কচুয়া (চাঁদপুর) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ নভেম্বর ২০২৪ ১৮:২৬ পিএম
আপডেট : ০৪ নভেম্বর ২০২৪ ১৮:২৮ পিএম
সম্প্রতি বন্যায় চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সবজিক্ষেতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বন্যার দুই মাস পর ফের মাঠে নেমেছে কৃষকরা। শীতকালীন সবজি চাষের মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়াতে চেষ্টা করছে তারা। কিন্তু সরকারি বরাদ্দে বিনামূল্যের সার ও বীজ প্রকৃত কৃষকরা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি কৃষি প্রণোদনা কার্যক্রম শুরু হলে উপজেলার সুবিধাবঞ্চিত কৃষকরা এমন অভিযোগ করেছে।
কৃষকদের অভিযোগ, উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের
বেশিরভাগ প্রকৃত ও দরিদ্র কৃষকই প্রণোদনা থেকে বঞ্চিত। উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন ঘুরে
জানা যায়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কিছু অসাধু কর্মকর্তা তাদের সিন্ডিকেটের
লোকজন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নামের তালিকা তৈরি করে। এরপর বিনামূল্যে
সার-বীজ উত্তোলন করে কম টাকায় ডিলারদের কাছে বিক্রি করে। পরে ডিলারদের কাছ থেকে কৃষকদের
চড়া দামে সেগুলো কিনতে হচ্ছে।
সার, বীজ ও শ্রমিকের মজুরি বেশি হওয়ায়
লোকসানের আশঙ্কা থাকলেও মাঠে কাজ করছে কৃষক। তারা সবজির আবাদে ব্যস্ত সময় পার
করছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় অনেক কৃষকই আর্থিক সংকটে রয়েছে। কৃষি বিভাগের সহায়তা
চাচ্ছে তারা।
নলুয়া গ্রামের কৃষক নাজির আহমেদ
জানান, মাঠপর্যায়ের অসাধু কর্মকর্তাদের অনিয়মের কারণে প্রকৃত কৃষকরা সার, বীজ ও প্রণোদনা
পাচ্ছে না। মাঠ কর্মকর্তাদের একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। সিন্ডিকেটের কারণে প্রকৃত
কৃষকরা কৃষি অফিসের আওতায় বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে সব সময় বঞ্চিত হচ্ছে। মাঠ কর্মকর্তারা
প্রতি বছর ঘুরেফিরে তাদের পছন্দের লোকদের তালিকাভুক্ত করে সার, বীজ ও কৃষি প্রণোদনা
দিচ্ছেন।
গুলবাহার গ্রামের কৃষক নুরুল ইসলাম
বলেন, আমি প্রায় দুই একর জমি চাষ করি। কিন্তু আজ পর্যন্ত কৃষি অফিসের কোনো সুযোগ-সুবিধা
পাইনি। কৃষি অফিসের লোকদের সঙ্গে যাদের ভালো সম্পর্ক, তারাই সব সময় পায়।
বিতারা গ্রামের কৃষক মান্নান জানান,
বন্যার পর সবজি চাষে নতুন সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে লেদা পোকা। শীতের সবজি ফুলকপি,
পাতাকপি, লালশাক, পালংশাক ও মুলাসহ বিভিন্ন সবজির চারা খেয়ে ফেলছে এ পোকা।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা
কৃষি কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দিন জনি বলেন, প্রণোদনাসহ সার্বিকভাবে কৃষকদের সহায়তা করা
হচ্ছে। মাঠপর্যায়ে পরামর্শসহ সামগ্রিক বিষয়ে মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের
সহায়তা করছেন। কেউ যদি অনিয়ম করে প্রকৃত কৃষকদের সার, বীজ ও প্রণোদনা থেকে বঞ্চিত
করে, তাহলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি জানান, গত জুলাই-আগস্ট-সেপ্টেম্বর
তিন দফার বন্যার পানিতে ভেসে গেছে কৃষকের ফসলি জমি, মাছের ঘের ও খামার। এতে উপজেলায়
খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে, বেড়েছে শাক-সবজির দাম। এ সংকট থেকে উত্তরণের
চেষ্টা করছে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকরা।