প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৬ জানুয়ারি ২০২৪ ১০:৩৬ এএম
আপডেট : ১৬ জানুয়ারি ২০২৪ ১০:৫৮ এএম
মোশাররফ করিম। অভিনয়ের আঙিনায় দুই বাংলার নন্দিত এক নাম। সমানতালে তিনি মুগ্ধতা ছড়িয়ে যাচ্ছেন নাটক, সিনেমা, ওটিটিতে। বৈচিত্র্যময় চরিত্রে হাজির হয়ে নিজেকে ভাঙেন-গড়েন। এবার তিনি ‘হুব্বা’ সিনেমায় আসছেন পশ্চিমবঙ্গের হুগলির ডন হুব্বা চরিত্রে। সিনেমাটি বানিয়েছেন ওপার বাংলার শিক্ষামন্ত্রী, অভিনেতা ও পরিচালক ব্রাত্য বসু। ১৯ জানুয়ারি ছবিটি সাফটা চুক্তিতে বাংলাদেশে মুক্তি পাবে। সিনেমাটিতে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা, নিজের চরিত্র ও প্রাসঙ্গিক নানা বিষয়ে মোশাররফ করিম কথা বলেছেন প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন লিমন আহমেদÑ
আমদানি হয়ে বিদেশের সিনেমা দিয়ে দেশের দর্শকের সামনে হাজির হচ্ছেন। কেমন লাগে ব্যাপারটা?
এটা একটা অন্যরকম অনুভূতি। দেশের মানুষ আমাকে দেখবে বিদেশের কাজে। এর আগেও এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার। হুব্বা কলকাতার সিনেমা। দেশে মুক্তি পাচ্ছে আমদানি চুক্তিতে। জাজের আবদুল আজিজ ভাই নিয়ে আসছেন ছবিটি। তিনি বেশ আন্তরিকতা নিয়ে সিনেমাটি মুক্তি দিচ্ছেন। তাকে ধন্যবাদ। দর্শককে আমন্ত্রণ জানাইÑ হলে গিয়ে ছবিটি দেখবেন।
হুব্বা বাংলাদেশের দর্শক হলে গিয়ে কেন দেখবে? বিশেষত্ব কী?
আমি এ দেশের অভিনেতা, সিনেমাটিতে কাজ করেছি তাই আমার জন্য যাবেন। এটা তো আমি বলতেই পারি এত দিন কাজ করে। দর্শকের কাছে তো আমার প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে বিশেষত্বের জায়গা থেকে বলব, আর দশটা বিদেশি কাজ যে কারণে দেখেন দর্শক হুব্বাও সে কারণে দেখবেন। ভালো গল্প আছে, ভালো নির্মাণ আছে, উপভোগ্য কিছু চরিত্র ও সংলাপ আছে, বিনোদন আছে। মোদ্দাকথা ছবিটা উপভোগ করার মতো।
ছবির পরিচালক ব্রাত্য বসু সাধারণত একটু ধীর লয়ে গল্প বলতে পছন্দ করেন। তার ছবিগুলোর মেজাজ হয় শান্ত। কিন্তু ট্রেলার দেখে আঁচ করা গেল হুব্বা বেশ গতিশীল আর মসলাদার। নতুন আমেজের সিনেমার পরিচালক হিসেবে ব্রাত্য বসু কতটা উতরে যেতে পারলেন বলে মনে করেন?
ব্রাত্য বসু আপাদমস্তক একজন শিল্পীমানুষ। মঞ্চ, টিভি, সিনেমা সবখানেই তিনি অসাধারণ। নানা রকম এক্সপেরিমেন্ট করেছেন ক্যারিয়ারজুড়ে। সেগুলো প্রশংসিত হয়েছে। আমি তার ‘ডিকশনারি’ ছবিতে কাজ করেছি। সেটা ছিল অন্য মেজাজের। হুব্বা একদমই আলাদা। অনেক গতিশীল, লাউড, ডার্ক। পরিচালক হিসেবে ব্রাত্য বসুর ম্যাজিকটা এখানেই, তিনি নতুন ভাবনার কাজ করতে এসেছে দারুণভাবে সফল হয়েছেন। মানুষ তো একজনই, শুধু ছবির আমেজটা পাল্টেছে। তাই নির্মাণের শক্তি, দর্শন, মুনশিয়ানাও একই রকম। আমার কাছে তিনি পারফেক্ট। বাকিটা দর্শক বিবেচনা করবেন এবং সেটা মুগ্ধতারই হবে বলে আমি আশাবাদী।
ছবিটি নিয়ে বেশ আত্মবিশ্বাসী মনে হচ্ছে আপনাকেÑ
প্রচুর। এ ছবিটি দুই বাংলার দর্শককে আকর্ষিত করবে। তারা ছবিটি দেখে মজা পাবেন। আর নিজের কাজ নিয়ে আমি সব সময়ই আত্মবিশ্বাসী। কারণ ওই কাজটির সঙ্গে আমার সততা, শ্রম ও প্রত্যাশা মিশে থাকে।
হুব্বার জন্য প্রস্তুতি কেমন ছিল?
প্রতিটি চরিত্রের জন্যই এক ধরনের প্রস্তুতি থাকে। তবে চরিত্র নয়, আমি গল্প অনুযায়ী নিজেকে প্রস্তুত করি। আমি চেষ্টা করি গল্পটা কেমন, সংলাপ, চরিত্রগুলোর দর্শন কী বোঝার। তা বুঝতে পারলে নিজের চরিত্রটি করতে আমার সুবিধা হয়। সে জায়গা থেকে হুব্বাকে ফুটিয়ে তুলেছি।
হুব্বা খুব অ্যারোগেন্ট, নৃশংস আর ভয়ংকর একটি চরিত্র। তাকে বলা হয় হুগলির দাউদ ইব্রাহিম। অভিনয় করতে গিয়ে কখনও সেই চরিত্রটি নিজের ব্যক্তিজীবনের সঙ্গে মেলাতে পেরেছেন?
দেখুন প্রতিটি মানুষের মধ্যেই ভালো ও মন্দ স্বভাব থাকে। মন্দটা যত চেপে রাখা যায় সমাজে ততটাই ভালোমানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়া যায়। কিন্তু রাগ, ক্ষোভ, হিংস্রতা সবার মধ্যেই থাকে। আমিও রেগে গেলে খুব বাজেভাবে রিঅ্যাক্ট করি। সেজন্য পরে অনুশোচনা হয়। তাই চেষ্টা করি নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে। হুব্বার সঙ্গে সবার চরিত্রেরই মিল পাওয়া যাবে। তবে হুব্বা মন্দ অনুভূতিগুলোর নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি বা করেনি। সে রাগ, প্রতিশোধ, হিংস্রতাই উপভোগ করেছে। সেই পরিণতিও তাকে বরণ করতে হয়েছে।
গেল কয়েক বছরে দেখা যাচ্ছে বাস্তবের ভিলেনরা পর্দায় হিরো হয়ে আসছেন বা নেগেটিভ চরিত্রগুলো হিরোইজম দিয়ে উপস্থাপন করা হচ্ছে। এতে সমাজে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে না?
আমার মনে হয় পড়ে না। দর্শক এগুলো বিনোদন হিসেবেই নেন। দেখে ভুলে যান। কারণ প্রতিটি নেগেটিভ গল্পেই কিন্তু একটা পরিণতির কথা বলা হয়। কিংবা মন্দ কাজের জন্য মন্দ পরিণতির অনেক গল্প নিয়ে কাজ হয়েছে। সেগুলো যদি ওইভাবে প্রভাবিত করত তবে সমাজে এত মন্দ কাজ কেন হয়? পরিণতি দেখে তো সবার শিক্ষা নেওয়ার কথা ছিল।
আপনি ওটিটিতেও সরব। ওটিটির সেন্সর নিয়ে অনেক আলোচনা হয়। কী মনে করেন?
জবাবটা আসলে আমার জানা নেই। আমি এক কথায় এর জবাব দিতে পারব না। আমি মনে করি সেন্সরের প্রয়োজন নেই। কারণ সেন্সর দিলে মুক্তচিন্তা বাধাগ্রস্ত হবে। আবার এও ভাবি, সেন্সর না থাকলে স্বাধীনতার অপব্যবহার হয়, স্বেচ্ছাচারিতা তৈরি হয়। হচ্ছেও। তাহলে বিষয়টি কীভাবে বিচার করা হবে? আমি মনে করি এখানে যেহেতু বিচার করার কেউ নেই তাই শিল্পীর নিজেরই উচিত নিজের বিচার করা। মানে নিজের ভেতর দায়বদ্ধতটা তৈরি করা। মুক্তচিন্তার বিকাশ ঘটাতে গিয়ে আমি স্বাধীনতার অপব্যবহার করছি কি না আমাকেই ভাবতে হবে। নিজেই নিজের বিচারক হতে পারলে সেন্সর লাগে না। শিল্পী বলতে এখানে প্রযোজক, পরিচালক, অভিনয় যারা করেন তারাসহ একটি কাজের সঙ্গে জড়িত সবাই।
দেশের সংস্কৃতিচর্চার বর্তমান অবস্থা নিয়ে আপনার কী ভাবনা?
আমি খুশি। অনেক ভালো কাজ হচ্ছে আমাদের এখানে। আমি অভিনেতা, যদি নাটক-সিনেমার কথাই বলি এ দেশে কি আছে কোনো প্রশিক্ষণ কেন্দ্র? একটা ফিল্ম ইনস্টিটিউট বা গবেষণাগার কি আছে? উল্লেখ করার মতো কোনো একাডেমি? নেই। তবু আমাদের এখানে বিশ্বমানের কাজ হচ্ছে। আমরা নিজেদের তাগিদে নিজেদের তৈরি করছি, দক্ষ করছি।