প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১১ নভেম্বর ২০২৩ ১৪:১৪ পিএম
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৩ ১৮:৪৯ পিএম
কাজী নজরুল ইসলাম এবং এ আর রহমান। ছবি : কোলাজ প্রবা
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ঐতিহাসিক সৃষ্টি ‘কারার ওই লৌহ কপাট’ গান। কালে কালে এই গান শোষণ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের হাতিয়ার হয়েছে। নানা প্রজন্মের বহু শিল্পী এই গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। সবাই গানটি গেয়েছে কবির নিজের সুর ঠিক রেখে।
তবে এই গানটি বলিউডের একটি সিনেমার জন্য নতুন করে তৈরি করেছেন অস্কারজয়ী এ আর রহমান। আর সেখানেই বাঁধিয়েছেন তিনি বিপত্তি। গানের সুর-তাল বিকৃত করে বিতর্কের মুখে পড়েছেন তিনি।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের কাহিনি অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে বলিউড সিনেমা ‘পিপ্পা’। এতে কবি নজরুল ইসলামের বিখ্যাত ‘কারার ওই লৌহ কপাট’ গানের রিমেক ব্যবহার হয়েছে। রিমেকটি তৈরি করেছেন উপমহাদেশের সুরসম্রাট এআর রহমান। এতে প্রশংসার বদলে বাংলা ভাষাভাষীদের সমালোচনার ঝড়ে পড়েছেন এ অস্কারজয়ী কম্পোজার। পশ্চিমবঙ্গসহ বাংলাদেশের নজরুল অনুরাগীরা নতুন সুরের গানটিকে মেনে নিতে পারছেন না। অনেকের ভাষ্য, গানটিকে বিকৃত করেছেন এআর রহমান।
দুই দেশের অনেক শিল্পী-সাহিত্যিকরা গানটি নিয়ে মুখ খুলেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে সমালোচনা। গানটি নিয়ে এবার মুখ খুলেছে বিদ্রোহী কবির পরিবার।
কবির নাতি অনির্বাণ কাজী একরকম চটে গিয়ে জানান, গানের ক্রেডিট থেকে তার পরিবারের নাম মুছে ফেলা হোক।
কলকাতার গণমাধ্যম অন্য সময়কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অনির্বাণ বলেন, ‘আমরা বুঝতে পারিনি যে এ রহমানের মতো একজন শিল্পী এতটা অসংবেদনশীল হতে পারেন এবং এভাবে গানটিকে হত্যা করতে পারেন। প্রতিবাদ হিসেবে, আমি চলচ্চিত্রের ক্রেডিট লাইনে ‘বিশেষ ধন্যবাদ’-এ আমাদের পরিবারের নাম চাই না।’
কাজী নজরুল ইসলামের পরিবার থেকে অনুমতি নিয়েই গানটি রিমেক করা হয়েছিল বলে তথ্য দেন অনির্বাণ।
তিনি বলেন, ‘২০২১ সালে মা অনুমতি দিয়েছিলেন। সুর এবং কথা না বদলে গানটা রিমেক করতে অনুমতি দিয়েছিলেন তিনি। সেই সময় ওদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, গানটা ওরা নিজেদের মতো করে ব্যবহার করতে চায়। তখন মা ওদের বলেছিলেন, গানটা তৈরি হয়ে গেলে একবার শোনাতে। কিন্তু ওরা কিছুই শোনায়নি। এরপর মা-ও মারা যান।’
গানটিকে বিকৃত করা হয়েছে অভিযোগ এনে অনির্বাণ বলেন, ‘রহমানকে সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা জানিয়েই জানতে চাই, তাকে কে অধিকার দিল গানটি বিকৃত করার? স্বত্ব দেওয়ার সময় তো সুর বদলের কথা বলা হয়নি। কী রকম একটা করে দিয়েছে গানটাকে! একটা গ্রামীণ সংগীতের মতো, ভাটিয়ালির মতো করে দিয়েছে। অনেক সস্তা করে দিয়েছে।’
১৯২২ সালের ২০ জুন ‘কারার ওই লৌহ কপাট’ গানটি লিখেছিলেন কবি কাজী নজরুল। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস কারারুদ্ধ হলে তার স্ত্রী বাসন্তী দেবী নজরুলকে বলেছিলেন, বাংলার মানুষকে নিয়ে কিছু লিখতে। সেই অনুরোধের সম্মান রেখেই নজরুল রচনা করেছিলেন ‘কারার ওই লৌহ কপাট’কালজয়ী গান। ১৯৪৯ সালের জুন মাসে যা রেকর্ড করা হয়। গিরিন চক্রবর্তীর গলায় প্রথম ভেসে ওঠে দ্রোহের এই গান।