× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

জহির রায়হানের অসমাপ্ত সিনেমা শেষ করতে চায় না তার পরিবার

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৬ এপ্রিল ২০২৪ ১৬:৫৭ পিএম

জহির রায়হানের অসমাপ্ত সিনেমা শেষ করতে চায় না তার পরিবার

চলচ্চিত্রকার জহির রায়হানের অসমাপ্ত সিনেমা ‘লেট দেয়ার বি লাইট’। ১৯৭০ সালে তিনি এর আংশিক দৃশ্যধারণ করেছিলেন। সম্প্রতি সিনেমাটি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে দেশের একটি জাতীয় দৈনিক। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, স্বাধীনতার পর প্রায় সাড়ে তিন দশক পর্যন্ত সিনেমাটির খোঁজ ছিল না। তবে দেড় দশক আগে গোডাউন থেকে সিনেমাটির ফুটেজ উদ্ধার করে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ। 

প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর থেকে সিনেমাটি সমাপ্তের ব্যাপারে আবারও আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে জহির রায়হানের ছেলে অনল রায় জানিয়েছেন, অন্য পরিচালককে দিয়ে সিনেমাটি শেষ করতে চান না তারা। অস্কারজয়ী হলিউড নির্মাতা মার্টিন স্করসেসিও যদি জহির রায়হানের অসমাপ্ত এই ছবিটি শেষ করতে চান তাতেও অনুমতি দেয়া হবে না বলে দাবি করেন অনল। 

এ প্রসঙ্গে ফেসবুকে একটি দীর্ঘ পোস্ট দিয়েছেন তিনি। সেখানে অনল রায়হান লিখেছেন, ‌‘সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমে ‘লেট দেয়ার বি লাইট’ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটির মূল কথা- ছবিটি শেষ করা দরকার। ছবিটি শেষ করা লাগবে কেন? এটি জহির রায়হানের সরাসরি রাজনৈতিক একটি ছবি। তার রাজনৈতিক দর্শনের পরিষ্কার ও সোজাসাপটা শিল্প প্রকাশ হতো এটি। সুতরাং এখন যদি কেউ এই ছবি শেষ করতে চান, তিনি কি জহির রায়হানের মতাদর্শকে ধরতে পারবেন?’

অনল লিখেছেন, ‘স্টপ জেনোসাইড–এর বছরখানেক আগে তোলা হয়েছিল ‘লেট দেয়ার বি লাইট’। ‘স্টপ জেনোসাইড’–এ তিনি একটি জনযুদ্ধের ছবি তুলেছেন। কিন্তু ‘লেট দেয়ার বি লাইট’–এ চলচ্চিত্রকার হিসেবে তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ স্বাধীন। রাজনীতি সচেতন শিল্পী হিসেবে ‘লেট দেয়ার বি লাইট’–এ তিনি তাঁর রাজনৈতিক মতকে সরাসরি উন্মোচন করতে চেয়েছিলেন, এতে আমার কোনো সন্দেহ নেই। এখন যিনি ছবিটি শেষ করবেন তার রাজনৈতিক মতাদর্শ কি জহির রায়হানীয়?’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘জহির রায়হান আজ বেঁচে থাকলে ‘লেট দেয়ার বি লাইট’–এ কি একই চলচ্চিত্রভাষা ব্যবহার করতেন? নাকি ছবিটা বানাতেনই না! নাকি ছবিটা শেষ করা হবে সে সময়ের আলোকেই? ৫৫ বছর আগে নির্মিত একটি অসমাপ্ত রাজনৈতিক ছবি কি সে সময়ের আলোকে শেষ করা যায়? যখন বিশ্ব বদলে গেছে, ইতিহাসের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এসেছে? যে পরিচালক আজকের বাংলাদেশ জানেন, আজকের আমেরিকা দেখেন তিনি ‘লেট দেয়ার বি লাইট’–এ নিজের ভাবনা ঢোকাবেনই। এ ছবি কোনোভাবেই জহির রায়হানের ছবি তো হবেই না, উল্টো এমন একজন মেধাবী বাঙালি চলচ্চিত্রকারের অসামান্য কাজটির ঐতিহাসিক মূল্য বিনষ্ট হবে।’ 

অনল রায়হানের মতে, ‘লেট দেয়ার বি লাইট’, ‘কাচের দেয়াল’ বা ‘জীবন থেকে নেয়া’র মতো লিরিক্যাল ফর্মেটের গল্পবলা ছবি নয়। এর নিজস্ব আঙ্গিক আছে। এই আঙ্গিক বা চলচ্চিত্রভাষা সম্পূর্ণ একটি মস্তিষ্কেরই আয়োজন। ছবিটির যদি লিখিত চিত্রনাট্যও থাকত তবু এই অসমাপ্ত ছবিতে আমি আর কারও হাত দেওয়ার পক্ষে থাকতাম না। বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ এই ছবির রাশ প্রিন্ট একবার লাইনআপ করেছিল এনজি শট ও ওকে শট দেখে। এটিরও প্রতিবাদ করেছেন অনল। তাঁর মতে, ‘লেট দেয়ার বি লাইট সম্পূর্ণ (বাতিল শটসহ) প্রদর্শন করা উচিত। মনে রাখতে হবে, চলচ্চিত্রের আগামীর ছাত্র-ছাত্রীর কাছে এই রাশ প্রিন্টের মূল্য হবে অপরিসীম।’

অনল রায়হানের ভাষ্য অনুযায়ী, এই ছবির প্রতি সুবিচার কেবল পরিচালক জহির রায়হানের নিজেরই করা সম্ভব। কারণ, তখনকার সময় এবং এখনকার সময়ের মধ্যে বিশাল ফারাক। পৃথিবী নানা পথ পেরিয়েছে। তা ছাড়া ছবিতে তার রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রকাশ করেছেন। যা চলচ্চিত্রে কেবল তিনিই বলতে পারতেন। পোস্টটি শেষ করেছেন এভাবে, ‘লেট দেয়ার বি লাইট’ অন্য পরিচালকের হাতে? আমি মানব না।’

১৯৭০ সালে আগস্টের দিকে সিনেমার দৃশ্যধারণ শুরুর আগে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে সিনেমার মহরতে জহির রায়হান বলেছিলেন, ‘লেট দেয়ার বি লাইট’ সিনেমাটি তাঁর সারা জীবনের স্বপ্নের ছবি। সেখানে নায়ক–নায়িকা হিসেবে ওমর চিস্তি ও অলিভিয়া গোমেজকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। সেপ্টেম্বরে আরেক সংবাদ সম্মেলনে অলিভিয়ার বদলে ববিতাকে নিয়ে সিনেমাটি করার ঘোষণা দেন। শুটিং শুরু হওয়ার পর আনুমানিক ৪০ ভাগ কাজ শেষ হওয়ার পরই মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। স্বাধীনতার পর জহির রায়হান নিখোঁজ হওয়ার পর ছবিটিরও কোনো খোঁজ ছিল না।

সিনেমার ৩৫ মিমি ফুটেজ উদ্ধারের পর দেখা যায়, সেখানে ‘ওকে’ শটের পাশাপাশি ‘এনজি’ শটও ছিল; পরে ফিল্ম আর্কাইভের তত্ত্বাবধানে জহির রায়হানের ‘স্টপ জেনোসাইড’–এর চিত্রসম্পাদক আবু মুসা দেবুকে দিয়ে ‘ওকে’ শটগুলো আলাদা করানো হয়। ‘এনজি’ শট বাদে পুরো ফুটেজের দৈর্ঘ্য দাঁড়ায় ৫৫ মিনিটের মতো। পরের তা ফিল্ম আর্কাইভে প্রদর্শনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও আর সম্ভব হয়নি।

ফিল্ম ইন্টারন্যাশনালের ব্যানারে এ সিনেমায় ওমর চিস্তি ও ববিতা ছাড়াও বনানী চৌধুরী, বকুল চৌধুরী, আমজাদ হোসেন, বিনয় বিশ্বাস, মাইকেল পিউরিফিকেশন, বদরুদ্দিনসহ আরও অনেকে অভিনয় করেছেন। পরিচালনার পাশাপাশি কাহিনি, চিত্রনাট্যেও ছিলেন জহির রায়হান। সংগীত পরিচালনা করেছেন খান আতাউর রহমান। সহযোগী পরিচালক ছিলেন ইলতুতমিশ, সহযোগী প্রযোজনায় হায়দার আলী।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা