সিলেট অফিস
প্রকাশ : ২৭ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:২৩ পিএম
আপডেট : ২৭ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:৩০ পিএম
গোয়ালগাদ্দা জাতের শিম আবাদ করে ভালো ফলন হলেও ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না সিলেটের চাষিরা। প্রবা ফটো
প্রতি বছরের মতো এবারও সিলেটের বিভিন্ন উপজেলায় শিমের ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি ও মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন জেলার কৃষকরা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, জেলার দক্ষিণ সুরমা, গোলাপগঞ্জ, জৈন্তাপুরসহ বিভিন্ন উপজেলায় শিমের ব্যাপক আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে বিশেষ জাতের শিম ‘গোয়ালগাদ্দা’ চাষ হয় গোলাপগঞ্জ উপজেলায়। মাঠে, বাড়ির আঙিনা, পুকুরপাড় সর্বত্রই শুধু শিম আর শিম। শুধু কৃষক নয়, এ দৃশ্য দেখে পথিকেরও মন জুড়ায়।
পোক্ত হয়ে ওঠা এসব শিম বিক্রি করতে কৃষকরা ক্লান্তিহীন সময় পার করছেন। বাজারজাত করতে মাচা থেকে তারা সংগ্রহ করছেন শিম। এসব শিম শুধু স্থানীয় বাজারেই বিক্রি হচ্ছে না, রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও। ফলে সিলেটের গোয়ালগাদ্দা বয়ে আনছে বৈদেশিক মুদ্রা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেটের তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সিলেট জেলায় ৪ হাজার ৩৯০ হেক্টর জমিতে গোয়ালগাদ্দা শিম চাষ হয়। উৎপাদন হয় ৫০ হাজার ৪৮৫ টন। ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে ৪ হাজার ২১০ হেক্টর জমিতে ৪৮ হাজার ৮৩৬ টন শিম উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন তারা।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, ভাদ্র মাস থেকে শিম চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করা হয়। কার্তিক মাসে বীজ বপন করা হয়। রোপনের ২১ থেকে ২৫দিনের মধ্যেই গাছ লতায় ছেয়ে যায়। এরপর ফুল আসে, তা থেকে ফল। এ বছর শিমের উৎপাদন দেখে খুশি কৃষকরা। কিন্তু ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় তারা লোকসানের ঝুঁকিতে পড়েছেন।
এ ব্যাপারে দক্ষিণ পালপাড়া গ্রামের শিম চাষি সিরাজ উদ্দিন বলেন, ‘আমি দীর্ঘ দিন ধরে শিম চাষ করছি। গত বছর ফলন ভালো হয়েছিল। এ বছর আমি তিন বিঘা জমিতে শিম চাষ করেছি, ফলনও ভালো হয়েছে। তবে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় অনেকটাই হতাশ হয়ে পড়েছি। সার, বীজ ও শ্রমিক খরচ শেষে লাভের অংশ পাওয়া অনেকটাই দুষ্কর হয়ে পড়েছে।'
স্থানীয় শিম চাষি আজমান বলেন, ‘গত বছর আমরা শিম বিক্রি করে ন্যায্যমূল্য পেয়েছি। এ বছর ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আগের চেয়ে বেশি জমিতে আবাদ করেছি। কিন্তু শিমের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছি না। প্রতি কেজি শিম ১৩ থেকে ১৭ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যাতে উৎপাদন খরচও উঠছে না।’
গোলাপগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাশরেফুল আলম বলেন, ‘গোলাপগঞ্জ উপজেলায় ৭৪২ হেক্টর জমিতে শিম চাষ হয়েছে। স্থানীয় পুরকায়স্থ বাজার, চৌধুরী বাজার ও রাখালগঞ্জ বাজারে কৃষকেরা পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে শিম বিক্রি করেন। সেখান থেকে পাইকাররা সরাসরি শিম সংগ্রহ করেন। পরবর্তীতে শিম প্রক্রিয়াজাত করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে থাকেন।’
সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ খয়ের উদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘সিলেট অঞ্চলে বিগত কয়েক বছরের ব্যবধানে শিম চাষ বেড়েছে। বিশেষ করে দেশ বিখ্যাত গোয়ালগাদ্দা শিম এখন জেলার চাষীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। রপ্তানি যোগ্য এ শিম চাষে সফলতা পেয়ে অনেক কৃষক শিম চাষে এগিয়ে এসেছে। কৃষি অফিস এসব কৃষকদের সবসময় পরামর্শ দিয়ে আসছে।’