প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২১ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:৩৭ পিএম
এবাররে নির্বাচনে সাফল্যের চমক দেখিয়েছে মিশা-ডিপজল প্যানেল। প্রবা ফটো
অবশেষে নতুন নেতৃত্বের দেখা পেলেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পীরা। শিল্পী সমিতিতে লাগল নতুন হাওয়া। আগামী দুই বছরের জন্য এ সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন অভিনেতা মিশা সওদাগর। অভিনেত্রী নিপুণকে হারিয়ে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন প্রযোজক, অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজল। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০২৪-২৬ মেয়াদের নির্বাচনে বড় চমক দেখিয়েছে মিশা-ডিপজল প্যানেল। সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও এ প্যানেল থেকে তিনজন ছাড়া সবাই জয়ী হয়েছেন।
ভোটের হিসাবনিকাশ
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে ভোটগ্রহণ শেষ হয়। এর আগে ব্যাপক নিরাপত্তার মধ্যে সকাল সাড়ে ৯টায় এফডিসির শিল্পী সমিতির কার্যালয়ে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এবার নির্বাচনে মোট ৫৭০ ভোটারের মধ্যে ৪৭৫ জন ভোট দিয়েছেন। এর মধ্যে ৪০টি ভোট বাতিল হয়েছে।
কে পেলেন কত ভোট
এবার ২৬৫ ভোট পেয়ে এ মেয়াদের নতুন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন জনপ্রিয় অভিনেতা এবং বিগত দুই মেয়াদের সভাপতি মিশা সওদাগর। এ পদে মাহমুদ কলি ১৭০ ভোট পেয়ে পরাজিত হয়েছেন। ২২৫ ভোট পেয়ে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজল। ১৭ ভোট কম পেয়ে পরাজিত হয়েছেন নিপুণ আক্তার। তিনি পেয়েছেন ২০৯ ভোট।
সহসভাপতি পদে জয়লাভ করেছেন মিশা-ডিপজল প্যানেলের মাসুম পারভেজ রুবেল ও ডি এ তায়েব। তারা দুজন পেয়েছেন যথাক্রমে ২৩১ ও ২৩৪ ভোট। তাদের কাছে পরাজিত অমিত হাসান পেয়েছেন ২২৯ ও ড্যানি সিডাক ১৭৬ ভোট।
সহসাধারণ সম্পাদক পদে আরমান পেয়েছেন ২৩৭ ভোট। তার কাছে নায়ক বাপ্পি হেরেছেন ৩৯ ভোট কম পেয়ে। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে জয় চৌধুরী জয়ী হয়েছেন ২৪০ ভোট পেয়ে। অঞ্জনা হেরেছেন ১৮৫ ভোট পেয়ে। ১৮৯ ভোট পাওয়া মারুফ আকিবকে হারিয়ে জয়ী হওয়া আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আলেকজান্ডার বো পেয়েছেন ২৮৬ ভোট।
দপ্তর ও প্রচার সম্পাদক পদে জ্যাকি আলমগীর পেয়েছেন ২৪৫ ভোট। তার বিপরীতে কাবিলা পেয়েছেন ১৪০ ভোট। আজাদ খানের চেয়ে ২৭ ভোট বেশি পাওয়া কমল কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত হয়েছেন ২৩১ ভোট পেয়ে। সংস্কৃতি ও ক্রীড়া সম্পাদক হিসেবে কলি-নিপুণ প্যানেলের মামনুন ইমন বিজয়ী হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ২৩৫ ভোট। তার প্রতিপক্ষ অভিনেতা ডন পেয়েছেন ২০০ ভোট।
কার্যনির্বাহী সদস্যপদে মিশা-ডিপজল পরিষদ থেকে নির্বাচিত হয়েছেন নয়জন। তারা হলেন সুচরিতা (২২৮), রোজিনা (২৪৩), আলীরাজ (২৩৯), সুব্রত, দিলারা ইয়াসমিন (২১৮), শাহনূর (২৪৫), নানা শাহ (২১০), রত্না কবির (২৬৩) ও চুন্নু (২৪৮)। এ ছাড়া কলি-নিপুণ পরিষদ থেকে রিয়ানা পারভিন পলি (২২০) ও সনি রহমান (২৩০) কার্যনির্বাহী সদস্যপদে নির্বাচিত হয়েছেন।
সর্বোচ্চ ভোট
আলেকজান্ডার বো মিশা-ডিপজল প্যানেল থেকে আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পদে নির্বাচন করেন। তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বী নায়ক মারুফ আকিবকে হারিয়েছেন ১৩৭ ভোটে। মারুফ পেয়েছেন ১৪৯ ভোট। আর এ পদে ২৮৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন ‘ম্যাডাম ফুলি’র নায়ক আলেক। এটাই এবারে কোনো প্রার্থীর সর্বোচ্চ ভোট প্রাপ্তি। আলেকজান্ডারের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৬৫ ভোট পেয়েছেন সভাপতি পদে জয়ী মিশা সওদাগর। সর্বোচ্চ ভোটের হিসাবে তৃতীয় হয়েছেন ‘ইতিহাস’খ্যাত নায়িকা রত্না কবির। তিনি পেয়েছেন ২৬৩ ভোট। আবার নারী প্রার্থী হিসেবে তিনি সর্বোচ্চ ভোটে প্রথম।
মাত্র ১ ভোট
ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার কারণে শিল্পী সমিতির ভোটাধিকার হারিয়েছিলেন। এমন অভিযোগ তুলে ক্ষোভ ঝেড়েছিলেন তিনি। যাচাইবাছাই শেষে অবশ্য শিল্পী সমিতির সদস্যপদ ফিরে পান। ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার পর ঘোষণা দেন সমিতির নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হবেন। হয়েছেনও। তিনি অভিনেতা শ্রাবণ শাহ। দুই হেভিওয়েট প্রার্থী মনোয়ার হোসেন ডিপজল ও নিপুণ আক্তারের সঙ্গে এ পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, নির্বাচনে মাত্র ১টি ভোট পেয়েছেন শ্রাবণ শাহ।
সভাপতি ও সম্পাদকের প্রতিক্রিয়া
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় নবনির্বাচিত সভাপতি মিশা সওদাগর বলেন, ‘আমরা শিল্পী আমাদের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ বিষয়টা আমরা মনেপ্রাণে চাই। আমাদের সমস্ত কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে শৈল্পিক দিক দিয়ে। আজকে নিপুণ যেভাবে নতুন কমিটিকে বরণ করে নিয়েছেন তাতে আমরা সত্যিই গর্বিত। সে তার ওস্তাদতুল্য ডিপজল ভাইকে যে সম্মান দেখিয়েছেন সেটা দারুণ লেগেছে আমার কাছে। আমরা নিপুণসহ বিজয়ী হতে না পারা সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে আমাদের কাজ চালিয়ে যাব।’
নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন ডিপজল বলেন, ‘হারজিত কোনো বিষয় না। নিপুণকে আমি আমার মেয়ের মতো মনে করি। আমরা সবাই মিলেমিশে একসঙ্গে থাকতে চাই। আমরা ভাগাভাগি চাই না, আমরা সবাই এক।’
নিপুণের প্রতিক্রিয়া
নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় নিপুণ বলেন, ‘প্রথমেই ধন্যবাদ জানাই ২০২৪-২৬ নির্বাচন যারা পরিচালনা করেছেন তাদের। আমার মনে হয় আমার টার্মে থেকে আমি খুব সুন্দর একটি নির্বাচন পরিচালনা করেছি। আর যার সঙ্গে নির্বাচন করেছি, আমি চিন্তাও করিনি মাত্র ১৬ ভোটে তার কাছে হারব। আমি ভেবেছিলাম ডিপজল সাহেবের সঙ্গে আমি যখন দাঁড়াব, খুব বেশি হলে ৫০টি ভোট পাব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার ২৬টি ভোট নষ্ট হয়েছে, ২০৯টি ভোট আমি পেয়েছি। যেখানে ডিপজল ভাই পেয়েছেন ২২৫টি ভোট। শিল্পী সমিতির ভাইবোনেরা প্রমাণ করে দিয়েছেন তারা আমাকে ভালোবাসেন। আমাকে এত সম্মান দেওয়ার জন্য তাদের ধন্যবাদ।’
প্রতিশ্রুতি রক্ষার চ্যালেঞ্জ
প্রতিটি নির্বাচনই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইশতেহার। যেখানে প্রার্থীরা নানা রকম প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন। সেসব প্রতিশ্রুতির ওপর আস্থা রেখেই প্রার্থী বাছাই করেন ভোটাররা।
শিল্পী সমিতির নির্বাচনেও ছিল প্রতিশ্রুতি। বিজয়ী মিশা-ডিপজলরা শিল্পীদের স্বার্থে বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। মিশা সওদাগর প্রতিশ্রুতির কথা জানিয়ে বলেছিলেন, ‘আমরা শিল্পীদের সর্বোচ্চ স্বার্থ সংরক্ষণের চেষ্টা করব। বাণিজ্যিক সিনেমাকে বেশি অনুদান দেওয়ার অনুরোধ করব, যে দেশের বাণিজ্যিক সিনেমা যত চলবে সে দেশের ইন্ডাস্ট্রি তত ঘুরে দাঁড়াবে। এফডিসিভিত্তিক সিনেমা যেন বেশি হয়, সেটা করার চেষ্টা করব। শিল্পী সমিতির সদস্যরা যেন আজীবন সদস্য থাকতে পারেন। আমরা আশা করছি জিতব। যদি জিততে না-ও পারি, অসুবিধা নেই। শিল্পীরা আমরা একই পরিবার। গতবার পরাজিত হয়ে বিজয়ীদের গলায় মালা দিয়েছি, এবারও তা-ই দেব।’