সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা
প্রকাশ : ০১ ডিসেম্বর ২০২২ ০৯:৫৯ এএম
আপডেট : ০১ ডিসেম্বর ২০২২ ১৩:৫৭ পিএম
হাওর শুকিয়ে মাছ শিকারের অভিযোগ ইজাদারের বিরুদ্ধে। ছবি : প্রবা
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের মল্লিকপুরের বাসিন্দা মো. আব্দুল হান্নান। কালিপুর ও মল্লিকপুরের মাঝামাঝি হাওরে তিনি প্রায় ১৫ কেয়ার (৩০ শতাংশে ১ কেয়ার) জমিতে বোরো ফসল আবাদ করেন। এবার আগাম জমি থেকে পানি সরে গেছে। পানির অভাবে জমিতে ধরেছে ফাটল। এতে চাষাবাদে অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে তার।
তিনি জানালেন, এই জমিতে আবাদ করে সারা বছরের খাবার সংগ্রহ করেন তিনি। এবার বিলের ইজারাদার বেশি মাছ ধরার জন্য হাওরের পানি নিষ্কাষণের নালা কেটে দিয়েছে। এতে হাওর শুকিয়ে জমি ফেটে গেছে। এই অবস্থায় তার সম্পূর্ণ জমি অনাবাদি থাকার শঙ্কা রয়েছে।
শুধু মো. আব্দুল হান্নান নয়, এই হাওরে আবাদ করা সব কৃষকেরই একই অবস্থা। বোরো জমিতে অসময়ে পানি নেমে জমি শুকিয়ে ফেটে গেছে। ‘পুকুর ডুবি বড় নালা চান্দি’ হাওরের মাঝেই ছোট একটি বিলের ইজারা দিয়েছে প্রশাসন। ‘পুকুর ডুবি মৎস্য সমবায় সমিতি নামে’ একটি সংগঠনকে এই বিলের ইজারা দেওয়া হয়েছে।
হাওরের সব মাছ যাতে সহজেই ইজারাদারের গভীর বিলে যায় সেজন্য শুকিয়ে ফেলা হয়েছে জমির পানি। পানি আটকানোর জন্য কৃষকদের দেওয়া বাঁধ কেটে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিলের ইজারাদারের বিরুদ্ধে। এতে অসময়েই শুকিয়ে গেছে কৃষকদের ফসলি জমি। পানির অভাবে তিনশ হেক্টর বোরো ফসলি জমি অনাবাদি থেকে যাবার আশংকা করছেন কৃষকরা। অগ্রহায়ণ মাসে পানি থাকার কথা এই হাওরে, তবে বর্তমান চিত্র একদম উল্টো। দেখলে মনে হবে চৈত্র মাসের খরায় জমি ফেটে গেছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিলের মাছ ধরার জন্য ইজারাদার হাওরের নালা কেটে পানি ছেড়েছে। এতে হাওরের পানি শুকিয়ে আবাদি জমি ফেটে গেছে।
এ নিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে এলাকাবাসী গত ২২ নভেম্বর ২২ লিখিতভাবে অভিযোগ জানিয়েছেন। অভিযোগে কৃষকরা জানিয়েছেন, গত বছর ইজারাদার বিলের পানি মেশিন দিয়ে শুকিয়ে মাছ ধরার কারণে কিছু জমি পানির অভাবে আবাদ করা যায় নি। এবারও পানি নিষ্কাষণের নালা কেটে পানি শুকানো হয়েছে। ফলে এই হাওরের কয়েকশ একর জমি অনাবাদি থাকার শঙ্কা রয়েছে।
মল্লিকপুর এলাকার বাসিন্দা আব্দুল রকিব বললেন, এই হাওরে আমার ৪ কেয়ার জমি আছে। ইজারাদার তাদের বিলে বেশি মাছ ধরার জন্য হাওরের পানি নিষ্কাষণে খাল কেটে দিয়ে দিয়েছে। এখন আমাদের জমিতে পানি নেই। জমি শুকিয়ে ফেটে গেছে।
কালিপুরের বাসিন্দা মো. গোলাপ মিয়া বললেন, আমাদের জমিতে পানি আটকিয়ে রাখার জন্য অনেক অনুরোধ করেছি তাদের। এতো অনুরোধ করার পরেও তারা খাল কেটে পানি ছেড়েছে। এখন জমি শুকিয়ে মরুভূমি হয়ে গেছে। এবার আর আবাদ করতে পারবো না।
এ বিষয়ে পৌরসভার প্যানেল মেয়র আহমদ নুর বললেন, ‘এই বিলের চারপাশে প্রায় তিনশ একর ফসলি জমি রয়েছে। প্রতিবছরই বিলের পানি নিষ্কাষণ নিয়ে বিলের ইজারাদারের সঙ্গে আলাপ হয় আমাদের। আমরা বারবার নিষেধ করার পরেও তারা আমাদের কথা শুনেন না। আরও মামলা মুকদ্দমার হুমকি দেয়। তারা প্রতিবছরই বিল শুকিয়ে মাছ ধরে। আমরা বিল শুকিয়ে মাছ ধরতে বারণ করেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের চার গ্রামের মানুষ এখানে বোরো ধান আবাদ করেন। এবার এখনও বীজ তলা তৈরি হয়নি। এরই মধ্যেই হাওরের যতো পানি ছিল সব ছেড়ে দিয়েছে তারা। এ কারণে অনেক কৃষক এবার কৃষি কাজ করে ফসল ফলাতে পারবে না।’
পুকুর ডুবি মৎস্য সমবায় সমিতির সহসভাপতি মো. ওসমান গনি বললেন, আমরা বিল শুকিয়ে কখনও মাছ ধরি না। সব সময় জাল ফেলে মাছ ধরা হয়। আর পানি নিষ্কাষণের খাল আমরা কেটে দেইনি। এখানে কেউ বাঁধ দেয় নি।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. নয়ন মিয়া বললেন, হাওরের একাংশ (কালিপুর ও মল্লিকপুরের মাঝের জমি) প্রায় ১২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়। এবছরও বীজ তলা তৈরি হচ্ছে। কিছু অসাধু লোক পানি শুকিয়ে মাছ ধরার কাজে ব্যবহার করছে। আমরা কৃষক ও স্থানীয় কমিশনারের সঙ্গে আলাপ করেছি। মৎস্য অফিস ও উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি। পানি যাতে শুকিয়ে না যায় সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি।