প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৭ নভেম্বর ২০২৩ ১৩:১৭ পিএম
আপডেট : ১৭ নভেম্বর ২০২৩ ১৩:১৯ পিএম
উপমহাদেশের স্বনামধন্য কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লা। বাংলা, উর্দু, হিন্দি, পাঞ্জাবি, সিন্ধি, গুজরাটি, বালুচ, ফারসি, আরবি, স্প্যানিশ, ফরাসি, ইংরেজিসহ ১৮টি ভাষায় ১০ হাজারের বেশি গান করেছেন দমাদম মাস্ত কালান্দার খ্যাত এই গুণী তারকা শিল্পী। কুড়িয়েছেন উপমহাদেশের কোটি মানুষের ভালোবাসা।
তিনি
উপহার দিয়েছেন আল্লাহ মেঘ দে পানি
দে, বন্ধু তিন দিন তোর
বাড়িত গেলাম দেখা পাইলাম না,
একা একা কেন ভালো
লাগে না, ইস্টিশনে রেলগাড়িটা,
সাধের লাউ, খাঁচার ভিতর
অচিন পাখিসহ অসাধারণ, জনপ্রিয় অগণিত বাংলা গান। বাংলার পাশাপাশি
আরও অনেক ভাষায় গান
গেয়ে বিশ্ব মাতিয়ে রাখা বাংলাদেশি কণ্ঠশিল্পী
রুনা লায়লা। টানা পাঁচ দশকের
বেশি সময় ধরে তিনি
সংগীতপিপাসুদের সুরে মুগ্ধ করে
যাচ্ছেন।
আজ জীবনের ৭১ বসন্ত পেরিয়ে
৭২-এ পা দিলেন
সুরের পাখি খ্যাত এই
শিল্পী। রুনা লায়লার জন্মদিন
উপলক্ষ্যে চ্যানেল আই তারকা কথনের
বিশেষ পর্ব ‘আজ রুনা লায়লার
জন্মদিন’ প্রচার করবে আজ বিকেল
৪টা ২০ মিনিটে। অনন্যা
রুমার প্রযোজনায় নানান আঙ্গিকে সাজানো হয়েছে রুনা লায়লার জন্মদিন
উপলক্ষ্যে বিশেষ এই পর্বটি।
জন্মদিন
প্রসঙ্গে রুনা লায়লা বলেন,
‘জন্মদিন এলে বেশ ভালোলাগে।
সবাই বিশেষ এই দিনটিতে আমাকে
মনে করেন। বিশেষত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নানানজন নানান কথা লিখেন খুউব
গুছিয়ে। সেসব কথা আমি
মন দিয়ে পড়ি। নিজের
সম্পর্কে অবগত হই আমি।
এখনো অনেকে নতুন নতুন গানের
জন্য অনুরোধ করেন। এটাও ভালোলাগার। শিল্পী
হিসেবে নতুন গানতো আমি
করতেই চাই। এখনতো আসলে
আগের মতো সবসময় নতুন
নতুন গান করা সম্ভব
না। তবে আমি ভালো
গীতিকবিতা যেমন পছন্দ করি
, সুরটাও আমার ভালোলাগতে হবে।
যদি দুটো বিষয় ব্যাটে
বলে মিলে যায় তাহলে
অবশ্যই গাইবো। যেমন গেলো বছরের
শেষপ্রান্তে কিন্তু আমি নতুন একটি
দেশাত্ববোধক গান গেয়েছি। জন্মদিন
এলে আব্বা আম্মার কথা খুব মনে
পড়ে। মনে পড়ে আমার
বোন দীনা লায়লা’র
কথা। সবাই আমার জন্য,
আমার পরিবারের জন্য দোয়া করবেন
আল্লাহ যেন ভালো রাখেন,
সুস্থ রাখেন।’
১৯৫২
সালের ১৭ নভেম্বর সিলেটে
জন্মগ্রহণ করেন রুনা লায়লা।
বাবা সৈয়দ মোহাম্মদ এমদাদ
আলী ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা এবং মা আনিতা
সেন ওরফে আমেনা লায়লা
সংগীতশিল্পী। তার মামা সুবীর
সেন ভারতের বিখ্যাত সংগীতশিল্পী। তার স্বামী আলমগীর
বাংলা সিনেমার কিংবদন্তি অভিনেতা, পরিচালক ও প্রযোজক।
রুনা
লায়লার যখন আড়াই বছর
বয়স, তার বাবা রাজশাহী
থেকে বদলি হয়ে পাকিস্তানের
মুলতানে যান। সেই সূত্রে
তার শৈশব কাটে লাহোরে।
ছোটবেলা থেকেই নিয়মিত পাকিস্তান টেলিভিশনে গান গাইতেন। রুনা
লায়লার সংগীতশিল্পী নয়, হওয়ার কথা
ছিল নৃত্যশিল্পী। টানা চার বছর
করাচির বুলবুল ললিতকলা একাডেমির ভরতনাট্যম, কত্থক, কত্থকলি শেখেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত
গানের মাঝেই থেকে যান।
১৯৬৫
সালে পাকিস্তানের ‘জুগনু’ চলচ্চিত্রে গান করার মধ্য
দিয়ে প্লেব্যাক শুরু। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশের
‘জীবন সাথী’ ছবিতে প্রথম প্লেব্যাক করেন। লোকজ, পপ, রক, গজলসহ
প্রায় সব ধাঁচের গানই
গেয়েছেন তিনি। মাত্র সাড়ে ১২ বছর
বয়সে জুগনুতে প্লেব্যাক করেন। পুরো এক মাস
চর্চা করেন। ছবির সংগীত পরিচালক
ছিলেন মনজুর হোসেন, যিনি তাকে প্রশিক্ষণ
দিয়েছিলেন। ওই ছবিতেই প্রথম
তার গান গাওয়া। দ্বিতীয়
গানটিও একই ছবির।
রুনা
লায়লার কণ্ঠে সর্বশেষ প্রকাশিত মৌলিক গান ছিল গাজী
মাজহারুল আনোয়ারের লেখা ও শফিক
তুহিনের সুর করা ‘যদি
প্রশ্ন করো কতোটা ভালোবাসি
তোমাকে, ও আমার দেশ
জবাব দেবো, ততোটাই ভালোবাসি, যতোটা ভালোবাসি আমার মাকে’।
গানটির সংগীতায়োজন করেছিলেন ফুয়াদ নাসের বাবু। রুনা লায়লা জানান,
এরইমধ্যে তিনি নতুন বেশকিছু
গানেরও সুর করেছেন। আগামী
বছর এই প্রজন্মের শিল্পীদের
কণ্ঠে তার সুর করা
এই গানগুলো তুলে দিতে চান।
রুনা লায়লা প্রথম সুর করেন আলমগীর
পরিচালিত ‘একটি সিনেমার গল্প’
সিনেমায়। তার সুর করা
গানে কন্ঠ দিয়েছিলেন আঁখি
আলমগীর। এই সিনেমাতে সুর
করে এবং গান গেয়ে
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন রুনা লায়লা ও
আঁখি আলমগীর। ‘গল্প কথার ঐ
কল্পলোকে জানি’ শিরোনামের এই গানটি লিখেছিলেন
দেশ বরেণ্য গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার।
নন্দিত
এই শিল্পী অভিনয় করেছেন ‘শিল্পী’ নামক চলচ্চিত্রেও। দীর্ঘ
সংগীতজীবনে ভূষিত হয়েছেন নানা পুরস্কারে। এর
মধ্যে রয়েছে পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, স্বাধীনতা পুরস্কার। এ ছাড়া ভারত
থেকে পেয়েছেন সায়গল পুরস্কার। পাকিস্তান থেকে অর্জন করেছেন
নিগার, ক্রিটিক্স, গ্র্যাজুয়েটস পুরস্কারসহ জাতীয় সংগীত পরিষদ স্বর্ণপদক।