প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৯ আগস্ট ২০২৩ ১২:৫৮ পিএম
এটা নাকি ওভার দ্য টপ বা ওটিটির যুগ। একেকটি ওয়েবমাধ্যমে কত অপশন, কত ধরনের কনটেন্ট; যা ইচ্ছা, যেমন ইচ্ছা দেখা যায়। ঘরে বসে এক নিমেষেই সারা দুনিয়ার নানা ভাষার কনটেন্ট উপভোগ করা যায়। বিশেষ করে করোনা মহামারির সময় ওটিটির জোয়ার এসেছে। ঘরবন্দি মানুষ বিনোদনের আশায় অনলাইনে নানা প্ল্যাটফর্ম দাপিয়ে বেড়িয়েছে। সিনেমা হলগুলো পড়ে ছিল শূন্য। তখন অনেকেই ভাবছিলেন, হলে গিয়ে সিনেমা দেখার দিন হয়তো আর ফিরবে না। সেই ধারণা ভুল প্রমাণ করে প্রেক্ষাগৃহে সিনেমার সাফল্য আবার ঝলমল করে উঠল। বাংলাদেশ থেকে হলিউড, বলিউড সবখানেই হলভর্তি দর্শক দেখা যাচ্ছে। সহজলভ্য বৈচিত্র্যময় বিনোদনের ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও ওটিটিকে পাশ কাটিয়ে মানুষ আবার হলে যেতে শুরু করেছে। এ নিয়ে ধুমের মূল আয়োজন লিখেছেন লিমন আহমেদ-
করোনা মহামারির পর থেকেই এ বিতর্ক খুব শোনা যাচ্ছে- তবে কি ওটিটি সিনেমা হলের জায়গা কেড়ে নিতে চলেছে আগামীতে? অনেক তারকা নির্মাতা, শিল্পী এ নিয়ে মন্তব্যও করেছেন। বলিউডের বর্ষীয়ান অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহের মতো অভিনেতাও বলেছেন, ‘শিগগিরই হল ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। সিনেমার ভবিষ্যৎ এখন ওটিটি।’
এমন ধারণা করেছিলেন অনেকেই। তাই ওটিটি ধারণাটি যাত্রা করা মাত্রই হয়ে ওঠে জনপ্রিয়। এখানে অনেক জনপ্রিয় তারকার সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। হলিউডে এ তালিকা বেশ লম্বা। তবে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে আছে ক্রিস হেমসওয়ার্থের ‘এক্সট্র্যাকশন’ সিনেমাটি। সুপারহিরো ‘থর’ খ্যাত তারকার এ সিনেমা নেটফ্লিক্সে মুক্তি পায় ২০২০ সালের এপ্রিলে। রীতিমতো ঝড় তোলে এ সিনেমা দুনিয়াজুড়ে। বলা যেতে পারে, ওটিটিতে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আয় করা সিনেমা এটি। এরপর হলিউডের অনেক সিনেমাই মুক্তি পেয়েছে নানান ওটিটি প্ল্যাটফর্মে।
একইভাবে ভারতীর সিনেমাও দারুণ সাফল্য পেয়েছে অনলাইন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে। তার মধ্যে আছে বলিউড, দক্ষিণী ও পশ্চিমবঙ্গের সিনেমা। উল্লেখ করা যেতে পারে বলিউডের কার্তিক আরিয়ানের ‘ভুলভুলাইয়া ২’-এর কথা। এটি দারুণ হিট করে। আয় করেছে প্রায় ২৬৫ কোটি রুপি। এ তালিকায় আরও আছে ‘গুঞ্জন সাক্সেনা : দ্য কার্গিল গার্ল’, ‘বাঁধাই দো’, ‘রানওয়ে ৩৪’, ‘গুডবাই’ ইত্যাদি সিনেমা।
সুপারস্টার সালমান খানের বহুল প্রতীক্ষিত ‘রাধে : ইয়োর মোস্ট ওয়ান্টেড ভাই’ সিনেমাও মুক্তি পেয়েছে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম জি ফাইভে। দক্ষিণের তালিকাও বেশ চমকজাগানিয়া। বাংলাদেশেও কিছু সিনেমা মুক্তি পেয়েছে ওটিটিতে। তালিকায় আছে দেশসেরা দুই তারকা শাকিব খান ও মাহিয়া মাহির সিনেমাও। ২০২০ সালের ১৬ ডিসেম্বর ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আই থিয়েটারে মুক্তি পায় শাকিব-মাহি জুটির ‘নবাব এলএলবি’ সিনেমাটি। মোটামুটি সাড়া পায়। এরপর অনেক নির্মাতাই সাহস করে সিনেমা মুক্তি দিয়েছেন ওটিটিতে। আবার কিছু সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেলেও মূল টার্গেট ছিল ওটিটিই। যার মধ্যে উল্লেখ করা যায় ‘মৃধা বনাম মৃধা’র নাম। হলে মুক্তি পেয়ে চরম ব্যর্থ এ সিনেমা ওটিটিতে সাফল্য পেয়েছে।
এসব কারণে ওটিটিই যখন হয়ে উঠছিল সিনেমার ভবিষ্যৎ, তখনই কেমন যেন পাল্টে গেল পুরো দুনিয়ার সিনেমার বাজার। যে করোনার কারণে ভাবা হচ্ছিল ওটিটিই সব, সেই মহামারির কালো মেঘ কাটতেই প্রেক্ষাগৃহে যেন সিনেমার সাফল্যের পূর্ণিমা জেগেছে। হলিউড থেকে বাংলাদেশÑ সবখানেই দেখা যাচ্ছে দর্শকের উপচে পড়া ভিড়।
হলিউডে হল ব্যবসার চমক দেখিয়েছে ‘থর : লাভ অ্যান্ড থান্ডার’। করোনা সংকট শুরু হওয়ার পর এ সিনেমা দিয়েই হলিউড বক্স অফিস হিট সিনেমার দেখা পায়। এরপর একে একে ধামাকা দেখিয়েছে ‘ব্ল্যাক অ্যাডাম’, ‘অ্যাভাটার ২’, ‘ওয়ান্ডার ওম্যান’, ‘টপ গান : মেভরিক’সহ আরও কিছু সিনেমা। সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে বিশাল ব্যবসার সাফল্য দেখিয়েছে ‘বার্বি’। ২১ জুলাই মুক্তি পাওয়া এ সিনেমা এরই মধ্যে আয় করেছে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি, যা চমকে দিয়েছে সবাইকে। পাশাপাশি ‘ওপেনহেইমার’, ইন্ডিয়ানা জোনস, মিশন ইমপসিবল, ট্রান্সফরমারের নতুন কিস্তিও দারুণ সাফল্য দেখিয়েছে। বিশ্বের নানা দেশে মুক্তি পাওয়া সিনেমাগুলো কাতারে কাতারে দর্শক টেনে প্রেক্ষাগৃহের শক্তি ও গ্রহণযোগ্যতা প্রমাণ করেছে।
ভারতেও ওটিটির চ্যালেঞ্জ জয় করে প্রেক্ষাগৃহে চমক দেখিয়েছে ‘আরআরআর’, ‘কেজিএফ টু’, ‘ব্রহ্মাস্ত্র’ সিনেমাগুলো। তবে ক্রমেই যখন তামিল-তেলেগু সিনেমার সামনে বলিউডের সিনেমা মানমর্যাদা হারাচ্ছিল, তখন শাহরুখ খান এলেন বাদশাহি স্টাইলে। ‘পাঠান’ সিনেমা দিয়ে নিজের ক্যারিয়ারকে যেমন টেনে তুললেন খাদের কিনারা থেকে, তেমনি হিন্দি সিনেমার শানশওকতকেও নতুন করে আলোকিত করলেন। এ সাফল্য এসেছে সিনেমা হলেই। আনুমানিক ২২৫ কোটি রুপিতে নির্মিত সিনেমাটি বিশ্বজুড়ে মুক্তি পেয়ে আয় করেছে প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি রুপি! ভারতে ভালো চলছে ‘বিস্ট’, ‘পোনিয়িন সেলভান ১’, ‘পোনিয়িন সেলভান ২’ সিনেমাগুলোও। সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া ‘আদিপুরুষ’ সমালোচিত হলেও ভালো ব্যবসা করেছে। সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ‘রকি অর রানি কি প্রেমকাহানী’ সিনেমা রীতিমতো চমক দেখাচ্ছে মুক্তির পর থেকে।
এদিকে বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে দর্শকের ঢল এসেছে গেল বছর মুক্তি পাওয়া ‘পরাণ’ দিয়ে। এরপর ‘হাওয়া’ প্রমাণ করেছে ভালো সিনেমা হলে প্রেক্ষাগৃহে গিয়েই দেখবে দর্শক। টানা কয়েক সপ্তাহ হলে চলেছে সিনেমাটি। আর এবারের কোরবানি ঈদে মুক্তি পাওয়া ‘প্রিয়তমা’ এরই মধ্যে দেশি সিনেমার ইতিহাসে সর্বোচ্চ আয়কারী সিনেমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। সাফল্যের দেখা পেয়েছে ‘সুড়ঙ্গ’ ও ‘প্রহেলিকা’ সিনেমা দুটিও।
সিনেমা হলের এ সাফল্য আবারও নিয়মিত থাকবেÑ এমনটাই ধারণা বিশ্লেষকদের। প্রযোজক ও প্রদর্শক সমিতির নেতা খোরশেদ আলম খসরু বলেন, ‘মাধ্যম যতই আসুক, সিনেমা হলের ব্যবসা কখনোই বন্ধ হবে না। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এখানেও নানা পরিবর্তন, পরিমার্জন আসবে বটে, তবে সিনেমাপ্রেমীদের কাছে প্রেক্ষাগৃহ সব সময়ই বিনোদনের অনন্য একটা মাধ্যম হিসেবে থেকে যাবে।’
চিত্রনায়ক রিয়াজ আছেন জনপ্রিয় একটি ওটিটির দায়িত্বে। একসময়ের হার্টথ্রব এই নায়কও মনে করেন, বিশ্বজুড়ে সিনেমাপ্রিয় মানুষের কাছে প্রেক্ষাগৃহের আবেদন কখনোই ফুরাবে না।