সৌম্য প্রীতম
প্রকাশ : ০৮ জুন ২০২৩ ১১:৫১ এএম
আপডেট : ০৮ জুন ২০২৩ ১১:৫১ এএম
বাবা ছিলেন বিমানবাহিনীর অফিসার। ফলে ছোটবেলা থেকেই সুশৃঙ্খল, নিয়মের মধ্যে বেড়ে উঠেছেন। সাতসকালে উঠে নাশতা করে ক্লাস। সারা দিন ক্লাস, পড়াশোনার ভেতর কাটত। বিকালে মাঠে যাওয়ার সুযোগ ছিল। সন্ধ্যায় নামাজ পড়ে পড়তে বসতেন। এই রুটিনেই কেটেছে জীবনের বড় একটা সময়। কড়া শাসনে বেড়ে ওঠা সেই ছেলেটিই এখন শোবিজের প্রিয়মুখ নিরব হোসেন। নিজেকে তিনি প্রতিষ্ঠিত করেছেন চিত্রনায়ক হিসেবে। ১৬ জুন মুক্তি পাবে তার অভিনীত সরকারি অনুদানের ‘ফিরে দেখা’ সিনেমা। ঈদে মুক্তির অপেক্ষায় থাকা ‘ক্যাসিনো’ সিনেমার টিজার প্রকাশ হবে আজ। এ দুটি সিনেমা নিয়ে প্রতিদিনের বাংলাদেশের মুখোমুখি হলেন তিনি। লিখেছেন সৌম্য প্রীতম...
ফিরে দেখা সিনেমাটি নিয়ে আপনি কতটা আত্মবিশ্বাসী?
আমার আত্মবিশ্বাসটা অনেক। আমাদের কিংবদন্তি অভিনেত্রী রোজিনা আপা খুবই চমৎকার একটি গল্প বাছাই করেছেন সিনেমাটির জন্য। খুব মনোযোগ দিয়ে সিনেমাটি তিনি তৈরি করেছেন। আমি তার প্রতি কৃতজ্ঞ, তিনি আমাকে তার পরিচালিত প্রথম সিনেমায় সুযোগ করে দিয়েছেন। এই সিনেমাটিতে তিনি নিজেও অভিনয় করেছেন। আরেক কিংবদন্তি ইলিয়াস কাঞ্চন ভাইকেও পেয়েছি সঙ্গে। একটা স্বপ্নের যাত্রা বলা চলে। কাঞ্চন-রোজিনা জুটি অনেক হিট ও সফল সিনেমা উপহার দিয়েছেন। তাদের সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করাটা আমার জন্য আনন্দের। পাশাপাশি স্পর্শিয়া আছে আমার বিপরীতে। আমাদের জুটিও দর্শকের ভালো লাগবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
পরিচালক রোজিনার সঙ্গে আপনার কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?
এটা খুবই অদ্ভুত ব্যাপার যে তিনি একজন গুণী অভিনেত্রী এবং একইভাবে একজন পাকা নির্মাতাও। মনেই হয়নি তিনি প্রথম সিনেমা নির্মাণ করছেন। দারুণ একটা টিম তিনি তৈরি করেছিলেন। সবকিছু ছিল গোছানো। আমি ছবির নায়ক এই বিষয়টি তিনি খুব আলাদাভাবে টেক কেয়ার করেছেন। কখনও কখনও আমি লজ্জা পেতাম আপার আদর-যত্নে। আমি চাই, রোজিনা আপা পরিচালনায় নিয়মিত হবেন। তার কাজের মুন্সিয়ানার ছাপ ‘ফিরে দেখা’ ছবিটি দেখলেই পাবেন দর্শক।
এ সিনেমায় আপনার চরিত্রটি কেমন?
চরিত্রের নাম আমিন। বেশ শক্তিশালী একটা চরিত্র। একজন মুক্তিযোদ্ধা। এই প্রথম কোনো চলচ্চিত্রে মুক্তিযোদ্ধার চরিত্রে অভিনয় করলাম। এটি আমার আবেগের চরিত্র। ১৯৭১ সালে একজন যুবকের জীবনযাপন কেমন ছিল, সেটা নিয়ে স্টাডি করেছি অনেক। অন্য একটি সিনেমার জন্য আমার চুল লম্বা ছিল। কিন্তু আমিন চরিত্রটির জন্য চুল ফেলে দিয়েছিলাম আমি। লুঙ্গি ও হাফ হাতার সাদা টি-গেঞ্জি পরেছি। রোজিনা আপা আমার প্রস্তুতি দেখে খুব খুশি হয়েছিলেন। আমি চেষ্টা করেছি নিজের সবটুকু দিয়ে পর্দায় আমিন হয়ে উঠতে। কতটা পারলাম সেই রায় দেবেন দর্শক। আশা করি, তারা নিরাশ হবেন না। শুধু আমার চরিত্রই নয়, পুরো সিনেমাটি দর্শকের মন ছুঁয়ে যাবে।
ফিরে দেখা সিনেমার শুটিং হয়েছে আপনার জন্মভিটা রাজবাড়ীতে। নিজ এলাকায় কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?
এটা আসলে বলে বোঝাতে পারব না। এই প্রথম নিজের এলাকায় শুটিং করা হলো। সেই সঙ্গে সিনেমাটির গল্পও রাজবাড়ীর ঘটনাকে কেন্দ্র করে। আমি আসলে তিনটি কারণে এই সিনেমায় অভিনয় করেছি। তার প্রথমটি হলো এটি রোজিনা আপার সিনেমা। তার পর এটি অনুদানের সিনেমা এবং এর গল্প ও শুটিংয়ে রাজবাড়ী মিশে আছে। খুব এনজয় করেছি আমি শুটিংয়ে। আমার বাবা-মা কেউ পৃথিবীতে নেই। তাদের দুজনেরই কবর রাজবাড়ীতে। এটা নিয়ে আলাদা একটা ইমোশন কাজ করেছে। আমি প্রথম রাজবাড়ীতে শুটিং করলাম, কিন্তু তারা কেউ নেই।
অনেক আগে শুটিং করেছিলেন ক্যাসিনো সিনেমার। অবশেষে ঈদে মুক্তি পেতে যাচ্ছে। চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত তো?
প্রতিটি সিনেমাই একেকটি চ্যালেঞ্জ। সে জায়গা থেকে ঈদে সিনেমা মুক্তি পেলে চ্যালেঞ্জটা একটু বেশিই নিতে হয়। আমি তৈরি। এখন পর্যন্ত জানি ক্যাসিনো ঈদে আসবে। এটি অ্যাকশন ঘরানার সিনেমা। এখনকার দর্শক এ ধরনের সিনেমা দেখতে পছন্দ করেন। সৈকত নাসিরের পরিচালনায় শবনম বুবলীর সঙ্গে এতে কাজ করেছি। সিনেমাটির বাজেট ও নির্মাণের যে মান, সেদিক থেকে এটি ঈদের জন্য উপযুক্ত। আজ এর টিজার আসবে। আমার বিশ্বাস, টিজারেই একটা আলোচনা তৈরি হবে। সিনেমাপ্রেমীদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি করবে ক্যাসিনো।
মডেল থেকে সিনেমার নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেলেন। কিন্তু দেশের মানুষ নিরবকে চিনেছিল ‘বাংলালিংক দেশ’-এর বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে। আপনাকে অনেকদিন প্রতিষ্ঠানটির বিজ্ঞাপনে দেখা যায় না। বলা চলে বিজ্ঞাপনেই খুব কম দেখা যায়। কেন?
২০০৪ সালে অমিতাভ রেজার পরিচালনায় একটি কফি কোম্পানির বিজ্ঞাপন দিয়েই আসলে আমার উত্থান, আমি মনে করি। ‘দু টাকা দে, জাগিয়ে দিচ্ছি’ শিরোনামের সেই বিজ্ঞাপন আমার শোবিজ জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। এর পর বাংলালিংক দেশের কাজটি করেছি অমিতাভ রেজা ভাইয়ের পরিচালনাতেই। সেটি দিয়ে রাতারাতি দেশের আনাচেকানাচে ছড়িয়ে পড়ল আমার নাম। সেই সময়গুলো খুব মিস করি। এখন কাজ করা হয় না অনেক কারণেই। বিজ্ঞাপন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর স্ট্রাটেজি বদলে গেছে। তারা আর আগের মতো করে ভাবছেন না। বিজ্ঞাপনও আর আগের মতো করে নির্মাণ হচ্ছে না। তেমন আলোচনাও হয় না আগের মতো। তাই আগ্রহ কম আমার। বিজ্ঞাপনের যে একটা জৌলুস ছিল, ইন্ডাস্ট্রি ছিল সেটা এখন আর দেখি না আমি। এক সময় বিজ্ঞাপন থেকে প্রচুর মডেল তৈরি হয়েছে। তারা শোবিজে নিয়মিত হয়েছে। কিন্তু লক্ষ করে দেখবেন, সেই ২০১৩-১৪ সালের পরে আর উল্লেখ করার মতো মডেলের জন্ম হয়নি। এখন মডেল হচ্ছেন ক্রিকেটাররাই। বিগ বাজেটের বিজ্ঞাপনগুলোতে তাদেরকেই বেশি দেখা যায়।