প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৫ অক্টোবর ২০২৩ ১৮:১৪ পিএম
চলচ্চিত্রে অভিনয় জীবনের পথচলায় বাংলাদেশের নন্দিত নায়িকা শাবনূর তিন দশক পার করলেন। ১৯৯৩ সালের ১৫ অক্টোবর এহতেশাম পরিচালিত ‘চাঁদনী রাতে’ সাব্বিরের বিপরীতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে নায়িকা হিসেবে শাবনূরের পথচলা শুরু হয়। দীর্ঘ অভিনয় জীবনের পথচলায় অসংখ্য সুপারহিট সিনেমা তিনি উপহার দিয়েছেন। সাফল্য পেয়েছেন সালমান শাহ, রিয়াজ, শাকিল খান, ফেরদৌস, শাকিব খানদের সঙ্গে জুটি হয়ে। মোস্তাফিজুর রহমান মানিক পরিচালিত ‘দুই নয়নের আলো’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য তিনি প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হন।
এ মুহূর্তে শাবনূর অস্ট্রেলিয়ায় আছেন। সেখান থেকে নায়িকা জীবনের ত্রিশ বছরের অভিনন্দন গ্রহণ করলেন। শাবনূর বলেন, ‘সবার ভালোবাসায় চলচ্চিত্র জীবনের পথচলায় তিন দশক পার করে দিলাম। আলহামদুলিল্লাহ। সময় কত দ্রুত চলে গেল। মনে হচ্ছে এই তো সেদিন ভয়ে ভয়ে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালাম। কত গল্প, কত উৎসব-বেদনা পেরিয়ে এলাম। যখন থেকে অভিনয় করি, তখন থেকে আমার অভিনীত সিনেমার প্রতি প্রবল দর্শক চাহিদার জন্য প্রযোজক-পরিচালকরা আমাকে নিয়ে ছবি নির্মাণে অত্যন্ত আগ্রহী হওয়ায় আমার পক্ষে ১৫৮টি ছবির বিশাল মাইলফলক ছোঁয়া সম্ভব হয়েছে। সবকিছুই সম্ভব হয়েছে দর্শক ভালোবেসেছেন বলে।’
শাবনূর অভিনীত ব্যবসাসফল ও প্রশংসিত ছবিগুলোর মধ্যে স্বপ্নের ঠিকানা, স্বপ্নের পৃথিবী, স্বপ্নের নায়ক, তোমাকে চাই, তুমি আমার, আনন্দ অশ্রু, প্রেম পিয়াসী, সুজন সখী, জীবন সংসার, মহামিলন, বিক্ষোভ, চাওয়া থেকে পাওয়া, বিচার হবে, দুই নয়নের আলো, নিরন্তর, মোল্লাবাড়ির বউ, বিয়ের ফুল, নারীর মন, শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ, নিঃশ্বাসে তুমি বিশ্বাসে তুমি, সুন্দরী বধূ, ফুল নেব না অশ্রু নেব, প্রেমের তাজমহল, পৃথিবী তোমার আমার, কাজের মেয়ে, বস্তির মেয়ে, মধুর মিলন, বুক ভরা ভালোবাসা, স্বপ্নের বাসর, ও প্রিয়া তুমি কোথায়, স্বপ্নের ভালোবাসা, তোমার জন্য পাগল, চার সতীনের ঘর, আমার স্বপ্ন তুমি, আমার প্রাণের স্বামী, ১ টাকার বউ, তুমি শুধু তুমি, কঠিন প্রেম, ঢাকাইয়া পোলা বরিশালের মাইয়া ও স্বামী স্ত্রীর যুদ্ধ উল্লেখ্য।
১৯৯৩ সালে মুক্তি পাওয়া প্রথম ছবির পর জুটি বাঁধেন সালমান শাহর সঙ্গে। এই জুটির মাধ্যমেই বদলে যায় তাদের জীবন। সালমান শাহর সঙ্গে ১৪টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন শাবনূর। যার সবগুলোই ছিল ব্যবসাসফল। জহিরুল হক পরিচালিত এ জুটির প্রথম ছবি ‘তুমি আমার’ ১৯৯৪ সালে মুক্তি পায়। একই বছর শাহ আলম কিরণ তাদের নিয়ে ফারুক-কবরী জুটির ‘সুজন সখী’ চলচ্চিত্রের রঙিন ‘সুজন সখী’ পুনর্নির্মাণ করেন। ১৯৯৫ সালে ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ১৯৯৬ সালে ‘স্বপ্নের পৃথিবী’, ‘তোমাকে চাই’, ১৯৯৭ সালে শিবলি সাদিক পরিচালিত ‘আনন্দ অশ্রু’ ছবিগুলো তুমুল সাড়া ফেলে ইন্ডাস্ট্রিতে।
সালমানের অকালমৃত্যুর পর নায়ক রিয়াজের সঙ্গে জুটি বেঁধেও অসংখ্য ছবি উপহার দেন শাবনূর। এই নায়কের বিপরীতে ১৯৯৭ সালে ‘মন মানে না’ ও ‘তুমি শুধু তুমি’ মুক্তি পায়। এরপর ১৯৯৯ সালে রিয়াজ-শাবনূর জুটির ‘ভালোবাসি তোমাকে’ ও ‘বিয়ের ফুল’ ব্যাপক ব্যবসাসফল হয়। সালমান শাহর পর রিয়াজ-শাবনূর জুটি দর্শক মহলে ব্যাপক সাড়া ফেলে। তারা উপহার দেন ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’, ‘প্রেমের তাজমহল’, ‘নয়ন ভরা জল’, ‘মাটির ফুল’, ‘সুন্দরী বধূ’, ‘মোল্লাবাড়ির বউ’, ‘ও প্রিয়া তুমি কোথায়’, ‘স্বপ্নের বাসর’, ‘হৃদয়ের বন্ধন’, ‘ভালোবাসা ভালোবাসা’সহ অনেক ছবি।
রিয়াজ পরবর্তী ফেরদৌস ও শাকিব খানের সঙ্গেও জুটি বেঁধে সফল হন এই নায়িকা। বলা হয়ে থাকে ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন শাকিবকে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় সমর্থনটা দিয়েছেন শাবনূর। তিনি মান্নার সঙ্গেও কিছু হিট সিনেমা উপহার দেন। তবে শাবনূরের ক্যারিয়ারে অন্যতম একটি সিনেমা ‘নিরন্তর’। হুমায়ূন আহমেদের গল্পে ছবিটি নির্মাণ করেন আবু সাইয়ীদ। ছবিটিতে শাবনূর সমালোচকদের প্রশংসা পান।
শাবনূর বলেন, ‘আমার অভিনীত প্রতিটি ছবিই আমার কাছে প্রিয়। সহশিল্পীদের মধ্যে প্রয়াত সালমান শাহর সঙ্গে আমার জুটি ছিল সবথেকে বেশি দর্শকপ্রিয়। সালমানের অকালমৃত্যুর আগ পর্যন্ত মাত্র চার বছরে আমি ও সালমান সর্বাধিক ১৪টি দর্শকনন্দিত ও ব্যবসাসফল ছবিতে জুটি বেঁধে কাজ করেছিলাম। এরপর আমি সবচেয়ে বেশি সাফল্য পেয়েছি রিয়াজের সঙ্গে। আমাদের জুটির ছবিগুলোকে দর্শক দারুণভাবে গ্রহণ করেছিলেন। সালমানের সঙ্গে আমার জুটির যে জনপ্রিয়তা সেটা যেন অনেকটাই পূরণ হয়েছিল রিয়াজের সঙ্গে। আমরা অনেক ছবি করেছি। প্রায় সবই রোমান্টিক। অনেক মিষ্টি কিছু গানও আছে আমাদের। যার বেশিরভাগই এন্ড্রু কিশোর, সাবিনা ইয়াসমীন ও কনক চাঁপা আপা গেয়েছেন। তাদের কাছেও আমি কৃতজ্ঞ। প্রয়াত মান্না ভাই, ওমর সানী, বাপ্পারাজ, আমিন খান, অমিত হাসান, ফেরদৌস আহমেদ, শাকিল খান ও শাকিব খানের সঙ্গেও অনেক হিট ছবি আছে। সবার ভালোবাসায় চলচ্চিত্রে এখনও যথেষ্ট সম্মান নিয়েই বেঁচে আছি। এভাবেই থাকতে চাই।’
অভিনয় জীবনের দীর্ঘ ত্রিশ বছরের পথচলায় চলচ্চিত্রের সব প্রযোজক, পরিচালক, সহশিল্পী, চিত্রনাট্যকার, নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী, ক্যামেরাম্যান ও ছবির সঙ্গে জড়িত কলাকুশলীসহ সবার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন শাবনূর। তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে আমার ছবির দর্শক ও অগণিত ভক্তের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা ও সমর্থনে আমি আজকের শাবনূর। সোশ্যাল মিডিয়ায় যুক্ত হওয়ার পর থেকে সর্বক্ষণ উপলব্ধি করছি আমাকে নিয়ে তাদের ভালোবাসা আজও বদলায়নি, বরং বেড়েই চলেছে। আমার প্রতি আপনাদের অকৃত্রিম ভালোবাসা ভবিষ্যতেও আশা করি অব্যাহত থাকবে। আমি সাংবাদিক ভাই-বোনদের প্রতিও বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই। আমার প্রতি আপনারা প্রায় সবাই যেভাবে সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব পোষণ করে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে আমাকে এতদূর এগিয়ে নিয়ে আসতে সাহায্য করেছেন তার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।’
শাবনূর জানান, আগামী বছরের শুরুতে তার দেশে আসার কথা রয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় একমাত্র ছেলে আইজান নেহানকে নিয়েই তিনি ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ ছাড়া ঢাকা থেকে সেখানে কেউ গেলে তাদেরও সময় দেওয়ার চেষ্টা করেন শাবনূর। এর মধ্যে চিত্রনায়িকা পূর্ণিমা ও গায়িকা কনক চাঁপা গিয়েছিলেন। দুজনকে কাছে পেয়ে বেশ জমিয়ে আড্ডা দিয়েছেন। আর মন খুলে হয়েছে স্মৃতিচারণ।