সেকান্দর আলম বাবর, (বোয়ালখালী) চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ০৮ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:৪৬ পিএম
আপডেট : ০৮ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:৫৪ পিএম
ছোটবেলায় কাউকে সাপ মারতে দেখলে, মেরে পুঁতে ফেলতে দেখলে খুব কষ্ট লাগত। পৃথিবীতে সাপের বিচরণ কেন, সাপ কী ক্ষতি করে? এমন জিজ্ঞাসা থেকেই ধীরে ধীরে সাপপ্রেমিক হয়ে ওঠেন চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর চরণদ্বীপ পূর্ব সৈয়দনগরের তরুণ আমির হোসেন শাওন। পরিবার, স্বজন বা বন্ধুরা বলত, সাপ খুব ক্ষতিকর! সাপের মাথায় মণি আছে। সাপের কামড়ে মানুষ, গরু, ছাগল মারা যায় ইত্যাদি ইত্যাদি।
সাপ সম্পর্কে কুসংস্কার ও ভীতিই শাওনকে আরও বেশি আগ্রহী করে তোলে। এ বিষয়ে ইন্টারনেটে খুঁজে বেড়ায় নানা তথ্য, বই কিনে পড়েও নানা কিছু। চট্টগ্রামের ওমর গণি এমইএস কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের অনার্স পড়ুয়া ছাত্র শাওন একসময় সাপ নিয়ে ফেসবুক ভিত্তিক সংগঠন ‘Wildlife and Snake Rescue Team in Bangladesh’-এর সন্ধান পান। শুরু হয় সাপের বংশবিস্তার, বিচরণ, উদ্ধার নিয়ে শাওনের নতুন যাত্রা। তিনি জানান, এই গ্রুপে দুইশজনের বেশি সাপ উদ্ধারকর্মী রয়েছেন। যারা বিনামূল্যে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সাপ উদ্ধার করে নিরাপদ অঞ্চলে ছেড়ে দেন।
প্রথম সাপ উদ্ধারের কথা বলতে গিয়ে শাওন প্রবাকে বলেন, সাপ ধরার কৌশল শেখায় আমার ওস্তাদ মিরসরাই উপজেলার নাঈমুল ইসলাম, ফেনি জেলার শাহজাহান ভাই। জীবনের প্রথম সাপ ধরতে গেলে তাদের পরামর্শ নিই। স্পট ছিল বোয়ালখালীর চরণদ্বীপ মাইজপাড়া। অন্যরকম উত্তেজনা ও ভীতি আমারও লেগেছিল। সকালে গিয়ে দেখতে পাই পদ্মগোখরা। যেটাকে আমরা আঞ্চলিক ভাষায় ‘ফুল জউরো’ বলি। উদ্ধারের শুরুতেই গর্তে ঢুকে যায়। এক ঘণ্টা চেষ্টা করে ঘরের ফ্লোর ভেঙে জীবিত ও নিরাপদে সাড়ে ৮ হাত লম্বা সাপটি উদ্ধার করি। পরে সাপটিকে জ্যৈষ্ঠপুরা পাহাড়ে অবমুক্ত করি। রাত ১২টার দিকে ওই একই স্থান থেকে ফের আরেকটি পদ্মগোখরা উদ্ধার করি। রাতেই অবমুক্ত করি একই পাহাড়ে।
শাওন বলেন, আমার এ কর্ম শুরু হয় ২০২২ সাল থেকে। এ পর্যন্ত প্রায় ২০০’র অধিক সাপ উদ্ধার করেছি বোয়ালখালী, রাউজান ও পটিয়া উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে। সাপের মধ্যে পদ্মগোখরা, শঙ্খিনী, দাঁড়াশ, ঘরগিন্নি, জলদোরা, গাল টাউয়া, দুধরাজ, অজগর, মেঠে উল্লেখযোগ্য।
শাওন জানায়, এ কাজে এলাকায় তার সহযোগী আরামান, রায়হান, জুবায়ের, মিনহাজ, আনছার, মাহিনসহ কয়েকজন তাকে সহযোগিতা করে। সাপ দেখলেই সবাই মেরে ফেলা মানুষের স্বভাব। কিন্তু সাপ নিরীহ প্রাণীর মধ্যে অন্যতম। সাপ আত্মরক্ষার জন্য ছোবল দেয়। এটি মানুষ বা অন্য প্রাণীর খুব কম ক্ষতিই করতে চায়। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পরিবেশে এ প্রাণীর বিচরণ খুবই জরুরি বলে মনে করেন শাওন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বোয়ালখালীসহ আশপাশের কোনো এলাকায় সাপ দেখলেই এখন ডাক পড়ে শাওনের। শাওনও দ্রুততম সময়ে ছুটে যান আতঙ্কগ্রস্ত মানুষের সেবা দিতে। এ কাজে তিনি নেন না কোনো পারিশ্রমিক। সাপের অবাধ প্রজনন, বিচরণ, লোকালয় থেকে ধরে নিরাপদ স্থানে ছেড়ে দেওয়াই যেন শাওনের ব্রত। এ কাজে তার সফলতার পাল্লাও ভারীÑ সাপও যেন তাকে আপন করে নিয়েছে।