প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০২ মে ২০২৩ ১৪:৪৫ পিএম
কিংবদন্তি চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায়ের ১০২তম জন্মদিন। ১৯২১ সালের এই দিনটিতে জন্মগ্রহণ করেন ক্ষণজন্মা এই চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব। কলকাতায় জন্ম হলেও তার পৈত্রিক নিবাস কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদি উপজেলার মসুয়া গ্রামে। উপেন্দ্রকিশোরের ছেলে সুকুমার রায় ছিলেন বাংলা সাহিত্য জনক ও শিশু সাহিত্যের সেরা লেখকদের একজন। দক্ষ চিত্রকর ও সমালোচক হিসেবেও সুকুমারের খ্যাতি ছিল। তারই সুযোগ্য একমাত্র সন্তান সত্যজিৎ রায়।
প্রেসিডেন্সি কলেজ ও শান্তিনিকেতনে পড়াশোনা করেন সত্যজিৎ রায়। চলচ্চিত্র নির্মাণের স্বপ্ন ছিল তার। সে স্বপ্ন হাজারো ডানা পেতে শুরু করে ১৯৪৯ সালে ফ্রেন্স পরিচালক জঁ রনোয়ার সঙ্গে পরিচয়ের পর। সেব বছর ফরাসী পরিচালক জঁ রনোয়ার তার ‘দি রিভার’ চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের জন্য কলকাতায় আসেন। আর ওই সময়ই তার সঙ্গে পরিচয় হওয়ার সুযোগ ঘটে সত্যজিতের। সাক্ষাতে সত্যজিৎ রনোয়ারের সঙ্গে ‘পথের পাঁচালী’র চলচ্চিত্রায়ণ নিয়ে কথা বলেন। তার সিনেমা নির্মাণের পরিকল্পনা শুনে রনোয়ার তাকে এগিয়ে যেতে উৎসাহ দেন। তার ৬ বছর পরই ১৯৫৫ সালে সত্যজিৎ নির্মাণ করেন তার প্রথম ছবি ‘পথের পাঁচালী’।
প্রথম ছবিতেই ছক্কা হাঁকান খ্যাতিমান এ নির্মাতা। সিনেমাটি ১১টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করে, যার মধ্যে অন্যতম ছিল কান চলচ্চিত্র উৎসবে ‘বেস্ট ডকুমেন্টরি ফিল্ম’ অর্জন।
চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে খ্যাতি অর্জন করলেও সাহিত্য, চিত্রকলা, নাটক আর সংগীত বিষয়েও প্রতিভার দ্যুতি ছড়িয়েছেন সত্যজিৎ রায়। বাংলা সাহিত্যেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন তিনি। সৃষ্টি করেছেন ফেলুদা আর প্রফেসর শঙ্কুর মতো অবিস্মরণীয় চরিত্র।
ডকুমেন্টারি ফিল্ম, শর্ট ফিল্ম, ফিচার ফিল্মসহ সত্যজিৎ রায় পরিচালনা করেছেন মোট ৩৭টি ছবি। ৩৭ বছরের কর্মজীবনে তিনি নির্মাণ করেন অপুর সংসার, পরশপাথর, জলসাঘর, কাঞ্চনজঙ্ঘা, চারুলতা, দেবী, মহানগর, অভিযান, কাপুরুষ, মহাপুরুষ, গুপী গাইন বাঘা বাইন, প্রতিদ্বন্দ্বী, সীমাবদ্ধ, জনারণ্য, হীরক রাজার দেশ, গণশত্রু, আগন্তুক, শাখা প্রশাখা, সোনার কেল্লা, জয়বাবা ফেলুনাথ প্রভৃতি চলচ্চিত্র।
১৯৮৩ সালে ঘরে বাইরে ছবির কাজ করার সময় সত্যজিত রায় হার্ট অ্যাটাক হয়। এরপর থেকে তার কাজের গতি অনেকটাই কমে যায়। এরপর ১৯৯২ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সত্যজিৎ রায় হাসপাতালে ভর্তি হন। অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালের বিছানায় কাটে তার শেষ দিনগুলো।
১৯৯২ সালের ২৩ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন এই মহান চলচ্চিত্রকার। মৃত্যুর মাত্র একসপ্তাহ আগে সত্যজিৎ রায় পান বিশ্ব চলচ্চিত্রের সর্বোচ্চ সন্মানজনক অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড (অস্কার)।
এ ছাড়াও জীবদ্দশায় তিনি অর্জন করেন ৩২টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার। সত্যজিৎ রায়ের প্রাপ্ত পুরস্কারের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হচ্ছে পদ্মশ্রী (১৯৬৫), পদ্মভূষণ (১৯৬৭), ম্যাগসেসে পুরস্কার (১৯৭১), Star of Yugoslavia (১৯৭৩), Doctor of Letters(১৯৭৪), D. Litt.(১৯৭৬), পদ্মবিভূষন(১৯৭৮), D. Litt., Special Award, Berlin Film Festival, Deshikottam, Visva-Bharati University, India (১৯৭৯), Special Award, Moscow Film Festival (১৯৮০), বিদ্যাসাগর পুরস্কার (১৯৮২), Fellowship, The British Film Institute (১৯৮২), দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার (১৯৮৫), অস্কার (১৯৯২), ভারতরত্ন (১৯৯২)।