× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

টেকসই কৃষি প্রযুক্তির উদ্ভাবনে বাড়ছে ফলন

প্রবা প্রতিবেদন

প্রকাশ : ০৪ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:৫২ পিএম

আপডেট : ০৪ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:৫৯ পিএম

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

বৈশ্বিক জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে সারা দেশে প্রতি বছর প্রায় ৮২ হাজার হেক্টর আবাদি জমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে। তা সত্বেও গবেষণা ও উদ্ভাবনে বেড়ে চলেছে খাদ্যশস্যের উৎপাদন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কৃষি নিয়ে বেসরকারি পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা হচ্ছে। যেখানে সরাসরি যুক্ত হচ্ছেন কৃষক, পাচ্ছেন সুফলও। দেশের কৃষি ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিতে ও কৃষিতে জলবায়ুগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দেশজুড়ে কাজ করছে একাধিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।

২০০৮ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত এই এগারো বছরেই আবাদি জমির পরিমাণ কমেছে ৪ লাখ ১৬ হাজার একর। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর কৃষি শুমারি ২০১৯-এ প্রকাশিত এমন তথ্য আশঙ্কাজনক। নগরায়ন, ইটভাটা, শিল্পকারখানা, যেখানে-সেখানে বসতভিটা, সড়ক নির্মাণ, অবকাঠামো নির্মাণ ও তিন ফসলি কৃষি জমিতে শিল্প কারখানা নির্মাণের মতো কারণে হারিয়ে যাচ্ছে কৃষি জমি। এর ওপরে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের চাপে নদী ভাঙন ও উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততার কারণেও প্রতিদিন কৃষি জমি অনাবাদি হচ্ছে।

তবে আশার কথা হলো, ওই সময়ে খাদ্যশস্য উৎপাদন বেড়েছিল এক কোটি টনের বেশি। পরিসংখ্যান বলছে, আবাদি জমির পরিমাণ কমলেও এক ফসলি ও অনাবাদি জমির রূপান্তর ঘটেছে দ্রুত। দেশের এখন দুই ফসলি জমি প্রায় ৪৬ দশমিক ৩ শতাংশ ও তিন ফসলি জমির পরিমাণ ছাড়িয়েছে ২১ শতাংশ। যার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে ফসল উৎপাদনে।

এর আগে ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা জার্মান ওয়াচের প্রতিবেদনে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ১০টি দেশের মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া ব্রিটিশ গবেষণা সংস্থা ম্যাপলক্র্যাফট বলছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ ১৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম।

এমন পরিস্থিতিতে কৃষি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কৃষিতে জলবায়ু পরিবর্তনের এড়াতে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে গবেষণা ও উদ্ভাবন আরও বাড়ানো প্রয়োজন। বিশেষ করে ভবিষ্যতে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভুট্টা, ধান, গম ও সয়াবিনের মতো প্রধান ফসলের নিবিড় গবেষণায় কৃষকদের সম্পৃক্ত করতে হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের কৃষিতে সফলতা এসেছে তবে তা অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই। সময়ের সঙ্গে কমেছে বেশিরভাগ কৃষিজমির উর্বরতা শক্তি। ভূগর্ভস্থ পানির ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরতা পানির স্তর নিচে নেমে গেছেসেই সঙ্গে আরো রয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। এসব প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করেই দেশে কৃষিশস্যের উৎপাদন বেড়েছে

কৃষির বিভিন্ন শাখা যেমন- বীজ, সার, ফসলের পরিচর্যা, খামার প্রযুক্তি, কৃষি যন্ত্রপাতি, পশুস্বাস্থ্য ও দেশের পোল্ট্রি শিল্পে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে বেসরকারি কৃষি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। কৃষি যন্ত্রপাতি তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বেসরকারি উদ্যোগ। আধুনিক ও সাশ্রয়ী কৃষি যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজ করছে এসিআই অ্যাগ্রো বিজনেস লিমিটেড। এসিআই ক্রপ কেয়ার আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি সরবরাহ, দায়িত্বশীল ও যথাযথ বালাইনাশকের ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, কৃষকের জ্ঞান ও দক্ষতার বৃদ্ধির মাধ্যমে জাতীয় উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও কৃষকের সুরক্ষায় কাজ করছে।

ধানে আর্সেনিকের মাত্রা কমিয়ে আনতে কাজ করেছে নেসলে গ্রুপ। দীর্ঘ ১০ বছর সার ব্যবহার, কীটনাশক ব্যবহার এবং যথাযথ সেচ পদ্ধতি নিয়ে দিনাজপুর ও বগুড়ার প্রায় দেড় হাজার কৃষকদের সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ‘ধান, গম, ভুট্টা ও মসলার টেকসই উৎসের জন্য কৃষকদের সংযোগ’ প্রকল্পে ৪৮টি ছোট গ্রুপ প্রশিক্ষণ সেশন পরিচালনা করেছে। প্রতিবছর কৃষি মেলার আয়োজন করে নেসলে।

সার ও কীটনাশক বাজারজাতকরণের পাশাপাশি কৃষকের জন্য সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে সিনজেনটা। সিনজেনটা ফাউন্ডেশন ফর সাসটেইনেবল এগ্রিকালচার খাদ্য ও পুষ্টি ব্যবস্থায় পদ্ধতিগত পরিবর্তনের লক্ষ্যে কাজ করছে। এছাড়া দেশের চরাঞ্চলের কৃষকদের হাতেকলমে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা ফ্রেন্ডশিপ, যার সঙ্গে অর্থায়নে যুক্ত রয়েছে বেসরকারি ব্যাংক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড। ব্যাংকটি আরও বিভিন্ন প্রজেক্টের মাধ্যমে কৃষি উন্নয়নে অবদান রাখছে।

কৃষিতে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বিএটি বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছে এশিয়ান এগ্রি টেক হাব (এএটিএইচ)। এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হল স্থানীয়ভাবে জলবায়ু সহিষ্ণু ও টেকসই উন্নত হাইব্রিড জাতের উদ্ভাবন করা এবং বিভিন্ন বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ ও বাস্তবমুখী সমস্যা মোকাবিলায় কৃষকদের কাছে কৃষি-প্রযুক্তিকে সহজলভ্য করা। পাশাপাশি খামার থেকে আশপাশের জমি এবং চাষিরাও উপকৃত হয় এই প্রকল্প থেকে। কৃষি সেচ, রাস্তার ধারে বৃক্ষরোপণ, সবুজ সার এবং জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে কৃষির পাশাপাশি একসাথে একটি টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি।

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় খুলনার কামারখোলা অঞ্চলে লবণসহিষ্ণু সবজি চাষ এবং সামাজিক সচেতনতা নিয়ে কাজ করছে জাগো ফাউন্ডেশন ট্রাস্টের ‘নবোদয়’ প্রকল্প। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের বহু অঞ্চল লবণাক্ত হয়ে পড়ছে। এতে ফসল উৎপাদন থেকে শুরু করে খাবার পানি নিয়েও সমস্যায় ভুগছেন এলাকাবাসী। এই পরিস্থিতিতে, ফসলের সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে জমির পূর্ণ ব্যবহার করার পাশাপাশি বিভিন্ন চাষ পদ্ধতি যেমন বেডে চাষ, বেড়ায় চাষ, মাচায় চাষ এবং বস্তায় চাষ ফলন নিয়ে কাজ করছে তারা। এছাড়াও প্রাকৃতিক লবণ সহিষ্ণু ফসলের জাত চাষ নিয়ে প্রচারণা করছে তারা। এর মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা সৃষ্টি, বিকল্প আয়ের উৎস সৃষ্টি এবং পরিবেশ সংরক্ষণে সহায়তা করতে ভূমিকা রাখছে প্রতিষ্ঠানটি।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. গোলাম ফারুক বলেন, জমির পরিমাণ কমে যাওয়ার পরেও দেশে উৎপাদন বেড়েছে। এর বেশ কয়েকটি কারণের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো উচ্চফলনশীল জাতের বীজের উদ্ভাবন। এই জাতের বীজের ব্যবহারকে সাদরে গ্রহণ করেছে কৃষকএজন্য মিলেছে সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতাও। কৃষকদের মধ্যে এক ভিন্ন ধরণের সচেতনতা তৈরি হয়েছে। এখন আর তারা শুধু নিজেদের জন্য নয় বরং বৃহৎ জনগোষ্ঠীর চাহিদা মেটাতে উৎপাদন করছে। এমনকি তারা এখন পরিবেশ নিয়েও চিন্তিত।  উচ্চফলনশীল জাতের ফসল উৎপাদন করতে গেলে অনেক বেশি যত্ন এবং সঠিক সময়ে সার কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। এতে যেমন উৎপাদন বাড়ছে, পাশাপাশি পরিবেশেরও ক্ষতি হচ্ছে। তবে এখন পরিবেশের কথা চিন্তা করে পরিবেশবান্ধব কৃষি প্রযুক্তির বিষয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে।’

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা