ডিমলা (নীলফামারী) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২৪ ১৩:৩০ পিএম
আপডেট : ০৭ অক্টোবর ২০২৪ ১৮:২১ পিএম
শরীফুল ইসলাম ডলার। ছবি: সংগৃহীত
উত্তরের জনপদ নীলফামারীর ডিমলায় সমলয়ে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে আনারস। ডিমলার সুন্দরখাতা গ্রামের কৃষক আব্দুর রহমান ১৯৯০ সালে শখের বসে আনারস চাষ শুরু করে সফলতার মুখ দেখলে পরবর্তীতে বাণিজ্যিকভাবে তিন একর জমিতে শুরু করেন আনারস চাষ। এরপর তার মৃত্যু হলে তার ছেলে শরীফুল ইসলাম ডলার চাষাবাদে মন দেন। আনারস চাষ লাভজনক হওয়ায় প্রতি বছর বৃদ্ধি করেছেন জমির পরিধি।
সরেজমিনে দেখা যায়, স্থানীয় ও মধুপুরী আনারসের লম্বা ধারালো সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে রসাল ও স্বাদে ভরপুর আনারস। কোনোটার রঙ গাঢ় সবুজ, কোনোটা লাল খয়েরি রঙ ধারণ করেছে। সিলেট বা টাঙ্গাইলের মতোই রসালো মিষ্টি এই আনারস। আকার এবং স্বাদও এক। প্রায় ২৯ বিঘা জমিতে তিনি চাষ করেছেন আনারস, প্রতিদিন সেখানে কাজ করেন এলাকার ২০ জন শ্রমিক।
এ উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে অন্য কেউ আনারস চাষ না করলেও এই বছরের শুরুর দিক থেকে স্থানীয় ও অন্যান্য উপজেলা থেকে আগ্রহী চাষীদের নিয়মিত পরামর্শ ও উৎসাহ দিচ্ছেন তরুণ উদ্দোক্তা ডলার।
পরামর্শ নিতে আসা পাশের গ্রামের কৃষক লিটু ইসলাম বলেন, ছোটবেলা থেকে আমরা দেখে আসছি এখানে আনারসের চাষ হয়, আমরা এখানে এসে বিভিন্ন পরামর্শ নিচ্ছি ও সরেজমিনে চাষাবাদ পদ্ধতি দেখে অভিজ্ঞতা নিচ্ছি। আমি আগামী মৌসুমে ৫ বিঘা জমিতে আনারস চাষের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
রামডাঙ্গা গ্রামের শিক্ষক মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি নিজ জমিতে বিভিন্ন ফসল চাষ করি। গত বছর জানতে পারি আনারস চাষে লাভবান হওয়া সম্ভব। আমি আগামী মৌসুমে ১ একর জমিতে আনারস চাষের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কৃষি অফিসের পরামর্শ ও সহযোগিতা পেলে আনারস চাষ করতে চাই ‘
স্থানীয় কৃষক হাবিবুর বলেন, ‘অন্যান্য ফসল উৎপাদনে সার ও কীটনাশক বেশি দিতে হয় ফলে খরচ বেশি হয়। আনারসে তেমন কোনো কীটনাশক দিতে হয় না, ফলে উৎপাদন খরচ কম। কৃষি অফিস আমাদের পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করে। আমাদের চাষ দেখে এলাকার অন্য কৃষকরাও আনারস চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
তরুণ উদ্দোক্তা শরিফুল ইসলাম ডলার বলেন, আমি বর্তমানে প্রায় ১০ একর জমিতে আনারস চাষ করছি। ১ বিঘা জমিতে ৬ থেকে ৭ হাজার চারা রোপন করা যায়। ফল পরিপক্ক হওয়া পর্যন্ত প্রতি বিঘায় খরচ হয প্রায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। প্রতি পিচ আনারস ৩৫ থেকে ৪০ টাকা বিক্রি হলে ১ বিঘা জমিতে আনারস বিক্রি হয় প্রায় ২ লাখ টাকা। এ বছর ৫০ লাখ টাকার আনারস বিক্রি হতে পারে। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে বিভিন্ন কৃষক বাগান দেখতে আসে, তারা পরামর্শ নিয়ে যায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মীর হাসান আল বান্না বলেন, ডিমলায় বাণিজ্যিকভাবে আনারস চাষ করছেন শরিফুল ইসলাম ডলার। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হিসেবে তার উৎপাদিত চারার মাধ্যমে অন্যদের আগ্রহী আনারস চাষে আগ্রহী করা এবং উৎপাদিতে ফসল দেশের বাইরে রপ্তানি করার প্রক্রিয়া গ্রহণ করা। হর্টিকালচার সেন্টারের মাধ্যমে উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় উদ্যোক্তা শরিফুল ইসলাম ডলারকে গত মৌসুমে ১ হাজার ২০০ চারা সরবরাহ করা হয়।