অর্ণব মল্লিক, কাপ্তাই (রাঙামাটি)
প্রকাশ : ০১ জুলাই ২০২৪ ২১:০৩ পিএম
আপডেট : ০১ জুলাই ২০২৪ ২১:২৪ পিএম
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে ফুলের নাম দিয়েছিলেন উদয়পদ্ম, সেই বিরল প্রজাতির ফুলের দেখা মিলেছে কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানে। রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানের বনফুল রেস্ট হাউসে সম্প্রতি ফুটেছে এই উদয়পদ্ম। বাংলায় এই ফুলের আরেক নাম হিমচাঁপা। বৈজ্ঞানিক নাম ম্যাগনোলিয়া গ্র্যান্ডিফ্লোরা।
উদয়পদ্ম সাদা ডিম আকৃতির একটি ফুল। এ গাছের পাতা অনেকটা কাঁঠাল পাতার মতো। ফুলটির মাঝের অনেকগুলো পুংকেশর আর ডিম্বাশয় ঘিরে আছে কয়েকটি পাপড়ি। তাই এই ব্যূহ ভেদ করে সহজে পরাগের কাছে ভিড়তে পারে না পোকামাকড়। এ ছাড়া এই উদয়পদ্ম দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি সুঘ্রাণ ছড়ায় চারপাশে।
কীভাবে এই বিরল প্রজাতির ফুলটি কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানে এলো বা চারা কবে রোপণ করা হয়েছে, এ বিষয়ে সঠিক তথ্য জানা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, ২০০০ সালে যখন কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানে বনফুল রেস্ট হাউসটি স্থাপন করা হয়, তখন হয়তো ফুলটির চারা রোপণ করা হয়েছে।
উদয়পদ্মের বিষয়ে জানতে চাইলে পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান মিয়া জানান, বাংলাদেশে ২০১২ সালের বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-৪ অনুযায়ী উদয়পদ্মের এই প্রজাতিটি সংরক্ষিত। উদয়পদ্ম বা হিমচাঁপা খুব ধীরে বর্ধনশীল একটি গাছ। আর এর বিবর্তন প্রক্রিয়া থেকে ধারণা করা হয় এটি একটি আদিম উদ্ভিদ। ওয়াশিংটনভিত্তিক বৃক্ষ ও বাগানবিষয়ক অনলাইন কেয়াহেইস এস্টেটের তথ্য অনুযায়ী, বিবর্তনের ইতিহাস অনুসারে সবচেয়ে প্রাচীন উদ্ভিদগুলোর একটি ম্যাগনোলিয়া। জীবাশ্ম নমুনা থেকে দেখা যায়, প্রায় একশ মিলিয়ন বছর আগে ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা ও এশিয়ায় এ উদ্ভিদ ছিল।
এই গাছগুলোর সর্বোচ্চ উচ্চতা হয় ১৮ থেকে ৩০ মিটার। এটি যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের জাতীয় ফুল। উদয়পদ্ম গ্রীষ্ম ও উপগ্রীষ্মমণ্ডলীয় এশিয়া, মেক্সিকো, পশ্চিম ভারতীয় দীপপুঞ্জ ও মালয়েশিয়াতেও পাওয়া যায়। এটি মাঝারি আকারের একটি সপুষ্পক বৃক্ষ। ফুলের রঙ, সুগন্ধি এবং ধীরে বৃদ্ধির কারণে গাছটি নগরের ল্যান্ডস্কেপিং সজ্জার জন্য খুবই উপযোগী।
উদয়পদ্ম সম্পর্কে কয়েকটি সূত্রে আরও জানা যায়, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই উদয়পদ্মের নাম দেওয়ার পাশাপাশি তিনি তার কাব্যগ্রন্থে ম্যাগনোলিয়া বা উদয়পদ্মের কথাও অনেকবার উল্লেখ করেছেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের কাপ্তাই রেঞ্জ কর্মকর্তা এসএম মহিউদ্দীন বলেন, ‘বিরল প্রজাতির ফুলটি যেন কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানে সংরক্ষণ করা হয় এ বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। এ ছাড়া এই প্রজাতির উদয়পদ্মের আরও কিছু গাছের চারা সংগ্রহ করে রোপণের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে।’