলা বক, চিত্রা বক বা রঙিলা সারস নামেও পরিচিত। সাঁওতালরা বলে জাংগিল। ইংরেজি নাম Painted Stork। বৈজ্ঞানিক নাম mycteria leucocephala। ওরা মূলত দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আবাসিক পাখি। বর্তমানে বিশ্বে প্রায় শংকাগ্রস্ত।

প্রাপ্তবয়স্ক সোনাজঙ্ঘার দৈর্ঘ্য ৯৩ থেকে ১০২ সেন্টিমিটার, প্রসারিত ডানা ১৫০ থেকে ১৬০ সেন্টিমিটার ও ওজন ২.০ থেকে ৩.৫ কেজি। মাথার পালকবিহীন অংশ কমলা-হলুদ। প্রজননকালে পুরুষের মাথা আলতা-লাল হয়ে যায়। চোখের রঙ খড়ের মতো হলদে। লম্বা চঞ্চুর রঙ হলুদ। ধূসর-বাদামি পায়ে যেন আলতা মাখা। ঘাড় ও পিঠ সাদা। দেহের নিচটা সাদা ও বুকে কালো ছোপ। ডানার ওপরটা কালো ও তাতে সাদা ছোপ। লেজের পালকেও আলতা-লাল রঙ মাখা। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। অপ্রাপ্ত বয়স্ক পাখি ফ্যাকাশে সাদা। ওদের মাথা-ঘাড়-ডানার পালক-ঢাকনি বাদামি।

সোনাজঙ্ঘা জলমগ্ন মাঠ, নদীর তীর, জোয়ার-ভাটার কাদাচর, হ্রদ ইত্যাদিতে জোড়ায় জোড়ায় বা ছোট দলে বিচরণ করে। দিবাচর, জলচর ও ভূচারী পাখিগুলো অল্প পানিতে হেঁটে ও কাদায় চঞ্চু ঢুকিয়ে মাছ, ব্যাঙ, চিংড়ি, বড় কীটপতঙ্গ ইত্যাদি খায়। সচরাচর নীরব থাকে; তবে প্রজনন মৌসুমে গোঙানোর মতো শব্দ করে।

জুলাই থেকে অক্টোবর প্রজননকালে সোনাজঙ্ঘা পানিতে দাঁড়ানো উঁচু গাছের মগডালে ডালপালা দিয়ে মাচানের মতো বড়োসড়ো বাসা গড়ে। একই গাছে দলবদ্ধভাবে বাস করে; এমনকি অন্যান্য জলচর পাখি, যেমনÑ বক, পানকৌড়ি, কাস্তেচরা প্রভৃতির সঙ্গেও বাসা করতে পারে। ডিম পাড়ে ৩ থেকে ৪টি। ডিমের রঙ সাদা, তাতে লম্বা বাদামি দাগ থাকে। ডিম ফোটে ২৮ থেকে ৩৫ দিনে। বাসা তৈরি, ডিমে তা দেওয়া ও ছানাদের লালনপালন স্ত্রী-পুরুষ মিলেমিশে করে। ছানারা প্রায় ২৮ দিনে উড়তে শেখে ও নীলাকাশে স্বপ্নের ডানা মেলে। আয়ুষ্কাল প্রায় আট বছর।

  • পাখি ও বন্য প্রাণী প্রজনন ও চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা