বিশেষজ্ঞদের মতামতের অপেক্ষা
প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২১ নভেম্বর ২০২৩ ১৫:১৮ পিএম
আপডেট : ২১ নভেম্বর ২০২৩ ১৫:৩৫ পিএম
মুক্তির আগেই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উৎসবে অংশ নিয়ে প্রশংসিত ঢালিউড সিনেমা ‘কাঠগোলাপ’। বিদেশের মাটিতে প্রশংসিত হলেও দেশের প্রেক্ষাগৃহে এখনও মুক্তির অনুমতি পায়নি তরুণ নির্মাতা সাজ্জাদ খানের ছবিটি। দুই মাস ধরে সেন্সরে আটকে আছে সিনেমাটি।
ছবির নির্মাতা সাজ্জাদ খান বলেন, ‘এটা প্রেমের ছবি, কিন্তু অন্যরকম প্রেমের ছবি। এতে আমরা অনেক মানুষের জীবনের গল্প বলেছি। কাঠগোলাপ যেমন প্রচুর সুবাস দেয়, আমাদের এ মানুষগুলোও সবার অনেক কাজে লাগে। কিন্তু কোথায় জানি এক ধরনের স্থবিরতা কাজ করে। আর এ থেকেই তৈরি হয় সংকট। আমরা সম্পর্কের এমন অনেক ধরনের স্তর দেখেছি, নানাবিধ সমস্যা দেখেছি। কিন্তু সম্পর্কের এমন সংকটের কথা কাঠগোলাপে বলেছি যা আগে কেউ বলেনি। ছবিটি এরই মধ্যে বিদেশের অনেক উৎসবে গেছে, প্রশংসিত হয়েছে। সেন্সর বোর্ডের অনেক সদস্যও প্রশংসা করেছেন। তবু ছাড়পত্র পাচ্ছি না।’
এদিকে সিনেমাটির গল্প সেন্সর বোর্ডের সদস্যদের কাছে প্রশংসিত হলেও বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যানের গাফিলতির কারণে সিনেমাটি আটকে আছে বলে অভিযোগ করেন প্রযোজক ফরমান আলী। তিনি বলেন, ‘আমরা ছবিটি সেন্সর বোর্ডে জমা দিই ২১ সেপ্টেম্বর। ২৪ সেপ্টেম্বর বোর্ড ছবিটি দেখে। বোর্ড সদস্য খোরশেদ আলম খসরু আমাকে ফোন করে জানান, আপনাদের ছবি তো অনেক সুন্দর হয়েছে, ছবি আনকাট পাস। দুয়েক দিনের মধ্যে সার্টিফিকেট পেয়ে যাবেন। এরপর যখন সার্টিফিকেট পেতে দেরি হচ্ছিল তখন ভাইস চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমরা দুবার সরাসরি দেখা করি। ছবির বিষয়বস্তু ব্যাখ্যা করি। উনি মনোযোগসহকারে আমাদের কথা শোনেন। উনি বলেন, আপনারা মানুষের জীবনের যে সংকট বা রোগের বিষয়টা ছবিতে এনেছেন তা আদৌ পৃথিবীতে আছে কি না সে বিষয়ে কোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের অভিমত জমা দেন। তার কথা অনুযায়ী আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আলাউদ্দিন খানের বক্তব্য পেশ করি। তাও মাসখানেক হয়ে গেছে। আমাদের কিছুই জানাচ্ছেন না।’
প্রযোজক আরও জানান, শুধু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের বক্তব্য নয়, ছবির বিষয়বস্তু নিয়ে বিশ্বে ছবি-গবেষণা হয়েছে, প্রামাণ্যচিত্র বা ছবি নির্মিত হয়েছে তার সবই সেন্সর বোর্ডে সরবরাহ করা হয়েছে। এর পরও সেন্সর বোর্ডের সিদ্ধান্ত নিতে দীর্ঘসূত্রতা দুঃখজনক।
এ বিষয়ে সেন্সর বোর্ডের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য প্রযোজক নেতা খোরশেদ আলম খসরু বলেন, ‘ছবিটি আটকে আছে ব্যাপারটা এভাবে দেখা ঠিক না। এতে মানব সম্পর্কের এমন একটা দিক দেখানো হয়েছে যার সঙ্গে আমরা পরিচিত নই। তার সম্পর্কে প্রযোজক-পরিচালক বিভিন্ন রেফারেন্স ডকুমেন্টস আমাদের দিয়েছেন। এরপর বোর্ডের চেয়ারম্যান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের ছবিটি দেখিয়ে তাদের অভিমত নিতে বলেছেন।’
তিনি আরও জানান, ‘এমনিতে ছবিটিকে বিনা কর্তনে সেন্সর সার্টিফিকেট দিতে বোর্ডের সব সদস্য একমত আছেন। তবে ছবির বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের মত নিতে চাচ্ছেন, কারণ কোনোভাবে যাতে এ ছবির মাধ্যমে সমাজে কোনো ভুল মেসেজ না যায়। বোর্ড যাতে ভবিষ্যতে কোনো কারণে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়।’
কাঠগোলাপের ছাড়পত্র না পাওয়ার কারণ জানতে সেন্সর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান মো. সাইফুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ত আছেন, পরে কথা বলবেন বলে জানান। এদিকে সেন্সর বোর্ডসূত্রে জানা গেল, প্রতিটি সিনেমার ছাড়পত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে সেন্সর বোর্ড কিছু নিয়ম অনুসরণ করে। সে নিয়মের মধ্যেই ‘হাওয়া’ সিনেমার ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছিল। হাওয়া নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছিল তার পরিপ্রেক্ষিতে বন্য প্রাণী হত্যার বিষয়ে একজন এক্সপ্রার্টকে সিনেমাটি দেখানো হয়। তার কাছ থেকে সিনেমাটি মুক্তিতে কোনো সমস্যা আছে কি না, সে বিষয়ে মতামত নেয় বোর্ড। এর পরই সিনেমাটির ছাড়পত্র দেওয়া হয়। তেমনই কাঠগোলাপ সিনেমার গল্প নিয়ে কিছু জটিলতা রয়েছে বলে সেন্সর বোর্ড এটিকেও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠিয়েছে।
নতুন একটি প্রেক্ষাপট নিয়ে সিনেমাটি নির্মাণ করা হয়েছে। এর গল্প নিয়ে বেশ কজন এক্সপার্টের সঙ্গে কথা বলছে বোর্ড। তাদের কাছ থেকে গ্রিন সিগন্যাল মিললেই ছাড়পত্র দেওয়া হবে।
ড্রিমল্যান্ড এন্টারটেইনমেন্টের বান্যারে নির্মিত সিনেমাটির কাহিনী, সংলাপ ও চিত্রনাট্য লিখেছেন অপূর্ণ রুবেল। সিনেমাটোগ্রাফিতে ছিলেন নাহিয়ান বেলাল। কাঠগোলাপে অভিনয় করেছেন সাবরিনা সুলতানা কেয়া, রাশেদ মামুন অপু, মেঘলা মুক্তা, সুজন হাবিব, দিলরুবা দোয়েল, এ কে আজাদ সেতু, জামশেদ শামীম, কুন্তল বিশ্বাস প্রমুখ