আলাপন
লিমন আহমেদ
প্রকাশ : ১৪ মার্চ ২০২৪ ১৫:৩২ পিএম
সাইমন সাদিক
কিশোরগঞ্জের সন্তান সাইমন সাদিক। শৈশব-কৈশোর পুরোটাই কেটেছে সেখানে। নির্মাতা জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত ‘জ্বি হুজুর’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে ঢালিউডে অভিষেক হয়। এরপর একই নির্মাতার ‘পোড়ামন’ ছবিতে অভিনয় করে আলোচনায় আসেন। আরও বেশ কিছু আলোচিত সিনেমা উপহার দিয়েছেন তিনি। ২০১৮ সালে ‘জান্নাত’ সিনেমাটির জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। কাজ করে যাচ্ছেন বেশ ব্যস্ততা নিয়ে। জনপ্রিয় এই অভিনেতা একজন মুসলিম হিসেবে বেশ ধর্মপ্রাণ। তিনি জানালেন রোজা নিয়ে তার অভিজ্ঞতার কথা। লিখেছেন- লিমন আহমেদ
প্রথম কবে রোজা রেখেছিলেন?
খুব ছোটবেলাতেই প্রথম রোজা রেখেছিলাম। অনেক কিছুই মনে পড়ে ভাসা ভাসা।
তখন তো আর সব রোজা রাখা হতো না। হঠাৎ জোর করে হয়তো একটা রোজা রাখলাম। এরপরে সারা এলাকাতে
জানিয়ে দিতাম আমি রোজা রেখেছি। রোজা রাখার আনন্দটা সবাইকে জানাতে ভালো লাগত। ঘরে ঘরে
গিয়ে বলতাম আমি আজকে রোজা রেখেছি।
সেইসব রোজা রাখার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল, মনে পড়ে?
কষ্ট হতো খুব। দুপুরের পর এক ধরনের ছটফটানি শুরু হয়ে যেত। তখন খুব
একটা ভালো স্বাস্থ্যের অধিকারীও ছিলাম না। রোজা রেখে কাহিল হয়ে যেতাম। বয়স আর কত হবে;
দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ি তখন। অনেক সময় এমন হয়েছে সেহরি খেয়েছি আবার দুপুরের পরে খেয়ে
ফেলেছি। মনে মনে ভাবতাম যেহেতু দুপুর পর্যন্ত রোজা রেখেছি সেহেতু একটা রোজা হয়ে গেছে।
সেসব ভাবলে এখন হাসি পায়।
ছোটবেলায় সেহরি ও ইফতারের মজার কোনো স্মৃতি-
ছোটবেলা মানেই তো স্মৃতিতে ভরপুর। জন্মের পর থেকেই বাড়িতে দেখে এসেছি,
অনেক বড় করে ইফতারের আয়োজন করা হতো। কারণ হচ্ছে আমাদের যৌথ পরিবার ছিল। দাদা, আব্বু,
ছাড়াও বাড়ির সবাই মিলে একসঙ্গে বসে ইফতার করা হতো। ভাই-বোন ফুফুরা একসঙ্গে প্রতিদিনই
প্রায় চল্লিশ-পঞ্চাশজনের ইফতারের আয়োজন হতো। অন্যরকম একটা পরিবেশ তৈরি হতো বাড়িতে।
সেটা অনেক সুখের স্মৃতি। অন্যদিকে সেহরির সময়ও একটা অন্যরকম পরিবেশ হতো। আমাদের বাড়ি
ছিল ঠিক মসজিদের পাশে। সময় হলেই মসজিদের মাইক থেকে ডাকাডাকি শুরু হয়ে যেত। মনে পড়ে
তখন শীতকাল ছিল। শীতের সময় লেপের ভেতর থেকে উঠতে ইচ্ছে হতো না।
অনেক দিন এমন হতো আমাকে ডাকত না, পরে আমি রাগারাগি করতাম। এরপর যখন
আর একটু বড় হলাম সেহরি খাওয়ার পর মসজিদে নামাজ পড়ে বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে হাঁটতে
যেতাম। আবার সন্ধ্যার আগে দাঁত মাজার ধুম লেগে যেত। মডেলার ডাল নামে এক রকমের মাজনি
ছিল, সেটা আমরা ব্যবহার করতাম। এই ডাল নিয়ে রীতিমতো কাড়াকাড়ি লেগে যেত। সেই সময়গুলো
আসলেই খুব মজার ছিল। অনেক দিন পর সেগুলো মনে পড়ল।
শৈশব-কৈশোর ও এখনকার রোজার ভেতর কী পার্থক্য দেখেন?
ছোটবেলায় না বুঝেও অনেক কিছু করতাম। এখন কোনো ভুল হলে সহজেই সেটা
ধরতে পারি। চেষ্টা করি সঠিকভাবে রোজা পালন করার। যতটুকু পারি ভালো কাজ করার চেষ্টা
করি। ছোটবেলায় এগুলো চিন্তা করতাম না। এখন পরিবারের সঙ্গে ইফতার করতে ভালো লাগে। এবারও
আমি বাবা-মা, ভাইবোন ও স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে প্রথম ইফতার করেছি। শান্তি লেগেছে।
সাধারণত ইফতার ও সেহরিতে কী ধরনের খাবার খেয়ে থাকেন?
অনেকে বলে রোজায় ইফতারিতে ভাজা পোড়া খাওয়া নিষেধ। কিন্তু সত্যি
কথা বলতে আমার এগুলো ছাড়া ইফতার করতে ভালোই লাগে না। মুড়ি, ছোলা, পেঁয়াজু, বেগুনি,
এগুলো আমার ভালো লাগে। আর ভোরবেলায় তরকারি দিয়ে ভাত খাওয়ার পর দুধ কলা দিয়ে ভাত
খেতে ভালো লাগে। যখন আম থাকে দুধের সঙ্গে পাকা আম দিয়ে ভাত খেতে ভালো লাগে।
এবার রমজানের বিশেষ প্রার্থনা কী?
রোজার উসিলায় আল্লাহ যেন আমাদের দেশ থেকে এমনকি সারা পৃথিবী থেকে
সবরকম অমঙ্গল, অশান্তি, ঘৃণা-বিদ্বেষ দূর করে দেন। বাজারে দ্রব্যের দাম আকাশে গিয়ে
ঠেকছে। এ নিয়ে রমজান মাসে সারা দেশের মানুষ অনেক আতঙ্কে আছে। ব্যবসায়ীদের উচিত অতি
মুনাফাভোগের চিন্তা বাদ দিয়ে সেবায় মনযোগ দেওয়া। রমজানের শিক্ষা নিয়ে বছরের অন্যান্য
মাসেও আমরা যেন পাপমুক্ত থাকি। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষকে মানুষ মনে করি। সবাই ভালো
থাকুক। পৃথিবীর সুন্দর হোক।
কিছু কাজের কথা হোক। ঈদে স্পেশাল কিছু থাকবে দর্শকের জন্য?
প্রতিবারের মতো কিছু অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া হবে। কোনো সিনেমা থাকবে
বলে মনে হচ্ছে না। চাদর সিনেমাটি তৈরি আছে। মুক্তির সিদ্ধান্ত নেবে এর প্রযোজক এফডিসি।
তবে যে সিনেমাগুলোই মুক্তি পাক, দর্শককে বলব হলে গিয়ে সেগুলো উপভোগ করুন। আপনারা বেশি
করে সিনেমা দেখলে আমাদের ইন্ডাস্ট্রি মজবুত অবস্থানে থাকবে।
নতুন কী কাজ করা হলো?
ডুডুর গল্প নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। বেশ মজার একটি সিনেমা হতে যাচ্ছে এটি। আমি ও পরীমনি কাজ করেছি। এ ছবির টিম, গল্প ও সংলাপ বেশ মনে ধরেছে। আরও কিছু সিনেমা আছে যেগুলোর শুটিং শুরু হওয়ার অপেক্ষায় আছি।