× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

প্রমাণ করলেন তারাই সেরা

লিমন আহমেদ

প্রকাশ : ১৬ জুলাই ২০২৩ ১২:৫৬ পিএম

প্রমাণ করলেন তারাই সেরা

খুব ভালো একটা উক্তি বেশ প্রচলিত আমাদের সমাজে। সেটা হলো যারা এ জগতে অসাধারণ কিছু করতে চায়, তাদেরই সাধারণ লোকের নিন্দা, সমালোচনা সহ্য করতে হয়। সম্ভবত এমন অসাধারণ কিছু করবেন বলেই হয়তো এবারের কোরবানি ঈদের তিন সিনেমার নায়িকা সমালোচনা সহ্য করে গেছেন। তারা কাজে প্রমাণ দিয়েছেন, সমালোচনায় চুপসে যাওয়া তাদের স্বভাব নয়। বরং যোগ্যতা দিয়ে তারা সাফল্যের চূড়ায় উঠতে জানেন। সেই তিন নায়িকা হলেন শবনম বুবলী, তমা মির্জা এবং ভারতের ইধিকা পাল।

২০২১ সালের নভেম্বরে খবর প্রকাশিত হয় অভিনেতা মাহফুজ আহমেদ প্রায় ছয় বছর পর সিনেমায় ফিরছেন। তার নতুন সিনেমাটি পরিচালনা করবেন চয়নিকা চৌধুরী। এতে নায়িকা হিসেবে দেখা যাবে পরীমনিকে। নতুন এই জুটিকে নিয়ে বেশ আগ্রহ তৈরি হয় ঢালিউডে। অনেকেই ভাবছিলেন, অভিনয়ে সমৃদ্ধ মাহফুজ আহমেদের সঙ্গে গ্ল্যামারাস পরীর রসায়ন বেশ জমে যাবে। কিন্তু হঠাৎ জানা যায়, পরীমনি নন, বরং মাহফুজের নায়িকা হবেন শবনম বুবলী। সিনেমার নাম ‘প্রহেলিকা’। তখন বেশ সমালোচনা শুরু হয়। শাকিব খানের নামের আড়ালে তারকা হয়ে ওঠা বুবলী কতটা মানিয়ে নিতে পারবেন মাহফুজ আহমেদের সঙ্গে। পাশাপাশি মসলাদার সিনেমার বুবলী গল্পপ্রধান সিনেমায় নিজেকে কতটা তুলে ধরতে পারবেন, সে নিয়েও অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। চয়নিকা চৌধুরী সেসব সমালোচনা মাথায় নিয়ে শুরু করেন ‘প্রহেলিকা’ তৈরির কাজ। অবশেষে গেল কোরবানি ঈদে মুক্তি পেয়েছে সিনেমাটি।

আর বলার অপেক্ষা রাখে না সিনেমাটি গান, গল্প ও নির্মাণের মুনশিয়ানায় বেশ প্রশংসিত হয়েছে। মুক্তির তৃতীয় সপ্তাহে এসেও এটি দর্শক পাচ্ছে। আর এ সিনেমায় মন ভরানো অভিনয় দিয়ে দর্শকের নজর কেড়েছেন নায়িকা বুবলী। ভালো চরিত্র পেলে তিনিও যে অভিনয়ের চমক দেখাতে পারেন, সেই প্রমাণ দিয়েছে প্রহেলিকা। মাহফুজ আহমেদ ও হালের ক্রেজ নাসিরউদ্দিন খানের মতো শক্তিশালী অভিনেতাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে একজনের স্ত্রী ও অন্যজনের প্রেমিকা হিসেবে দুটি সত্তাতেই দারুণ অভিনয় করে গেছেন তিনি। পরিচালক চয়নিকা তো বটেই, মাহফুজের মতো অভিনেতাও শবনম বুবলীর অভিনয়, এক্সপ্রেশন, কাজের প্রতি মনোযোগ ইত্যাদি বিষয়গুলোর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। ফলে বলাই যায়, বুবলী সমালোচনাকে জয় করতে পেরেছেন। অভিনয় গুণ ও আত্মবিশ্বাস দিয়ে তিনি নিজেকে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছেন।

একইভাবে যখন শাকিব খানের বলয় ভেঙে প্রথমবার নায়ক নিরবের বিপরীতে ‘ক্যাসিনো’ সিনেমায় জুটিবদ্ধ হয়েছিলেন বুবলী তখনও বেশ সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন। প্রথমত, সবাই দাবি করছিলেন, শাকিব ছাড়া বুবলীর নিজস্ব কোনো আলো নেই। তারপর নায়ক নিরবের মতো স্ট্রাগলিং হিরোর বিপরীতে সিনেমা করতে যাওয়াটা বুবলীকে ক্যারিয়ারের দিক থেকে পিছিয়ে দেবে বলেও কানাঘুষা চলছিল। কিন্তু গেল কোরবানির ঈদে মুক্তি পাওয়া সৈকত নাসিরের ক্যাসিনো সিনেমা দিয়েও বুবলী আলোচনায় এসেছেন। এই ছবিটিও দর্শক পেয়েছে। নিন্দুকের মুখে ছাই দিয়ে প্রশংসিত হয়েছেন বুবলী। 

এরপরই আলোচ্য তমা মির্জা। যখন আফরান নিশোর বিপরীতে ‘সুড়ঙ্গ’ সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী এই নায়িকা তখন থেকেই সমালোচনার শুরু। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে মূল মিডিয়া, সবখান থেকেই উঠেছে এমন প্রশ্ন পরিচালক রায়হান রাফীর ‘বিশেষ বান্ধবী’ বলেই নিশোর নায়িকা হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন তমা, যা একদিকে যেমন একজন অভিনেত্রীর সামর্থ্যের প্রতি অবজ্ঞার শামিল, তেমনি সেই অভিনেত্রীর জন্য এটা বেশ বিব্রতকরও। তবে এসব প্রশ্নের মুখে মাথা ঠান্ডা রেখেই নিজের কাজটা করে গেছেন তমা। শুধু তমাই নন, পরিচালক রাফী ও অভিনেতা নিশোকেও এই প্রশ্ন শুনতে হয়েছে। জবাবে দুজনই বারবার বলেছেন, ‘তমা ভালো অভিনেত্রী। গল্প ও চরিত্রের প্রয়োজনেই তাকে সিনেমায় নেওয়া হয়েছে। কোনো বিশেষ কারণে নয়। সিনেমাটি দেখলেই দর্শক সেই প্রমাণ পাবেন।’ ঈদে সুড়ঙ্গ মুক্তির পর রাফী ও নিশোর কথাই সত্যি হলো। সিনেমাটির প্রাণ বলা যায় এর গল্প ও ঝকঝকে নির্মাণশৈলীকে। এরপরই এ সিনেমার সবচেয়ে বড় শক্তি হিসেবে উল্লেখ করা যায় আফরান নিশো, শহীদুজ্জামান সেলিম ও তমা মির্জার অভিনয়কে। সিনেমায় তমা যে চরিত্রটি করেছেন তার নাম ময়না। নায়িকা হয়েও সে যেন খল নায়িকা। লোভ, বিলাসিতা, প্রেম নিয়ে প্রতারণায় পটু রহস্যময় ময়না চমকে দিয়েছে পর্দায় দর্শককে। আর এই চমক আদতে তমা মির্জার। তিনি সুনিপুণ অভিনয় করে বুঝিয়ে দিয়েছেন পরিচালকের বান্ধবী কোটায় নয়, সুড়ঙ্গ সিনেমার ময়না হিসেবে তিনি যথার্থই পারফেক্ট। অনেকে সিনেমাটি দেখে ময়নার চরিত্র নিয়ে আলাদা করে কথা বলেছেন। কেউ কেউ পরিচালককে কাঠগড়ায় তুলেছেন ময়না চরিত্র দিয়ে নারীদের নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে। আর এসব আলোচনা-সমালোচনার মূলে তমার নিখুঁত অভিনয়ই। তিনি সত্যিকার অর্থেই পর্দায় ময়না হয়ে উঠতে পেরেছেন। আর পর্দার বাইরেও ময়নাই একমাত্র নারী চরিত্র, যেটি এবারের ঈদের পাঁচটি সিনেমার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিচিত ও চর্চিত। 

একইভাবে শাকিব খানের নায়িকা হয়ে নেতিবাচক আলোচনার কেন্দ্রে ছিলেন কলকাতার মেয়ে ইধিকা পালও। হঠাৎ করেই জানা যায় বহুল আলোচিত ‘প্রিয়তমা’ সিনেমার নায়িকা হিসেবে তার নামটি। তখনই অনেকে বলেছিলেন, এই পছন্দটা ভুল করেছেন পরিচালক হিমেল আশরাফ। দেশে এত নায়িকা রেখে কেন কলকাতার অভিনেত্রীকে বেছে নিলেন এমন প্রশ্ন উঠেছিল। সেটাও আবার যার সিনেমায় কাজের কোনো অভিজ্ঞতা নেই। পর্দায় শাকিব খানের মতো সুপারস্টারের প্রিয়তমা হয়ে ইধিকা কী পারবেন নিজেকে মেলে ধরতে, সেই সন্দেহও প্রকাশ করেছেন অনেকে। কেউ কেউ এমনটাও বলেছেন, দেশের নায়িকারা শাকিবের প্রিয়তমা হতে রাজি নন, তাই নাকি কলকাতা থেকে কম পরিচিত নায়িকা বাছাই করা হয়েছে। তবে দিনশেষে সব সমালোচনাই ফিকে হয়ে গেছে ইধিকার অভিনয়ের সামনে। তিনি প্রমাণ করে দিয়েছেন অন্য যেকোনো নায়িকার চেয়ে শাকিবের প্রিয়তমা হিসেবে তিনি ভুল নির্বাচন ছিলেন না। ছবিতে তার অভিনয় দর্শককে রোমান্টিক করেছে, হাসিয়েছে এবং কাঁদিয়েছেও অনায়াসে। শাকিব খানের মতো তারকার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করে গেছেন সিনেমায় নবাগতা ইধিকা। কেউ কেউ তো সিনেমার অন্য সব চরিত্রের চেয়ে ইধিকার চরিত্রটিকেই বেশি এগিয়ে রেখেছেন অভিনয় ও অভিব্যক্তি প্রকাশের বিচারে। যার ফলে শাকিব খানের অনস্ক্রিন প্রিয়তমা এখন অফস্ক্রিনে সবার প্রিয়তমা হয়ে উঠেছেন। দুই বাংলায়ই তাকে নিয়ে হচ্ছে চর্চা, প্রশংসা। অনেকে মনে করছেন, শাকিবের প্রিয়তমা কে হবেন সে নিয়ে আলোচনা ছিল তুঙ্গে। সবাই কিছু চেনা মুখ ভেবে রেখেছিলেন। কিন্তু পর্দায় চেনা মুখগুলোর বাইরে অচেনা মুখকে প্রিয়তমা হিসেবে পেয়ে দর্শক চমক পেয়েছেন, মুগ্ধ হয়েছেন। সমালোচনা জয় করে এই সাফল্যকে উপভোগ করছেন ইধিকা। তিনি কলকাতা থেকে মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি কোনো কিছুর জবাব দিয়েছি সেটা বলতে চাই না। আমার জন্য ‘প্রিয়তমা’ এখন পর্যন্ত ক্যারিয়ারের সেরা চ্যালেঞ্জ ছিল। প্রথমত, এটি আমার প্রথম সিনেমা, তার ওপর বিদেশের মাটিতে প্রথম কাজ। সেখানে আবার নায়ক সুপারস্টার শাকিব খানের বিপরীতে কাজের চাপ। সবকিছু মিলে আমি বলব পাহাড় সমান চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজটি করেছি। এখন যখন সবাই প্রশংসা করছেন ভালো লাগছে। চারদিকে এত প্রশংসা, সবাই প্রিয়তমা বলে ডাকছেন।’

এ বিষয়ে শবনম বুবলী বলেন, ‘আমি সমালোচনাকে নেতিবাচকভাবে দেখি না। বরং সমালোচনাগুলোই আমাকে নিখুঁত হতে সাহায্য করে। আমার ত্রুটিগুলো থেকেই আমি নিজেকে পারফেক্ট করে তুলি। আমি দর্শকদের কাছে কৃতজ্ঞ। তাদের জন্যই দিনশেষে সব সাফল্যের দেখা মেলে। তারা ‘প্রহেলিকা’ ও ‘ক্যাসিনো’ নিয়ে যে ভালোবাসা দেখিয়েছেন, সেটা অসাধারণ। তারাই সব সমালোচনার জবাব দিয়ে দিলেন। আমি চেষ্টা করেছি ভালো কাজের। ভবিষ্যতেও সেটা অব্যাহত থাকবে।’

তমা মির্জাও দর্শকের কাছে কৃতজ্ঞ তার ময়না চরিত্রটিকে ভালোবাসা দেওয়ার জন্য। তিনি বলেন, ‘আমি জানি, বারবার নিজেকে প্রমাণ করার পরও সমালোচনা চলবেই। আসলে সমালোচনাও কাজের একটি অংশ বলে মনে করি আমি। দিনশেষে কাজ দিয়েই তাকে জয় করতে হয়। আমি ময়না চরিত্রটিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। অনেক পরিশ্রম করেছি চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলতে। আমি জানি, এখানে আমাকে নিশো ভাইসহ অনেক বড় মাপের শিল্পীদের সঙ্গে অভিনয় করতে হবে। তাই নিজের অভিনয়টাতে গুরুত্ব দিয়েছি। সেটার ফল পেয়েছি। সবার মুখে মুখে এখন সুড়ঙ্গ সিনেমার মাসুদের ভালোবাসার ময়না।’

মুক্তির প্রথম সপ্তাহে সারা দেশে চলছে বুবলীর প্রহেলিকা, ক্যাসিনো, তমা মির্জার সুড়ঙ্গ ও ইধিকা পালের প্রিয়তমা। এখনও সিনেমাগুলো ভালো সাড়া পাচ্ছে। বিভিন্ন হলে অনেক শো যাচ্ছে হাউসফুল। এই চিত্র দেখে সিনেমা নিয়ে আবারও আশাবাদী হয়ে উঠেছেন সবাই। বাংলাদেশের সিনেমা শিল্পে আবারও সুদিন এলো বলে।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা