আ ন ম আমিনুর রহমান
প্রকাশ : ২৬ অক্টোবর ২০২৪ ১৪:২৬ পিএম
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৪ ২১:২২ পিএম
মিরপুর জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে ক্ষুধার্ত ছানাকে খাওয়াচ্ছে ঝুঁটি শালিক। ছবি : লেখক
গত বছর জুন মাসের কথা। গ্রীষ্মে প্রজননকারী পাখিদের বাসা-ডিম-ছানার খবর নিতে ও ছবি তুলতে মিরপুরের জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে এসেছি। সকাল থেকে লম্বা লেজী দুধরাজ বা শাহ বুলবুল (Paradise Flycatcher) ও গোরখোদ বসন্তবৌরির (Lineated Barbet) বাসা খুঁজছি। উদ্যানের গোড়ান চটবাড়ি বা বেড়িবাঁধের দিকের গেটের ১০০ মিটারের মধ্যে দুধরাজ ও গোরখোদ বসন্তবৌরির দুটি করে চারটি বাসার সন্ধান পেলাম। বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে বাসা, ছানা ও ছানাদের খাওয়ানোর ছবি তুললাম। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বহু পক্ষী আলোকচিত্রী এসেছেন। একটি ভালো ছবি তোলার জন্য সকলেই প্রচুর সময় দিচ্ছেন। এভাবে প্রায় ঘণ্টা পাঁচেক কেটে গেল।
দুপুর পেরিয়ে গেছে। বাসায় ফেরার তাগিদ বোধ করলাম। উদ্যান থেকে বের হওয়ার জন্য বেড়িবাঁধের দিকের গেটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি এমন সময় গেটের প্রায় ৩০ মিটার আগে ডানপাশে মাথায় ঝুঁটিযুক্ত একটি পাখিকে মুখে খাবার নিয়ে উড়ে যেতে দেখলাম। একটু সামনে এগিয়ে গিয়ে একটি গাছের আড়ালে দাঁড়ালাম। আমার থেকে মাত্র মিটার পাঁচেক দূরের একটি মরা গাছের ছোট্ট একটি গর্ত থেকে দুটি ছানাকে মুখ হাঁ করে থাকতে দেখলাম। মুখে খাবার নিয়ে উড়ে আসা বড় পাখিটি সেই খাবার ক্ষুধার্ত ছানাগুলোর মুখে তুলে দিল। ক্লিকের শব্দ ও ছানাদের স্বভাবসুলভ শব্দে পুরো এলাকা যেন মেতে উঠল! বেশ কিছুক্ষণ ধৈর্য ধরে বেশ কিছু সুন্দর ছবি তুলে বাসার পথে পা বাড়ালাম।
জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান থেকে ফেরার মুহূর্তে ছানাদের খাওয়ানোর সময় যে পাখিটির ছবি তুললাম সে এদেশের বহুল দৃশ্যমান আবাসিক পাখি ঝুঁটি শালিক। জংলি শালিক নামেও পরিচিত। ইংরেজি নাম Jungle Myna. Sturnidae গোত্রের পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম Acridotheres fuscus। বাংলাদেশ ছাড়াও দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের বিভিন্ন দেশে এদের দেখা মেলে।
লম্বায় ঝুঁটি শালিক ২৩ সেন্টিমিটার এবং ওজনে ৮৫ গ্রাম। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির কপালের চমৎকার ঝুঁটিসহ মাথা ও ঘাড় কালচে-ধূসর। লেজ, পিঠ ও বুক মাঝারি ধূসর। দেহের নিচটা কালচে-গোলাপি। লেজতল-ঢাকনি ও ডানার প্রান্ত সাদা। ঠোঁট কমলা-হলুদ, তবে নাসারন্দ্রসহ ঠোঁটের গোড়া কালচে-ধূসর। চোখ চকচকে হলুদ, চোখের চারদিকের কিছুটা অংশ পালকহীন। পা ও পায়ের পাতা হলুদ। নখ বাদামি। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহ অপেক্ষাকৃত উজ্জ্বল, ঠোঁট হলদে ও ঝুঁটি অপেক্ষাকৃত ছোট।
বহুল দৃশ্যমান এই পাখিটি দেশজুড়ে বিস্তৃত। এরা সাধারণত গ্রাম, চষা জমি, মুক্ত বনভূমি, বনের প্রান্ত প্রভৃতি জায়গায় বিচরণ করে। সচরাচর দলে থাকে। বিভিন্ন রকম ফল, পোকামাকড়, কেঁচো ইত্যাদি খায়। গোধূলিতে অন্য প্রজাতির শালিকের সঙ্গে দলবেঁধে কোলাহল করে। বড় ঝাঁকে বাঁশবন, নলবন, আখক্ষেত বা অন্যান্য জায়গায় রাত কাটায়।
ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই প্রজননকাল। এরা প্রায় আজীবনের জন্য জোড় বাঁধে। গাছের কোটর, বৈদ্যুতিক খুঁটি, ব্রিজ বা দালানের ফাঁকফোকরে বাসা বানায়। নীলচে রঙের ৩ থেকে ৭টি ডিম পাড়ে। ডিম ফোটে ১৫ থেকে ২১ দিনে। ছানারা ১৮ থেকে ২০ দিনে উড়তে শেখে। আয়ুষ্কাল প্রায় ৮ বছর।
লেখক : পাখি-বন্য প্রাণী প্রজনন ও চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ