প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৭ নভেম্বর ২০২৪ ২০:৫৬ পিএম
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য উন্নত দেশগুলোর অর্থায়ন শুভঙ্করের ফাঁকি বলে মনে করেন জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, ‘জাতিসংঘের বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলনে (কপ-২৯) উন্নত দেশগুলো জলবায়ুর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য বছরে ৩০০ বিলিয়ন ডলার অর্থায়ন করার সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে। অথচ বিশ্বে ১৫২টি উন্নয়নশীল (ক্ষতিগ্রস্ত) দেশ আছে। এই অর্থ ভাগ করলে প্রত্যেক দেশ ২ বিলিয়নের বেশি পাবে না। তাদের দেওয়া এই অর্থ মূলত আমাদের জন্য শুভঙ্করের ফাঁকি।’
বুধবার (২৭ নভেম্বর) ‘কপ-২৯ এর ফলাফল: শিল্পোন্নত বিশ্বের চাপিয়ে দেওয়া নব্য উদারনৈতিক নীতি কৌশলে জলবায়ু ন্যায্যতা অর্জন ব্যাহত হয়েছে’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তারা এ সব কথা বলেন।
‘ক্লাইমেট জাস্টিস অ্যালায়েন্স-বাংলাদেশ (সিজেএবি)’ সভাটির আয়োজন করে। সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিপিআরডি) নেতৃত্বাধীন ৪২টি সংগঠনের জোট সিজেএবি।
এতে বক্তব্য রাখেন পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক জিয়াউল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিভাগের অধ্যাপক ড. সূর্বণ বড়ুয়া, দৈনিক জনকণ্ঠের প্রধান প্রতিবেদক মো. কাওসার রহমান, কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মনীষ কুমার আগরওয়াল, দ্য ক্লাইমেট ওয়াচের নির্বাহী পরিচালক শামসুদ্দিন ইলিয়াস।
বক্তারা কপ-২৯ এর অর্জনগুলো তুলে ধরে বলেন, সমঝোতা সম্মেলনে জলবায়ু অর্থায়নের নতুন লক্ষ্যমাত্রা (নিউ কালেক্টিভ কোয়ান্টিফাইড গোল-এনসিকিউজি) এর বার্ষিক হার ২০৩৫ সালের মধ্যে ৩০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। তা ছাড়া ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোর একটি প্রচেষ্টার কথা বলা হয়েছে।
প্যারিস চুক্তির কথা উল্লেখ করে তারা আরও বলেন, গত দশ বছরের আলোচনার পর কপ-২৯ এ প্যারিস চুক্তির আর্টিকেল ৬ এর অধীনে কার্বন মার্কেটের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। আর্টিকেল ৬.২-এর অধীনে আন্তর্জাতিক কার্বন মার্কেটের এবং আর্টিকেল ৬.৪-এর অধীনে একটি কেন্দ্রীভূত কার্বন মার্কেট তৈরির নিয়ম-কানুন চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে এগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য জটিলতা রয়েছে।
‘বাকু অভিযোজন রোডম্যাপ’ বিষয়ে বলেন, সদ্যসমাপ্ত কপে ‘বাকু অভিযোজন রোডম্যাপ’ চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে; যা প্যারিস চুক্তির অগ্রগতি তরান্বিত করার পাশাপাশি ‘ইউএই ফ্রেমওয়ার্ক’ বাস্তবায়নে সহায়তা করবে। এর বাইরে ইউএই ফ্রেমওয়ার্ক বাস্তবায়নের উপায় চিহ্নিত করার উদ্দেশ্যে ‘বাকু হাই লেভেল ডাইলগ’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
মো: শামসুদ্দোহা বলেন, গত সমঝোতা সম্মেলনে ‘গ্লোবাল স্টকটেক’ এর বিষয়ে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোকে কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে সে বিষয়ে রাষ্ট্রসমূহ এবারের সমঝোতা সম্মেলনে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি। তারা এটিকে কপ৩০-এর জন্য ঝুলিয়ে রেখেছে। অথচ এটি অবিলম্বে চূড়ান্ত হওয়া প্রয়োজন, যাতে করে এটি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হয়।
তিনি আরও বলেন, ২০৩৫ সালের মধ্যে ৩০০ বিলিয়ন ডলারের এনসিকিউজি লক্ষ্য বর্তমান প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত কম এবং এর সময়সীমা অনেক দীর্ঘ। এছাড়া এটি অনুদান নাকি ঋণ হবে সে বিষয়ে কোনো স্পষ্টতা নেই। অর্থ প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সব পক্ষকে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে কিন্তু উন্নত দেশগুলির উপর একক দায়িত্ব আরোপ করা হয়নি। এর ফলে শিল্পোন্নত বিশ্বকে তাদের ঐতিহাসিক দ্বায় থেকে অব্যাহতি দেওয়ার রাস্তা তৈরি হয়েছে।
জিয়াউল হক বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার জন্য প্রয়োজন বৈশ্বিক মোট কার্বন উদগীরণ দ্রুত নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আনা। কিন্তু কপ২৯ থেকে আমরা আশাব্যঞ্জক ফলাফল পাইনি। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সরকার চেষ্টা করছে নাগরিক সমাজ, উন্নয়ন সহযোগীসহ অন্যান্য অংশীজনকে সঙ্গে নিয়ে জলবায়ু সমঝোতাকে লক্ষ্য করে একটি সর্বজনগ্রাহ্য অবস্থানপত্র তৈরি করার।
মো. কাওসার রহমান বলেন, উন্নত দেশগুলো সবসময় সিদ্ধান্তগুলো উপেক্ষা করে চলে। এবার তারা প্রাইভেট সেক্টরের উপর দায় চাপিয়ে দিলেও সেখান থেকে কীভাবে অর্থায়ন হবে তা সুস্পষ্ট করেনি। তারা ক্লাইমেট ফাইনান্সের ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ থেকে সরে আসছে এবং ঋণের জালে আমাদের জড়িয়ে ফেলছে।
মনীষ কুমার আগরওয়াল বলেন, যদিও জলবায়ু পরিবর্তন সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জীবন এবং জীবিকাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তবে জলবায়ু অর্থায়নের ক্ষেত্রে বিপদাপন্ন ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর ন্যায্যতার বিষয়টি বিবেচনা করা হয় না।
শামসুদ্দিন ইলিয়াস বলেন, ৩০০ বিলিয়ন ডলার কথা সিদ্ধান্ত হলেও কোন দেশ বা প্রতিষ্ঠান কত টাকা দিবে তার কোনো উল্লেখ নেই। তিনি বলেন, আমাদের নিউ ক্লাইমেট কলোনিয়াজমে আটকে ফেলা হচ্ছে।
অনুষ্ঠান পরিচালনা ও প্রধান বক্তা ছিলেন সিপিআরডির প্রধান নির্বাহী মো. শামসুদ্দোহা। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিআরডির সহকারী রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি ম্যানেজার মো. শেখ নূর আতায়া রাব্বি ও গবেষণা কর্মকর্তা সানজিয়া সামস।