মহিউদ্দিন মাহি
প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২৩ ১৪:৫৪ পিএম
আপডেট : ২৪ আগস্ট ২০২৩ ১৫:৫২ পিএম
নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সিনেমা দিয়ে অভিনয়ে অভিষেক হতে যাচ্ছে জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী জেফারের। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকির জন্য ফারুকী নির্মাণ করছেন ওয়েব ফিল্ম ‘লাস্ট ডিফেন্ডার অব মনোগামি’। সেখানেই চঞ্চল চৌধুরীর সঙ্গে দেখা যাবে জেফারকে। ইতোমধ্যে তার চরিত্রের লুক প্রকাশিত হয়েছে; যা বেশ আলোচনায় এসেছে। বর্তমানে ওয়েব ফিল্মটির শুটিংয়ে তিনি কক্সবাজার অবস্থান করছেন। সেখান থেকেই জানালেন প্রথম সিনেমায় অভিনয়ের অভিজ্ঞতা ও প্রত্যাশার কথা। লিখেছেন মহিউদ্দিন মাহি-
চারদিকে আপনাকে নিয়ে আলোচনা। কেমন লাগছে?
অবশ্যই ভালো লাগছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখ রাখলেই দেখছি আমার ছবিগুলো শেয়ার করছেন অনেকে। আসলে আমার চুলগুলো সব সময় একরকমভাবে দেখে অভ্যস্ত সবাই। হঠাৎ লুকে পরিবর্তন আসায় সবাই চমকেছেন। অনেকে প্রশংসা করছেন। খুব ভালো লাগছে। সব ক্রেডিট আসলে ফারুকী ভাই ও তার ছবির টিমের।
কোথায় আছেন এখন, আওয়াজ শোনা যাচ্ছে-
কক্সবাজার আছি, সিনেমার শুটিংয়ে। দিনের পুরোটা সময় ব্যস্ততায় কাটে। মোবাইলে তেমন নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। শহুরে জীবন থেকে একদম ভিন্নরকম সময় যাচ্ছে। প্রতিদিন নতুন নতুন অভিজ্ঞতা নিচ্ছি। সবকিছু মিলিয়ে ভালোই সময় কাটছে।
ঢাকায় ফিরবেন কবে?
কক্সবাজারে এ লটের শুটিং ২৪ তারিখ শেষ হবে। সেদিনই ঢাকায় ফিরব কোনো ঝামেলা না হলে। এরপর ঢাকায় শুটিং শুরু হবে একটু বিরতি নিয়ে।
লাস্ট ডিফেন্ডার অব মনোগামি সিনেমার সঙ্গে যুক্ত হলেন কীভাবে?
একদিন হঠাৎ ফারুকী ভাই আমার নম্বরে কল দিয়ে বললেন, ‘জেফার আমার নতুন প্রজেক্টের জন্য তোমাকে ভাবছি। তোমার লুক টেস্ট নেব। স্টুডিওতে চলে আসো। এরপর স্টুডিওতে গেলাম। আমার হেয়ার স্টাইল পরিবর্তন করে লুক টেস্ট নিলেন। তার পরই কাজের কথা পাকা করে আমাকে স্ক্রিপ্ট দিয়ে দিলেন। স্ক্রিপ্ট দেখে আমি মুগ্ধ। গল্পটি প্রথমবার পড়েই অসম্ভব প্রেমে পড়ে যাই। চরিত্রগুলো খুবই আকৃষ্ট করে। দর্শকও সেটা টের পাবেন ছবিটা দেখলে।
ক্যারিয়ারে প্রথম চলচ্চিত্রে কাজ করছেন, অনুভূতি জানতে চাই...
অসাধারণ অনুভূতি। বলতে পারেন এমন একটি শুরুর অপেক্ষায় আমি এতদিন ছিলাম। এর থেকে ভালো শুরু আর হতে পারে না। ক্যারিয়ারের প্রথম কাজ ফারুকী ভাইয়ের মতো একজন পরিচালকের হাত ধরে। আমি প্রথমে একটু দ্বিধায় ছিলাম। কাজটা করতে পারব কি না। এরপর ফারুকী ভাই আমাকে সাহস দিয়ে বললেন, ‘কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। নিজেকে প্রস্তুত করো যে কাজটা তুমি করছ।’ ব্যস, নিজেকে প্রস্তুত করে শুটিং শুরু করে দিলাম। বাকিটা এখন দর্শক বলবেন।
একজন নির্মাতা হিসেবে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সমাদৃত। তাকে আপনি কীভাবে দেখছেন একজন নবীন অভিনেত্রী হিসেবে?
আমি তো আসলে আশা করিনি যে ফারুকী ভাইয়ের সঙ্গে সিনেমায় কাজের সুযোগ হবে। পুরো জার্নিটাই আমার কাছে স্পেশাল। কাজ না করলেও অনেক নির্মাতার কাজ আমি দেখেছি, অভিজ্ঞতা শুনেছি। কিন্তু ফারুকী ভাইকে দেখছি একজন কমপ্লিট নির্মাতা হিসেবে। গল্প অনুযায়ী তার শিল্পী নির্বাচন একেবারেই আলাদা রকমের। এ ক্ষেত্রে তিনি বরাবরই সাহসী। আগের কাজগুলোতেও তিনি অনেক সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মনোগামি সিনেমায় তিনি আমার মতো ফ্রেশার নিয়ে আরেকবার সেই সিদ্ধান্ত নিলেন। সবকিছু আমার কাছে স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে।
প্রথম দৃশ্যে শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা জানতে চাই...
এর আগেও আমি ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছি। এই পরিবেশ আমার কাছে নতুন কিছু নয়। তবে এবারের দাঁড়ানোর অভিজ্ঞতা ছিল একদমই আলাদা। শুরু থেকেই আমি খুব নার্ভাস ছিলাম। ফারুকী ভাই আমাকে আবারও প্রেরণা দিয়ে স্বাভাবিক থাকার টোটকা দিলেন। বলেছিলেন, ‘জেফার, নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস রেখে শট দাও।’ তারপর চঞ্চল চৌধুরী ভাইয়াও আমাকে সাহস দিয়েছেন। তার কথা না বললে হয় না। পুরো টিমেরই সহযোগিতা পেয়েছি আমি। তারপর দেখলাম সময়ের সঙ্গে সঙ্গে টিমটা আপন হয়ে ওঠে, পরিবারের মতো হয়ে ওঠে। জড়তাটা কেটে যায়। আত্মবিশ্বাস চলে আসে।
চঞ্চল চৌধুরীর সঙ্গে অভিনয়ের কিছু গল্প বলুন-
কী বলব! এটাও একটা স্বপ্নের মতো ব্যাপার আমার কাছে। আমি চঞ্চল চৌধুরীর অভিনয়ের ভক্ত। তার সব কাজই আগ্রহ নিয়ে দেখি। তার অভিনয়ের গ্রামার আমাকে মুগ্ধ করেছে বহুবার। জীবনের প্রথম সিনেমায় তার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা আমার কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি এত বড় মাপের অভিনেতা, কিন্তু খুব বিনয়ী মানুষ। শুটিং সেটে বোঝার উপায় নেই তিনি সুপারস্টার চঞ্চল। দেশবিদেশ তার অভিনয়ে মুগ্ধ। সবার সঙ্গে সাধারণভাবে মিশছেন। নিজের চরিত্র নিয়ে আলোচনা করছেন। আমাকে আমার চরিত্র কীভাবে করলে ভালো হবে সেই পরামর্শ দিচ্ছেন।
তো যে লুকে আপনাকে দেখা গেল এটাই কি নিয়মিত থাকবে?
না, এই লুক তো চরিত্রের জন্য নির্বাচন করা হয়েছে। কাজ শেষ হয়ে গেলে আবার আগের লুকে চলে আসব। সেটা জেফারের লুক। আর এখন যেটা দেখছেন সেটা মনোগামি সিনেমার একটি চরিত্র। যে কি না একটা চাকরি করে। আর দশটা নারীর মতো একটা জীবন তার। সাধারণ চলাফেরা। আমার ব্যক্তিজীবন থেকে অনেক আলাদা এ চরিত্র। এটা আমি রপ্ত করেছি গল্পের প্রয়োজনে। আর আমার যে ব্যক্তি লুক তার প্রতি বিশেষ দুর্বলতা আছে। ওটাই আমি। আমাকে সবাই সেভাবে চেনে। আমিও ওই লুকেই থাকতে ভালোবাসি। শুধু চুল নয়, পোশাক ও জীবনযাপনেও সিনেমার জেফারের থেকে ব্যক্তি জেফারের অনেক পার্থক্য।
আপনি একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, বাংলা চলচ্চিত্র দেখেন না। এখন নিজে বাংলা চলচ্চিত্রেই অভিনয় করছেন। এ বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। আপনার মন্তব্য কী?
এমন কথা অনেক আগে আমি একবার বলেছিলাম এটা সত্য। যে পরিপ্রেক্ষিতে আমি উত্তরটি দিয়েছিলাম তা মিথ্যা ছিল না, এবং সেটি ছিল অনেক আগের একটি সাক্ষাৎকার। আমি বাংলা সিনেমা দেখি, তবে আমার পছন্দের একটি ধরন রয়েছে। সবরকম সিনেমা দেখি না। এটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। একেকজন একেক রকম আমেজের সিনেমা পছন্দ করেন। আমি গল্পনির্ভর সিনেমাগুলো দেখতে পছন্দ করি। যে ধরনের সিনেমার ব্যাপারে আমাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল সে সিনেমাগুলো আমি দেখিনি। এখন আমাদের ইন্ডাস্ট্রির সিনেমাগুলো অনেক ভালো হচ্ছে। সব আমেজ ও ধরনের সিনেমায় একটা ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। গল্পের ভাবনায়, নির্মাণে মুনশিয়ানা দেখা যাচ্ছে। আমি সব সময়ই ভালো সিনেমার ভক্ত। ভালো সিনেমা হলে অবশ্যই দেখি, তা যেকোনো ভাষার হোক, দেশের হোক।
সিনেমার অভিনয়ে নিয়মিত হওয়ার ইচ্ছা আছে?
অবশ্যই আছে। আমাদের ইন্ডাস্ট্রি আগের চেয়ে অনেক এগিয়ে যাচ্ছে। ভালো কিছুর সম্ভাবনা রয়েছে আমাদের। দেশের নির্মাতারা অনেক গুছিয়ে কাজ করছেন। আমাদের চলচ্চিত্রের আন্তর্জাতিক দর্শক তৈরি হয়েছে; যা নতুন অভিনেতা-অভিনেত্রীদের জন্য আনন্দের সংবাদ। আমি ভালো কাজের সুযোগ পেলে অবশ্যই করব।
আপনার গানের ভক্তরা তো আছেনই, যারা আপনার অভিনয় উপভোগ করবেন। অভিনেত্রী জেফার দর্শকের উদ্দেশে কিছু বলবেন?
আমি প্রথম সিনেমা করছি। কতটা কেমন করতে পারব জানি না, চেষ্টা করছি নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে। দর্শকের কাছে ভালো লাগলে সব শ্রম সার্থক হবে। সবাইকে বলব, দেশের সিনেমা ভালোবাসুন। হলে গিয়ে দেখুন। একটা কথা না বললেই নয়, আমাদের দেশের দর্শক কিন্তু চিরকাল সিনেমা ভালোবেসেছেন। সেই প্রমাণ বারবার মিলেছে। এখন তো আরও বেশি করে সেটা বোঝা যাচ্ছে। গেল কয়েক বছরে সিনেমা হলে দর্শকের ঢল নেমেছে। তাদের ধরে রাখার দায়িত্ব সবার। ভালো কাজ নিয়মিত রাখতে হবে।