প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩০ জানুয়ারি ২০২৪ ১৪:১৯ পিএম
আপডেট : ৩০ জানুয়ারি ২০২৪ ১৫:০২ পিএম
জহির রায়হান
বাংলা সাহিত্যের ছাত্র হিসেবে লেখালেখির প্রতি ছিল তার দারুণ ঝোঁক। পত্রপত্রিকায় গল্প-কবিতা লিখতে গিয়ে একসময় যুক্ত হয়ে পড়েন সাংবাদিকতায়। সেই সঙ্গে বামপন্থি রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে বাংলার স্বাধিকার আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে শুরু করেন। রাজনীতির ময়দান দাঁপিয়ে বেড়ানো সেই তরুণের ক্যামেরায় একে একে উঠে আসে বাংলার স্বাধিকার আন্দোলনের ঘটনাবহুল দিনের চালচিত্র।
দেশের সামাজিক সংকট, রাজনৈতিক টানাপড়েনের পর মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র এখনও সেই অগ্নিগর্ভা দিনের সাক্ষী। বাংলার অকুতোভয় যোদ্ধা জহির রায়হানের অন্তর্ধানের ৫২ বছর পূর্তি হলো আজ। ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি দিনটি ছিল রবিবার। সকালে রফিক নামে এক অজ্ঞাত ব্যক্তির টেলিফোন আসে জহির রায়হানের কায়েতটুলীর বাসায়। ডিসেম্বরে নিখোঁজ হয়েছিলেন তার বড় ভাই বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লা কায়সার। জহির রায়হানকে ফোনে জানানো হয়, তিনি মিরপুর গেলেই বড় ভাইয়ের সন্ধান পাবেন। বড় ভাইকে খুঁজতে গিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেননি।
জহির রায়হানের জন্ম ১৯৩৩ সালের ৫ আগস্ট ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার মজুপুর গ্রামে। বাবা মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ, মা সৈয়দা সুফিয়া খাতুন। জহির রায়হানের পারিবারিক নাম জহিরুল্লাহ। ১৯৪০ সালে কলকাতা মডেল স্কুলে ভর্তির মধ্য দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার হাতেখড়ি তার। সেখানে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ার পর তাকে মিত্র ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। মোহাম্মদ জহিরুল্লাহ কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেওয়ার পর গোপন কর্মকাণ্ডে নিজের তৎপরতা দেখান। তখন পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক মণি সিংহ তার নাম দেন জহির রায়হান। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ছাত্রদের মিছিলে যে ১০ জনের দলটি সর্বপ্রথম ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করেছিল, তাদের অন্যতম ছিলেন ঢাকা কলেজে ইন্টারমিডিয়েট পড়ুয়া জহির রায়হান।
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে জহির রায়হান চলে যান ভারতের কলকাতায়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে প্রচারাভিযান ও তথ্যচিত্র নির্মাণ শুরু করেন। শুরু করেন তার বিখ্যাত ‘স্টপ জেনোসাইড’ তথ্যচিত্র তৈরির কাজ। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভারতে আশ্রয় গ্রহণকারী বাঙালির দুঃখদুর্দশা, হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ, ভারতে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের দিনকালসহ বহুকিছু এ তথ্যচিত্রে তুলে ধরেছিলেন জহির রায়হান। স্টপ জেনোসাইডের প্রথম প্রদর্শনী হয়েছিল কোনো এক অজ্ঞাত স্থানে। প্রদর্শনীতে উপস্থিত ছিলেন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদসহ মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য বিশ্বব্যাপী জনমত তৈরির ক্ষেত্রে স্টপ জেনোসাইড অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।