প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৯ মার্চ ২০২৪ ১৩:৩৩ পিএম
আপডেট : ১৯ মার্চ ২০২৪ ১৩:৩৬ পিএম
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে নিপুণের সভাপতি মাহমুদ কলি। ছবি : সংগৃহীত
নিপুণ যে কখনোই হাল ছেড়ে দেন না, তা পরিষ্কার হয়েছিল তার আগের নির্বাচনেই। যখন মিশা সওদাগরের বিপরীতে একজন যোগ্য সভাপতি হিসেবে তিনি কাউকে পাচ্ছিলেন না তখন অনেকেই তাকে নিয়ে হাসতে শুরু করেছিলেন। সে হাসি তিনি থামিয়েছিলেন ইলিয়াাস কাঞ্চনকে সঙ্গী করে। তবে কাঞ্চনের সঙ্গে নিপুণের যাত্রা খুব বেশি সুখকর হয়নি। দীর্ঘায়িতও হয়নি। দুই বছরের মেয়াদ ফুরিয়ে আবারও যখন দুয়ারে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন, তখনই কাঞ্চন ঘোষণা দিলেন তিনি প্রার্থী হবেন না। বেশ কিছু সাক্ষাৎকারে তাকে জোর করে নির্বাচনে আনা হয়েছে বলে হাস্যকর মন্তব্যও করেছেন।
সেসব গায়ে মাখছেন না নিপুণ। তিনি নির্বাচন ঘিরে শক্ত একটা প্যানেল তৈরির চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। কিন্তু সভাপতি কে হবেন সে নিয়ে পড়ে যান বিপাকে। দ্বারস্থ হয়েছিলেন শাকিব খান, অনন্ত জলিল ও অমিত হাসানের। তিনজনই তাকে সমর্থন দিলেও সভাপতি হতে রাজি হননি কেউই। এরপর শোনা যায় আহমেদ শরীফের কথা। শিল্পী সমিতির অন্যতম সফল নেতা এ খল অভিনেতা। তবে শেষ পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায় যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী আহমেদ শরীফ নির্বাচনে আসছেন না। তাহলে কে ধরবেন নিপুণের প্যানেলের মাস্তুল? কে হবেন নিপুণকে দিশা দেখানো মশাল? এ প্রসঙ্গ যখন ক্রমেই আলোচ্য হয়ে উঠছিল ঠিক তখনই চমক দিলেন নিপুণ। তিনি তার প্যানেলের সভাপতি হিসেবে ঘোষণা করলেন অভিনেতা মাহমুদ কলির নাম।
রবিবার দিনভর এফডিসিতে ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনের আয়োজন। সে উপলক্ষে শিল্পীদের আগমনে মুখরিত ছিল সমিতির প্রাঙ্গণ। বিকালে হাজির জন মাহমুদ কলি। এরপর নিপুণ দেন সেই চমক। জানান, তার প্যানেলের নেতৃত্বে থাকছেন সোনালি যুগের এ অভিনেতা। শিল্পী সমিতির ইতিহাস বলছে, মাহমুদ কলি সফল একজন নেতা। এর আগেও শিল্পী সমিতির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন অভিনয় থেকে দূরে আছেন। নেই শোবিজের কোনো কাজেও। তাকে হঠাৎ করে নির্বাচনে এনে বেশ বড় চমকই দিয়েছেন নিপুণ।
নির্বাচনে আসা প্রসঙ্গে মাহমুদ কলি বলেন, ‘আমি সিনেমা করতে আসিনি। শিল্পী ও অন্যদের মাঝে সেতুবন্ধ তৈরি করতে এসেছি। শিল্পী সমিতিকে এগিয়ে নিয়ে যাব, শিল্পীদের স্বার্থে কাজ করব, চলচ্চিত্র শিল্পের স্বার্থে কাজ করব।’
নিপুণের প্রশংসায় গুণী এ অভিনেতা বলেন, ‘আমি মনে করি অনেক সংকট ও সমস্যার মধ্যেও নিপুণ আক্তার বলিষ্ঠ চিত্তে শিল্পীদের স্বার্থে নিজেকে নিবেদন করেছেন। আমি মনে করলাম এ মুহূর্তে আমার প্রয়োজন আছে। সেটা চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির জন্য, চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য। আমি আমার দক্ষতা, বিচক্ষণতা, অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নিপুণ আক্তার এবং পুরো কমিটিকে সঙ্গে নিয়ে একসঙ্গে এগিয়ে যাব। শিল্পীদের জন্য এবং শিল্পের জন্য কাজ করব এ বিশ্বাসে তার সঙ্গে সভাপতি হিসেবে দাঁড়ানোর জন্য সম্মতি দিয়েছি।’
এবারের নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী সমিতির একাধিকবার নির্বাচিত সভাপতি মিশা সওদাগর। বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত কিংবা চাপ অনুভব করেন কি নাÑএমন প্রশ্নে মাহমুদ কলি বলেন, ‘মিশা সওদাগর আমার ছোট ভাই। আমি যখন সভাপতি ছিলাম, সাধারণ সম্পাদক ছিলাম মিশা সব সময় আমার পাশে থেকে শিল্পের জন্য শিল্পীদের জন্য কাজ করেছে। মিশা ভালোমানুষ কিন্তু নির্বাচন নির্বাচনের মতো হবে। নির্বাচন যেন সুষ্ঠু হয়, প্রত্যেক সদস্য যেন বিচার-বিবেচনা করে ভোট দেন সেটিই হবে বড় কথা। মিশা আমার ছোট ভাই, সে ভালোমানুষ, কোনো সমস্যা নেই।’
মাহমুদ কলিকে নিয়ে শিল্পীরা কতটা আগ্রহী? সেই খোঁজ নিতে গেলে বেশ কজন শিল্পী জানালেন মিশ্র প্রতিক্রিয়া। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিল্পী বলেন, ‘সবাই তো ভালোমানুষ। ইলিয়াস কাঞ্চন ভাইও খুব ভালোমানুষ। কিন্তু ক্ষমতা পেলে সবাই বদলে যান। শিল্পীদের কথা মনে থাকে না। মাহমুদ কলি সিনিয়র শিল্পী, সমিতির সফল নেতা। তিনি নির্বাচিত হলে আমাদের উন্নয়ন হবে এটা বিশ্বাস করি। এখন সেই বিশ্বাস কতটা রক্ষা হবে জানি না।’
একজন সিনিয়র নৃত্যশিল্পী বলেন, ‘আমি কলি ভাইকে ভোট দেব। তিনি মানুষ ভালো, সফল নেতাও। বিগত সময়ে তিনি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শিল্পীদের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার নেতৃত্ব আমরা সবাই উপভোগ করেছিলাম। আশা করছি নতুন করেও তিনি চমক দেখাবেন, সফল হবেন।’
২৭ এপ্রিল চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন। নির্বাচনে মিশা সওদাগর-মনোয়ার হোসেন ডিপজল থাকবেন একটি প্যানেলে। অন্য প্যানেলেই নেতৃত্ব দেবেন কলি-নিপুণ। শোনা যাচ্ছে, অভিনেতা ও প্রযোজক ড্যানি সিডাকও থাকবেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। তিনি কলি ও মিশার বিপরীতে লড়বেন সভাপতি পদে।
আশি ও নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় নায়ক মাহমুদ কলি। তার পারিবারিক নাম মাহমুদুর রহমান উসমানী। তিনি স্বনামধন্য চিত্রনির্মাতা আজিজুর রহমান বুলির ছোট ভাই। মূলত ভাইয়ের হাত ধরেই চলচ্চিত্রে আসেন। এরপর দেখিয়েছেন অভিনয়ের মুনশিয়ানা। মাহমুদ কলির প্রথম চলচ্চিত্র ‘মাস্তান’। তিনি এ চলচ্চিত্রে সহ-অভিনেতার ভূমিকায় ছিলেন। এরপর ১৯৭৮ সালে অশোক ঘোষ নির্মিত ‘তুফান’ চলচ্চিত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অভিনয় করেন।
মাহমুদ কলি ৬১টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তার মধ্যে দুটি মুক্তির মুখ দেখেনি। উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র লাভ ইন সিঙ্গাপুর, গোলমাল, নেপালি মেয়ে, শ্বশুরবাড়ি, সুপারস্টার, গ্রেফতার, খামোশ, মহান, দেশ বিদেশ, মা বাপ ইত্যাদি।
শাবানা, ববিতা, রোজিনা, অলিভিয়া, দিতি, চম্পা, অঞ্জনা, সুচরিতা, নূতনসহ অনেক নায়িকার সঙ্গেই তাকে দেখা গেছে সপ্রতিভ। তিনি কলকাতার দেবশ্রী রায়ের বিপরীতে ‘সবার উপরে’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এর পরিচালক ছিলেন শওকত জামিল।
১৯৯৪ সালে নায়ক হিসেবে মাহমুদ কলি অভিনীত সর্বশেষ সিনেমা মুক্তি পায়। এর নাম ছিল ‘মহাগ্যাঞ্জাম’। তবে ২০০২ সালে তাকে আবারও দেখা গিয়েছিল ‘আবার একটি যুদ্ধ’ চলচ্চিত্রে। সেখানে তিনি উকিল চরিত্রে অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়েছিলেন।
১৯৯৭ সালে তিনি টিভিনাটক নির্মাণেও নাম লেখান। ‘তাদের কথা’ নাম ছিল তার প্রথম নাটকের। এরপর তিনি ‘আলোকিত আঙিনা’ নামে আরও একটি ধারাবাহিক নাটক নির্মাণ করেন।
অভিনয়ের পাশাপাশি দীর্ঘদিন চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নেতৃত্বের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন কলি। ১৯৯১ সালে তিনি সমিতির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তার সঙ্গে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন আহমেদ শরীফ। এরপর একই প্যানেল থেকে নির্বাচিত হয়ে ১৯৯৫-১৯৯৭ সাল পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তবে এর পরের বছর তিনি অভিনেতা মিজু আহমেদকে নিয়ে নতুন প্যানেলে সভাপতি পদে প্রার্থী হন এবং নির্বাচিত হন। ১৯৯৭ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত টানা দুই মেয়াদে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি।