প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১১ নভেম্বর ২০২৩ ১৮:০৮ পিএম
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৩ ২১:৩৫ পিএম
দেশের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাকে কেপিআইভুক্ত করা হয়। ঠিক এমনই একটি এলাকা বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএফডিসি)। যা চলচ্চিত্রের শুটিং ও উন্নয়নে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেখানে শিল্পী, নির্মাতা ও কুশলীদের জন্য থাকে নিরাপত্তা বেষ্টনী।
তবে গতকাল শুক্রবার নিরাপত্তাকে ‘তোয়াক্কা’ না করে সেখানে আয়োজন করা হয় প্রায় ৪ হাজার মানুষের পিকনিক। যা সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে শেষ হয় রাত ৮-৯টায়। সারাদিন পিকনিকে আসা লোকজন বিএফডিসির অফিসের পাশে যে যার মতো ঘুরে বেড়িয়েছেন। বাদ যায়নি জহির রায়হান কালার ল্যাব, শুটিং ফ্লোরের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোও।
তবে মজার বিষয়, দিনভর এত কিছুর পরও এফডিসি প্রশাসন কিছুই জানে না। তাহলে কীভাবে হলো এই আয়োজন? উত্তর মিলছে না।
জানা যায়, এটির আয়োজন করে এসএসসি ৯৩ সালের ব্যাচ (স্বপ্নের ৯৩)। দিনভর অনুষ্ঠানে ছিল খেলাধুলা, আড্ডা ও সাংস্কৃতিক আয়োজন। সরজমিনে দেখা যায়, এফডিসির মূল ফটক থেকে শুরু করে প্রতিটি মোড়েই নানা ধরনের ব্যানার ও ফেস্টুন।
চত্বরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার বিভিন্ন জায়গায় অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছেন আগত অতিথিরা। যারা এসেছে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে। গাছ ও ঘাস মাড়িয়ে বসে আছেন কোনও কোনও দল। বিষয়টি জানতে যোগাযোগ করা হয় এফডিসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। ফোনে পাওয়া যায়নি এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুজহাত ইয়াসমিনকে।
গণমাধ্যমের কথা হয় কর্পোরেশনের চীফ অফ ফ্লোর এন্ড সেট ও জনসংযোগ (অতিরিক্ত দায়িত্ব) কর্মকর্তা হিমাদ্রি বড়ুয়ার সঙ্গে। ঘটনা শুনে অবাক তিনিও। তার ভাষ্য, ‘গতকাল আমার ডে অফ ছিল। আজও তাই। এ কারণে গতকাল কী ঘটেছে তা আমি জানি না। এটা ঠিক এখন চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের পাশাপাশি বিজ্ঞাপনসহ নানাভাবে ফ্লোর ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। পিকনিকের ঘটনা এর আগে ঘটেনি।
কেপিআই এলাকায় পিকনিক সম্ভব কিনা এবং তিনি ফ্লোরের দায়িত্বে থাকা সত্বেই এই আয়োজনের বিষয়টি তার গোচরে নেই কেন জানতে চাইলে শিল্প নির্দেশক হিসেবে সদ্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া এই সরকারি কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি এফডিসির ফ্লোর ও সেটের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে। কিন্তু এগুলো ভাড়া দেয়ার বিষয়টি উৎপাদন শিডিউল বিভাগ দেখে থাকে। তারা ভালো বলতে কাকে কী কাজের জন্য ভাড়া দেয়া হয়েছে।'
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই আয়োজনের জন্য এফডিসির দুটি ফ্লোর ও মিলনায়তন ভাড়া নেওয়া হয়। এ ছাড়া ব্যবহার করা হয়েছে প্রতিষ্ঠানের বেশ কিছু খোলা প্রাঙ্গণ। সরকারি স্থানে করা এ আয়োজনটির নেতৃত্ব দেন পরিচালক সমিতির সদস্য বিপ্লব শরীফ।
বৃহস্পতিবার বিকাল থেকেই তিনি রান্নার আয়োজন ও এফডিসিতে সামিনা টাঙিয়ে খাবার স্থান তৈরি করেন। রাত অবধি সাজানো হয় পুরো এফডিসি। আর পরিকল্পনা অনুযায়ী শিল্পী ও কলাকুশলীদের নিরাপদ এ স্থানে চলে অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথিদের মহাযজ্ঞ।
বিষয়টি জানতে ফ্লোর ভাড়া দেওয়ার দায়িত্বে থাকা এফডিসির অতিরিক্ত পরিচালক (বিক্রয়) ও ল্যাবরেটরি প্রধান মো. রফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘একটি রিয়েলিটি শোয়ের আয়োজন হবে বলে ফ্লোর ভাড়া নিয়েছেন একটি বিজ্ঞপনী সংস্থার কর্মকর্তা। বিষয়টি সহযোগিতা করেছেন রফ নামের একজন প্রডাকশন ম্যানেজার। নিয়ম মেনে তাদের বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর বাইরে আমি তেমন কিছু জানি না। এখানে তো পিকনিক হওয়ার কথাই না। নিয়মের বাইরে কিছু করা হলে তার শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।’
বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর সিনেমার মানুষেরা বিস্ময় প্রকাশ করছেন। অনেকে সোশ্যাল মিডিয়াতে এ নিয়ে সমালোচনাও করছেন। তারা এ বিষয়ে তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য এফডিসি কর্তৃপক্ষ ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।