প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ১০:৪৬ এএম
আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ১২:০৪ পিএম
১৯৭১ সেই সব দিন সিনেমার দৃশ্য
বাঙালির গর্বের দিন মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালে নয় মাস যুদ্ধ করার পর ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিজয় অর্জন করে। স্যালুলয়েডের ফিতায় বহুবার ধরা দিয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের নানা ঘটনা। যুদ্ধের রোমহর্ষক, মর্মান্তিক ও বিজয়গাথা নিয়ে নির্মিত হয় বিখ্যাত অনেক সিনেমা।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত উল্লেখযোগ্য সিনেমা আজকের প্রধান আয়োজনে তুলে ধরা হলো।
ওরা ১১ জন
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমা হচ্ছে ‘ওরা ১১ জন’।
১৯৭২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাটি পরিচালনা করেন প্রয়াত নির্মাতা চাষী নজরুল ইসলাম। অভিনয় করেন নায়করাজ রাজ্জাক, শাবানা, নূতন, হাসান ইমাম, এটিএম শামসুজ্জামান, খলিল উল্লাহ খান প্রমুখ। সিনেমাটিতে বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা অভিনয় করেছিলেন। এ সিনেমায় ১১ জনের ১০ জনই বাস্তবের মুক্তিযোদ্ধা। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন খসরু, মুরাদ, হেলাল ও নান্টু।
সংগ্রাম
এ সিনেমাটিও নির্মাণ করেন চাষী নজরুল ইসলাম। ‘সংগ্রাম’ মুক্তি পায় ১৯৭৩ সালে। এর গল্প নেওয়া হয় সেক্টর কমান্ডার মেজর খালেদ মোশাররফের ডায়েরি থেকে। সিনেমাটিতে অভিনয় করেন সুচন্দা, খসরু। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম একটি সিনেমা এটি।
আবার তোরা মানুষ হ
বাংলাদেশের আরেক বিখ্যাত পরিচালক খান আতাউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মাণ করেন ‘আবার তোরা মানুষ হ’। সিনেমাটিতে যুদ্ধপরবর্তী সামাজিক পরিবেশ ও বিশৃঙ্খলার চিত্র উঠে আসে। কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন ফারুক, রাইসুল ইসলাম আসাদ, ববিতা, রোজী আফসারী, রওশন জামিল।
মেঘের অনেক রং
এ সিনেমাটি মুক্তি পায় ১৯৭৬ সালে। হারুনর রশীদ পরিচালিত ‘মেঘের অনেক রং’ সিনেমায় যুদ্ধের সময় একজন ডাক্তারের স্ত্রী রুমা ধর্ষণের পর সন্তানসহ কীভাবে কষ্টের শিকার হন সে চিত্র উঠে আসে। রত্না কথাচিত্রের ব্যানারে সিনেমাটি প্রযোজনা করেন আনোয়ার আশরাফ ও শাজীদা শামীম। প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন মাথিন, ওমর এলাহী, রওশন আরা, আদনান প্রমুখ। মেঘের অনেক রং বাংলাদেশের দ্বিতীয় রঙিন ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রথম রঙিন সিনেমা।
ধীরে বহে মেঘনা
এটি নির্মাতা আলমগীর কবিরের প্রথম কাহিনীচিত্র। মুক্তি প্রায় ১৯৭৩ সালে। ভারতীয় মেয়ে অনিতার প্রেমিক মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়। সে ঢাকায় এসে যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখে আরও গভীরভাবে মর্মাহত হয়। মানবিকতাবোধে আচ্ছন্ন হয় তার হৃদয়। অভিনয়ে ছিলেন বুলবুল আহমেদ, ববিতা, গোলাম মুস্তাফা, আনোয়ার হোসেন, খলিল উল্লাহ খান প্রমুখ। অতিথি শিল্পী হিসেবে অভিনয় করেন সুচন্দা। চলচ্চিত্রটি প্রযোজনা করে বাংলাদেশ ফিল্মস্ ইন্টারন্যাশনাল।
একাত্তরের যীশু
সিনেমাটি নির্মাণ করেন নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু। শাহরিয়ার কবিরের উপন্যাস অবলম্বনে ‘একাত্তরের যীশু’ নির্মিত। মুক্তি পায় ১৯৯৩ সালে। অভিনয় করেন পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, হুমায়ুন ফরীদি, জহির উদ্দিন পীয়াল, আবুল খায়ের, আনোয়ার ফারুক, কামাল বায়েজীদ ও শহীদুজ্জামান সেলিম।
জয়যাত্রা
অভিনেতা তৌকীর আহমেদ পরিচালিত প্রথম সিনেমা এটি। মুক্তি পায় ২০০৪ সালে। সদ্যপ্রয়াত বিখ্যাত কাহিনীকার ও নির্মাতা আমজাদ হোসেনের গল্পে এটি নির্মিত। জয়যাত্রা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন একদল মানুষের হাসিকান্না, সুখদুঃখ, মৃত্যু ও বেঁচে থাকার সংগ্রামের গল্প। সিনেমাটিতে অভিনয় করেন বিপাশা হায়াত, আজিজুল হাকিম, মাহফুজ আহমেদ, হুমায়ুন ফরীদি, তারিক আনাম খান, আবুল হায়াত, মেহবুবা মাহনূর চাঁদনী।
গেরিলা
নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি নিয়ে নির্মিত আরেকটি সিনেমা ‘গেরিলা’। ২০১১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাটি সৈয়দ শামসুল হকের ‘নিষিদ্ধ লোবান’ উপন্যাস থেকে নির্মিত। অভিনয় করেন জয়া আহসান, ফেরদৌস, এটিএম শামসুজ্জামান, রাইসুল ইসলাম আসাদ, পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, শতাব্দী ওয়াদুদ, শম্পা রেজা, গাজী রাকায়েত প্রমুখ। মুক্তিযুদ্ধের সময়কার গেরিলা হামলার চিত্র এতে উঠে আসে এ সিনেমায়।
আগুনের পরশমণি
প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ও চলচ্চিত্রকার হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমা ‘আগুনের পরশমণি’। নিজের লেখা উপন্যাস থেকেই সিনেমাটি নির্মাণ করেন তিনি। অভিনয় করেন বিপাশা হায়াত, আসাদুজ্জামান নূর, আবুল হায়াত, ডলি জহুর প্রমুখ। ১৯৯৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাটি বেশ কয়েকটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে।
আমার বন্ধু রাশেদ
২০১১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমা ‘আমার বন্ধু রাশেদ’। মুহম্মদ জাফর ইকবালের শিশুতোষ উপন্যাস থেকে এটি পরিচালনা করেন মোরশেদুল ইসলাম। অভিনয় করেন চৌধুরী জাওয়াতা আফনান। অন্যান্য চরিত্রে ছিলেন রাইসুল ইসলাম আসাদ, পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, ইনামুল হক, হুমায়রা হিমু ও ওয়াহিদা মল্লিক জলি। এ ছাড়া শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেন রায়ান ইবতেশাম চৌধুরী, কাজী রায়হান রাব্বি, লিখন রাহি, ফাইয়াজ বিন জিয়া, রাফায়েত জিন্নাত, কাওসার আবেদীন।
মুজিব : একটি জাতির রূপকার
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী নিয়ে নির্মিত ‘মুজিব : একটি জাতির রূপকার’ এ বছরের ১৩ অক্টোবর সারা দেশে মুক্তি দেওয়া হয়। বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ প্রযোজনায় সিনেমাটি পরিচালনা করেন ভারতের খ্যাতিমান নির্মাতা শ্যাম বেনেগাল। নির্মাণ ব্যয় ৮৩ কোটি টাকা। সিনেমাটিতে বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করেন আরিফিন শুভ। খন্দকার মোশতাক আহমদের চরিত্রে ফজলুর রহমান বাবু। কিশোর শেখ মুজিব চরিত্রে অভিনয় দিব্য জ্যোতি। এ ছাড়া রেণু (শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব) চরিত্রে নুসরাত ইমরোজ তিশা, শেখ হাসিনা চরিত্রে নুসরাত ফারিয়া, শেখ রেহানা চরিত্রে সাবিলা নূর, মওলানা ভাসানী চরিত্রে রাইসুল ইসলাম আসাদ, তাজউদ্দীন আহমদ চরিত্রে রিয়াজ, এ কে ফজলুল হক চরিত্রে শহীদুল আলম সাচ্চু, টিক্কা খান চরিত্রে জায়েদ খানসহ অনেকেই অভিনয় করেন।
১৯৭১ সেই সব দিন
মুক্তিযুদ্ধের গল্প নিয়ে নির্মিত সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ‘১৯৭১ সেই সব দিন’। এ বছরের ১৮ আগস্ট দেশের প্রেক্ষাগৃহে সিনেমাটি মুক্তি পায়। অভিনেত্রী ও নির্মাতা হৃদি হক পরিচালিত প্রথম সিনেমা এটি। সিনেমার গল্প তীব্র ভালোবাসা আর আশা-আকাঙ্ক্ষার; সময়টা শুধু ১৯৭১। তাই এর গল্প দর্শককে কাঁদাবে-হাসাবে সেই সঙ্গে একাত্তরকে অনুভব করাবে। এর মূল গল্পভাবনা ড. ইনামুল হকের। সাংস্কৃতিক আন্দোলন ও ১৯৭১ সালের একটি পরিবার এবং সে সময়ের কিছু ঘটনা নিয়েই এ সিনেমা নির্মাণ করা হয়। সিনেমায় অভিনয় করন মামুনুর রশীদ, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, মুনমুন আহমেদ, শিল্পী সরকার অপু, ফেরদৌস, তারিন, লিটু আনাম, সজল, সাজু খাদেম, সানজিদা প্রীতি প্রমুখ। পরিচালনার পাশাপাশি অভিনয়ও করেন হৃদি হক। লিটু আনাম অভিনয়ের পাশাপাশি শিল্পনির্দেশক ও কোরিওগ্রাফির কাজও করেন