প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩১ অক্টোবর ২০২৩ ১৩:১৫ পিএম
আপডেট : ৩১ অক্টোবর ২০২৩ ১৩:৩৯ পিএম
এখনও দর্শক তার মাঝে বাকের ভাইকেই খুঁজে বেড়ায়। তার অভিনয়-জীবনের সবচেয়ে আলোচিত চরিত্র হুমায়ূন আহমেদের ‘কোথাও কেউ নেই’ ধারাবাহিক নাটকের বাকের ভাই। বাংলাদেশের টিভি নাটকের ইতিহাসে অন্যতম জনপ্রিয় ধারাবাহিক এটি। তিন দশক পরেও এই নাটকের কথা দর্শক ভোলেনি, এখনও দর্শক নিজ থেকে আগ্রহ নিয়ে ইউটিউবে এই নাটক দেখে।
জনপ্রিয় এই চরিত্রের রূপকার বাংলাদেশের সংস্কৃতি অঙ্গনের উজ্জ্বল তারকা, সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর। জীবন্ত কিংবদন্তি এই অভিনেতার জন্মদিন আজ।
‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকে আসাদুজ্জামান নূর অভিনয় করেছিলেন বাকের ভাই চরিত্রে আর জনপ্রিয় অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা অভিনয় করেছিলেন মুনা চরিত্রে। দুটি চরিত্র দর্শকের মনে এতটাই গেঁথে গিয়েছে যে এখনও দর্শক তাদের ভোলেনি। দর্শক এখনও এই জুটিকে নাটকে দেখার আগ্রহ প্রকাশ করে প্রতিনিয়ত। আবার রাজনৈতিক জীবনেও সফল দুজন। আসাদুজ্জামান নূর বাংলাদেশের সংস্কৃতিমন্ত্রীও হয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি সংসদ সদস্য। অন্যদিকে সুবর্ণা মুস্তাফাও সংসদ সদস্য।
তার জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়ে সুবর্ণা মুস্তাফা বলেন, ‘নূর ভাইকে জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা। দোয়া করি তিনি সব সময় সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। সংস্কৃতি অঙ্গনে তার সক্রিয় অংশগ্রহণ আরও বাড়ুক এবং মাঝে মাঝে ভালো গল্পের নাটকে অভিনয় করলেও ভালো হয়। আমরা তার অভিনয় মিস করি।’
এদিকে আসাদুজ্জামান নূর জানান, বছরের অন্যান্য দিনের মতোই স্বাভাবিক একটি দিন কাটবে তার। তিনি বলেন, ‘আমি আমার জন্মদিনকে ঘিরে কোনো আয়োজনে অংশগ্রহণ করি না। আমার ৫০তম, ৬০তম এবং ৭৫ বছরেও যখন পা রেখেছিলাম, তখন আমার নাট্যদলকে কোনো বিশেষ আয়োজন করতে নিষেধ করেছিলাম। ছোটবেলাতেও আমার জন্মদিন বিশেষভাবে উদযাপন করা হতো না। বাড়িতে হয়তো সেদিন মা একটু বেশি রান্না করতেন। আর তেমন বিশেষ কিছু নয়।’
গতকাল সোমবার আলাপকালে তিনি ছিলেন মন্ত্রণালয়ে। সামনেই জাতীয় নির্বাচন। নানা রকম মিটিং-মিছিল প্রতিদিনই থাকছে। সেসব নিয়ে তিনি ব্যস্ত রয়েছেন। অভিনেতা বলেন, ‘নির্বাচন তো এসে গেল। আমি এবারও নির্বাচন করব। তাই রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ততা রয়েছে। আমি আপনাদের কাছে দোয়া চাই যেন সুস্থ থাকি, ভালো থাকি। মানুষের কল্যাণে কাজ করে যেতে চাই, সুযোগ যেন পাই। আপনারাও সবাই ভালো থাকবেন, নিরাপদে থাকবেন।’
আবার কবে অভিনয়ে দেখা যাবেÑ জানতে চাইলে বলেন, ‘অভিনয় মিস করি। মঞ্চে কিছু কাজ করছি। বছরজুড়েই কাজ ছিল। আবারও হয়তো ফেরা হবে নির্বাচনের পরপর। আর টিভি নাটক বা সিনেমা নিয়ে এখনোই কিছু বলতে পারছি না।’
নীলফামারী জেলায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ, তারপর চাকরি-জীবনে প্রবেশ করেন। একটা সময় বনে যান পুরোদস্তুর অভিনেতা। অভিনয়, রাজনীতির পাশাপাশি আবৃত্তিশিল্পী ও সংগঠক হিসেবেও নন্দিত তিনি। বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠায় অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন আসাদুজ্জামান নূর। তিনি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সদস্য।
নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের হয়ে চার দশকের বেশি সময় ধরে মঞ্চে অভিনয় করছেন নূর। এই দলের হয়ে প্রথম মঞ্চে অভিনয় করেন ‘তৈল সংকট’ নাটকে। টিভি নাটকে প্রথম অভিনয় করেন ‘রঙ্গের ফানুষ’ নাটকে।
আসাদুজ্জামান নূর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থেকে পর পর চারবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন। বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতিমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। সুদীর্ঘ অভিনয় ও রাজনৈতিক জীবনে আসাদুজ্জামান নূর পেয়েছেন স্বাধীনতা পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা।