× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বিহঙ্গ

বাইক্কা বিলের পরিযায়ী চ্যাগা

আ ন ম আমিনুর রহমান

প্রকাশ : ২৭ জানুয়ারি ২০২৫ ০৯:২৫ এএম

আপডেট : ২৭ জানুয়ারি ২০২৫ ২১:৪৬ পিএম

শ্রীমঙ্গলের বাইক্কা বিল জলাভূমি অভয়ারণ্যে খাবার খাওয়ায় ব্যস্ত চ্যাগা। ছবি : লেখক

শ্রীমঙ্গলের বাইক্কা বিল জলাভূমি অভয়ারণ্যে খাবার খাওয়ায় ব্যস্ত চ্যাগা। ছবি : লেখক

সকাল নয়টা বাজার ঠিক পাঁচ মিনিট আগে আব্দুর রউফের ছোট ভাইয়ের সিএনজি অটোরিকশা বাইক্কা বিলে এসে থামল। শ্রীমঙ্গলে এলে মূলত রউফের অটোরিকশাতেই ঘুরে বেড়াই। তবে এবার সে ব্যস্ত থাকায় ছোট ভাইকে পাঠিয়েছে। যাহোক, অটোরিকশা থেকে নেমেই মনটা খারাপ হয়ে গেল। কারণ চারদিক কুয়াশার চাদরে ঢেকে আছে। কখন এই কুয়াশা কাটবে কে জানে? হঠাৎই রাস্তার পাশের জলাভূমিতে একটি যাঠুয়া বক দেখে দ্রুত এগিয়ে গেলাম। দু-তিনটা ক্লিক করে ছবি দেখে হতাশ হয়ে গেলাম। এমন সময় পাশ থেকে নলটুনি বা ট্যাকটেকির (Striated Grassbird) আওয়াজ শুনলাম। ঢোলকলমি গাছের ডগায় বসে ও ডাকছিল। ওর দিকে এগিয়ে যেতেই জলাভূমির পাড়ে ওর মতোই গাঢ় দাগযুক্ত বাদামি দেহের একটি পাখিকে লম্বা চঞ্চু দিয়ে কাদাপানিতে খোঁচাখুঁচি করতে দেখলাম। একে তো কুয়াশা, তার ওপর কাদাজল। কাজেই ওর খুব কাছাকাছি যাওয়া সম্ভব হলো না। অতএব, দূর থেকেই পটাপট ক’টা ক্লিক করলাম। তবে অতি চতুর পাখিটি আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে গেল এবং আর কোনো ছবি তোলার সুযোগ না দিয়ে দ্রুত উড়ে গেল। মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলায় বিখ্যাত বাইক্কা বিল জলাভূমি অভয়ারণ্যে ২৭ জানুয়ারি ২০১৭-এর ঘটনা এটি। 

কুয়াশায় ঢাকা বাইক্কা বিলে দেখা পাখিটি এদেশের সচরাচর দৃশ্যমান পরিযায়ী পাখি চ্যাগা। কাদাখোঁচা বা চেগ্গা (পশ্চিমবঙ্গ) নামেও পরিচিত। ইংরেজি নাম Pintail Snipe। স্কোলেপ্যাসিডি গোত্রের পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম Gallinago stenura (গ্যালিনাগো স্টেনুরা)। রাশিয়ার উত্তরাঞ্চলের আবাসিক পাখিটি শীতে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে পরিযায়ী হয়। 

চ্যাগা লম্বা চঞ্চুযুক্ত জলচর পাখি। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহের দৈর্ঘ্য ২৫ থেকে ২৭ সেন্টিমিটার ও প্রসারিত ডানা ৪৪ থেকে ৪৮ সেন্টিমিটার। ওজন ৮৫ থেকে ১২৫ গ্রাম। দেহের ওপরের অংশ কালচে বাদামি এবং পায়ুসহ নিচের অংশ ধূসরাভ। পুরো দেহের পালকের ওপর অসংখ্য গাঢ় ছিটছোপ ও দাগ রয়েছে। মাথা কালচে। লেজের পালকের সংখ্যা ২৬টি, যা ম্যাচের কাঠির মতো সুবিন্যস্ত। বিশ্রামরত অবস্থায় কদাচ লেজ ডানার বাইরে বেরিয়ে থাকে। ওড়ার সময় ডানার মধ্য পালকের প্রান্তে সাদা দাগ দেখা যায় না। তবে ডানার পালক ঢাকনিতে সাদা-কালো তরঙ্গিত রেখা দেখা যায়। চোখের রঙ বাদামি। কালচে চঞ্চুটি লম্বা ও সরু যার গোড়া ফ্যাকাশে। পা, পায়ের পাতা ও আঙুল হলুদাভ-সবুজ। স্ত্রী-পুরুষের পালকের রঙে পার্থক্য নেই। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির কাঁধ-ঢাকনি ও ডানা-ঢাকনির ডোরা অতি সূক্ষ্ম । কাদাখোঁচার (Common Snipe) সঙ্গে মূল পার্থক্য হলো এদের চোখের ওপরের ভ্রুরেখা চওড়া, লেজ খাটো, ডানা চোখা নয় ও লেজের পালক ম্যাচের কাঠির মতো সুবিন্যস্ত। 

শীতকালে চ্যাগা উপকূলীয় জলাভূমি ও স্বাদু পানির জলাশয়সহ দেশব্যাপী উপযুক্ত জলাভূমিতে একাকী, জোড়ায় বা ছোট দলে বিচরণ করে। সচরাচর ভোর, সন্ধ্যা ও পূর্ণিমা রাতে সক্রিয় থাকে। কাদামাটিতে লম্বা চঞ্চুটি ঢুকিয়ে কীটপতঙ্গ ও এদের শূককীট, ক্ষুদ্র শামুকজাতীয় প্রাণী, কেঁচো ইত্যাদি খুঁজে খায়। নাকি সুরে ‘স্কোয়াক’ শব্দে ডাকে।

মে থেকে আগস্ট প্রজননকাল। এ সময় ওরা রাশিয়া ও সাইবেরিয়ার তুন্দ্রা অঞ্চলে ঘন ঝোপে ঢাকা প্রান্তরে সামান্য মাটি খুঁড়ে তাতে ঘাস-লাতাপাতা দিয়ে অগভীর বাসা বানায়। ডিম পাড়ে ৩ থেকে ৪টি; রঙ গাঢ় বাদামি দাগছোপসহ হলুদাভ-সবুজ। গড়ে ২০ দিন তা দেওয়ার পর ডিম ফোটে। ছানারা প্রায় দু-মাস বয়সে স্বাবলম্বী হয়। আয়ুষ্কাল প্রায় পাঁচ বছর।

লেখক : পাখি ও বন্য প্রাণী প্রজনন ও চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা