দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর) প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩১ জুলাই ২০২৪ ০৮:৫৮ এএম
আপডেট : ৩১ জুলাই ২০২৪ ১১:০৯ এএম
জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় বন্যায় প্রায় ৫১ কোটি টাকা ফসলের ক্ষতি হয়েছে। প্রবা ফটো
জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় বন্যায় ফসলের ক্ষতি হয়েছে। প্রথম ধাপের এ বন্যায় উপজেলার নিম্নাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চল প্লাবিত হয়। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর দৃশ্যমান হচ্ছে রাস্তাঘাট ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতির চিত্র। রাস্তাঘাটের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২ হাজার ৮৫২ হেক্টর জমির ফসল। এতে সম্ভাব্য ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫১ কোটি টাকা। বর্ষার শেষ সময়ে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে জমিতে চাষে ব্যস্ত সময় পার করছে এ অঞ্চলের প্রায় ১৭ হাজার কৃষক।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর বন্যার পানিতে অন্তত ১০ দিন ফসলি জমি নিমজ্জিত ছিল। এতে অন্তত ১৬ হাজার ২০০ কৃষকের আউশ, পাট, গ্রীষ্মকালীন সবজি, রোপা আমনের বীজতলা, আখ, কলাসহ ২ হাজার ৮৫২ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গিয়ে সম্পূর্ণরূপে নষ্ট হয়েছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।
উপজেলায় ১৮ হাজার হেক্টরের অধিক জমিতে ফসলের চাষের আওতায় রয়েছে। তার মধ্যে চলতি বছর ১ হাজার ৩৩০ হেক্টর জমিতে আউশ, ২ হাজার ৮৮০ হেক্টর জমিতে পাট, ৬৮০ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন সবজি, ৭৯ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের বীজতলা, ৪ হাজার ৭০৫ একর জমিতে আখ ও ১৩ হেক্টর জমিতে কলার চাষ হয়েছিল। বন্যায় ৮৮০ হেক্টর জমির আউশ, ১ হাজার ৫৪৫ হেক্টর জমির পাট, ৩৮৫ হেক্টর জমির গ্রীষ্মকালীন সবজি, ২৫ হেক্টর জমির রোপা আমন, ৯ হেক্টর জমির আখ ও ৮ হেক্টর জমির কলা পানিতে নিমজ্জিত হয়ে নষ্ট হয়। চূড়ান্ত হিসাবে ক্ষতির পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পেতে পারে বলেও জানিয়েছে স্থানীয় কৃষি অফিস।
জিল বাংলা চিনি কল সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ৪ হাজার ৭০৫ একর জমিতে আখের চাষ হয়েছে। তার মধ্যে চলতি বন্যায় ৫০ একর জমির আখ পানিতে নিমজ্জিত হয়ে সম্পূর্ণরূপে নষ্ট হয়। নদীভাঙনের কারণে নষ্ট হয় ৫ একর জমির আখ এবং আংশিক ক্ষতি হয় ৩৪৯ একর জমির আখ। তবে ক্ষতির পরিমাণ টাকায় হিসাব করেনি মিলটির কর্তৃপক্ষ।
উপজেলার চুনিয়াপাড়া গ্রামের চাষি মো. মকবুল হোসেন মলু জানান, চলতি বছর বন্যার পানি দীর্ঘদিন ফসলি জমিতে স্থায়ী ছিল। সে কারণে কৃষকদের ফসলের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়েছে। তার ৩ বিঘা জমির আখ ও ২ বিঘা জমির উঠতি পাট তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এতে তার ক্ষতি হয়েছে অন্তত ২ লাখ টাকা। বর্ষা মৌসুমের শেষ সময়ে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে জমিতে ফসল চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি।
দেওয়ানগঞ্জ সদর ইউনিয়নের কৃষক আবদুল জলিল বলেন, আমরা কৃষির ওপর নির্ভরশীল। চাষাবাদ করেই সংসার চলে। বন্যার পানিতে জমির আউশ সব নষ্ট হয়ে গেছে। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে জমিতে ফসল চাষে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। বীজতলা নষ্ট হওয়ায় রোপা আমন চাষ নিয়ে বিপাকে পড়েছি। আমরা সরকারিভাবে কোনো সহায়তা পাইনি।
গুজিমারী গ্রামের কৃষক নয়া মিয়ার ভাষ্য, এবার ৩ বিঘা জমিতে আউশের চাষ করেছিলেন তিনি। এতে ব্যয় হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। বন্যায় সব শেষ হয়ে গেছে। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সময় লাগবে। কিন্তু আবারও বন্যার পূর্বাভাসে ফসল চাষে তাদের ইচ্ছাশক্তি দমিয়ে এসেছে।
বালুগ্রামের আবদুল খালেক বলেন, সার বীজ ও শ্রমিকের মজুরি বেশি হলেও এবার তিনি ২ বিঘা জমিতে গ্রীষ্মকালীন সবজি বেগুনের চাষ করেছিলেন। কিন্তু বন্যায় তলিয়ে যাওয়ায় সব নষ্ট হয়ে গেছে। বন্যার পানি নেমে গেলে চড়া দামে বীজ কিনে আবারও সবজির চাষে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবু তো জমি ফেলে রাখা যাবে না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলমগীর আজাদ জানান, দেওয়ানগঞ্জের বেশিরভাগ এলাকা নিচু। তবে জমি উর্বর। বন্যায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চুকাইবাড়ী, চিকাজানী ও বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের চাষিদের। ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে অনেক কৃষক বীজ কিনে ফের রোপা আমনের চাষ করছে। আশা করছি বড় বন্যা না হলে কৃষক তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে।