সিঙ্গাপুরে চলছে চিকিৎসা
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৬:৩০ পিএম
আপডেট : ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৬:৩৬ পিএম
‘প্রতি বছর ঈদ মৌসুমে দেশের অডিও বাজার, সিনেমার প্লে ব্যাক আর টিভির ঈদ অনুষ্ঠানে যার সরব উপস্থিতি ছিল অবধারিত সেই সাবিনা ইয়াসমীনের কোনো অ্যালবাম এ বছর বের হয়নি। ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিতে তার গান শোনা যাবে না, টিভির পর্দায় থাকবে না তার সহাস্য উপস্থিতি। কারণ শিল্পী দেশের বাইরে চিকিৎসা নিচ্ছেন’Ñ এমন খবরই ২০০৭ সালের অক্টোবরে প্রকাশ করেছিল দেশের গণমাধ্যমগুলো।
সে বছর দেশের বাইরে যাওয়ার আগে সবার কাছে দোয়া চেয়ে শিল্পী বলেছিলেন, ‘আমি দোয়া চাই সবার কাছে, যেন সুস্থভাবেই আবারও সবার মাঝে ফিরে আসতে পারি।’ শিল্পী ফিরে এসেছিলেন, কোটি কোটি মানুষের দোয়া-ভালোবাসায়। সিঙ্গাপুরের জেনারেল হাসপাতালের ন্যাশনাল ক্যানসার সেন্টারে ৭৮ নম্বর ওয়ার্ডের ১৬ নম্বর কেবিনে চিকিৎসা হয়েছিল ক্যানসারে আক্রান্ত সাবিনা ইয়াসমীনের। ক্যানসার জয় করে নতুন জীবন শুরু করেছিলেন বাংলা গানের এই পাখি। এরপর আরও বহু অডিও, চলচ্চিত্রে গান করেছেন তিনি। তার সেইসব গান আবারও শ্রোতার মন ভরিয়েছে, হৃদয়ে দোলা দিয়েছে।
সব স্বাভাবিক হয়ে এসে আরও একবার যখন দুর্দান্ত এক জীবন কাটাতে চলেছেন সাবিনা ইয়াসমীন তখনই যেন ছন্দপতন। আবারও গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন সাবিনা ইয়াসমীন। চিকিৎসা নিচ্ছেন সেই সিঙ্গাপুরের জেনারেল হাসপাতালের ন্যাশনাল ক্যানসার সেন্টারে। তবে কী হয়েছে সাবিনা ইয়াসমীনের, কী চিকিৎসা চলছেÑ তার কিছুই নিশ্চিত করে বলতে চাইছেন না তার পরিবার বা ঘনিষ্ঠ কেউ।
অনেক দিন ধরেই শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন কিংবদন্তি গায়িকা। অনেক সিনেমাতেই গানের প্রস্তাব পাচ্ছিলেন। কিন্তু নিয়মিত গাইতে পারছিলেন না। খোঁজ নিতে গেলে তার পরিবার জানায়, সুস্থই আছেন সাবিনা ইয়াসমীন।
এদিকে বেশ কিছু সূত্র এই প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছে, গুরুতর অসুস্থ শিল্পী। নতুন করে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। এবার তিনি ওরাল ক্যানসারের শিকার। উন্নত চিকিৎসা চলছে সিঙ্গাপুরের জেনারেল হাসপাতালের ন্যাশনাল ক্যানসার সেন্টারে। এরই মধ্যে একটি সার্জারি সম্পন্ন হয়েছে। খুব দ্রুতই দেওয়া হবে রেডিওথেরাপিও।
কিংবদন্তি এই শিল্পীর জন্ম ১৯৫৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরায়। কণ্ঠশিল্পী ফরিদা ইয়াসমীন, ফওজিয়া খান ও নীলুফার ইয়াসমীন তার আপন বোন। বড় বোন ফরিদা ইয়াসমীনের সঙ্গে ছোট থেকেই দুর্গাপ্রসাদ রায়ের কাছে গান শিখতেন সাবিনা ইয়াসমীন। পরবর্তী সময়ে ওস্তাদ পি সি গোমেজের কাছে একটানা ১৩ বছর তালিম নেন। মাত্র সাত বছর বয়সে স্টেজ প্রোগ্রামে অংশ নেন সাবিনা ইয়াসমীন। ছোটদের সংগঠন খেলাঘরের সদস্য হিসেবে রেডিও-টেলিভিশনে গান করতেন নিয়মিত। ১৯৬৭ সালে ‘আগুন নিয়ে খেলা’ এবং ‘মধুর জোছনা দীপালি’ গান দুটির মাধ্যমে তিনি প্লেব্যাক গায়িকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তারও আগে ‘নতুন সুর’ নামে ছবিতে প্রথম গান করেন শিশুশিল্পী হিসেবে।
পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে গানের ভুবনে বিচরণ করছেন সাবিনা ইয়াসমীন। বাংলাদেশের ইতিহাসে একমাত্র রুনা লায়লা ছাড়া তার সমকক্ষ হয়ে আর কেউ এত লম্বা সময় ধরে আধিপত্য বজায় রাখতে পারেননি। মরমী শিল্পী আব্দুল আলীম থেকে শুরু করে একালের উঠতি গায়কদের সঙ্গেও তিনি একের পর এক গান গেয়েছেন। সুযোগ পেয়েছেন উপমহাদেশের বরেণ্য সুরকার আর ডি বর্মণের সুরে গান গাওয়ার। উপমহাদেশের বিখ্যাত দুই কণ্ঠশিল্পী কিশোর কুমার ও মান্না দে’র সঙ্গেও গান গেয়েছেন সাবিনা ইয়াসমীন।
খ্যাতিমান এই গায়িকা তার মায়াবী কণ্ঠ দিয়ে বাংলা সংগীতকে যেমন সমৃদ্ধ করেছেন, পুরস্কারও পেয়েছেন দুহাত ভরে। সংগীতে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে দেয় একুশে পদক। ১৯৯৬ সালে পান স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার। সেরা কণ্ঠশিল্পী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছেন রেকর্ড ১৪ বার। বাচসাস পুরস্কার পেয়েছেন ছয়টি। জহির রায়হান চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন দুবার। ১৯৮৪ সালে বিশ্ব উন্নয়ন সংসদ থেকে সংগীতের ওপর লাভ করেন ডক্টরেট ডিগ্রি।
এ ছাড়া ১৯৯০ সালে শেরে বাংলা স্মৃতি পদক, ১৯৯১ সালে বিএফজেএ পুরস্কার ও উত্তম কুমার পুরস্কার, ১৯৯২ সালে অ্যাস্ট্রোলজি পুরস্কার এবং একই বছর নিউইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে পান ‘বেস্ট সিঙ্গার’ পুরস্কার। ২০১৭ সালে দশম স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড-দ্য ডেইলি স্টার জীবনের জয়গান উৎসব থেকে পান আজীবন সম্মাননা।
সাবিনা ইয়াসমীন শেষ প্লেব্যাক করেছেন প্রয়াত চিত্রনায়িকা ও নির্মাতা কবরী পরিচালিত ‘এই তুমি সেই তুমি’ ছবির ‘দুটি চোখে ছিল কিছু নীরব কথা’ শিরোনামের একটি গানে। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে গানটিতে কণ্ঠ দেন তিনি। এ ছাড়া কবরীর ‘এই তুমি সেই তুমি’ ছবির চারটি গানে সুরও দেন সাবিনা ইয়াসমীন। এর মাধ্যমে ক্যারিয়ারে প্রথমবার তিনি সুরকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।