প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩১ মার্চ ২০২৩ ১৪:৩২ পিএম
আপডেট : ৩১ মার্চ ২০২৩ ১৪:৩৩ পিএম
কী চমৎকার করে হাসতেন। টোল পড়া গালে তিলোত্তমা অভিনেত্রীকে হাসলেই যেন অপ্সরীর মতো দেখাত। সঙ্গে ছিল সাবলীল অভিনয়ের ক্ষমতা। মাতিয়েছিলেন তিনি ঢাকাই সিনেমার দর্শককে। বলছি চলচ্চিত্রের সোনালি দিনের নায়িকা পারভীন সুলতানা দিতির কথা। আজ তার জন্মদিন।
২০১৫ সালের ৩১ মার্চ দিতি সর্বশেষ তার পরিবারের এবং চলচ্চিত্র পরিবারের বেশকিছু তারকাদের সঙ্গে নিয়ে নিজের জন্মদিন উদযাপন করেছিলেন। সে বছরেরই ২৪ জুলাই দিতি অসুস্থ হয়ে ভারতের চেন্নাই যান। কিন্তু চিকিৎসা করালেও পরবর্তী সময়ে তিনি আর সুস্থ হতে পারেননি। রোগে ভুগে দিতি ২০১৬ সালের ২০ মার্চ পরপারে চলে যান। গেল ২০ মার্চ ছিল দিতির সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৭ সালে ‘শিল্পী সমিতি’র তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট ওমরসানী, সাধারণ সম্পাদক অমিত হাসান’র উদ্যোগে দিতির প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে ‘শিল্পী হৃদয়ে দিতি’ শীর্ষক আলোচনা সভা এবং পরবর্তী সময়ে মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এরপর দিতিকে নিয়ে আর তেমন কোনো বিশেষ মিলাদ মাহফিল ও আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়নি। তবে ভক্তরা তাকে চিরকাল ভালোবাসবেন একজন অভিনেত্রী হিসেবে।
আজ জন্মদিন উপলক্ষে মায়ের জন্য দোয়া চেয়েছেন দিতির ছেলে দীপ্ত এবং মেয়ে লামিয়া।
ঢালিউড কাঁপানো দিতি ১৯৬৫ সালের ৩১ মার্চ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে জন্মগ্রহণ করেন। খুব ছোটবেলা থেকেই দিতি গানের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। ছোটেবলায়ই তিনি শিশু একাডেমি আয়োজিত প্রতিযোগিতায় জাতীয়ভাবে পুরস্কৃত হন। যে কারণে নায়িকা হওয়ারও অনেক আগে গায়িকা হওয়ারই ইচ্ছা ছিল তার। বিটিভিতে একদিন গান গাওয়ার পর চোখে পড়ল আল মনসুরের। তিনি দিতিকে খুঁজে বের করে মানস বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিপরীতে ‘লাইলী মজনু’ নাটকে কাস্ট করেন। নাটকটি প্রচারের পর দর্শক মহলে ব্যাপক সাড়া ফেলে। এরপর ১৯৮৪ সালে নতুন মুখের সন্ধানের মাধ্যমে দেশীয় চলচ্চিত্রে দিতির সম্পৃক্ততা ঘটে। তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র উদয়ন চৌধুরী পরিচালিত ‘ডাক দিয়ে যাই’। কিন্তু ছবিটি শেষ পর্যন্ত মুক্তি পায়নি। দিতি অভিনীত মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্র ছিল ‘আমিই ওস্তাদ’। ছবিটি পরিচালনা করেছেন আজমল হুদা মিঠু। এরপর দিতি দুই শতাধিক ছবিতে কাজ করেছেন। সুভাষ দত্ত পরিচালিত ‘স্বামী স্ত্রী’ ছবিতে দিতি আলমগীরের স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেন। এই ছবিতেই অভিনয় করে দিতি প্রথমবারের মতো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে দিতি আকাশ ছোঁয়া জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন ইলিয়াস কাঞ্চনের সঙ্গে জুটি বেঁধে।
নায়িকা হয়েও গানের প্রতি অনুরাগ মরেনি দিতির। তিনি গান করেছেন। অনুপমের ব্যানারে দিতির গানের প্রথম একক অ্যালবাম ‘তোমার ও চোখে’ বাজারে আসে। এরপর মাঝে দু-একটি চলচ্চিত্রে প্লে-ব্যাক করলেও আর কোনো অ্যালবাম করা হয়ে ওঠেনি। দীর্ঘদিন পর ২০১১ সালে লেজার ভিশনের ব্যানারে বাজারে আসে দিতির দ্বিতীয় একক অ্যালবাম ‘ফিরে যেন আসি’। এই অ্যালবামটিও বেশ সফলতা পায়।
ব্যক্তি জীবনে তিনি ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীকে। সেই সংসারে সাফায়েত নামের এক ছেলে ও লামিয়া নামের এক মেয়ে রয়েছে দিতির। এরপর চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের সঙ্গে সংসার পাতেন তিনি। সেই সংসার খুব বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। শেষ জীবনে নাটক নির্মাণে নাম লেখান দিতি। নাটকের অভিনয়েও নিয়মিত ছিলেন। কিন্তু অকালমৃত্যু তাকে নিয়ে গেল পৃথিবীর বাইরে। যেখানেই থাকুন শান্তিতে থাকবেন প্রিয় অভিনেত্রীÑ এই প্রত্যাশা তার কোটি কোটি ভক্তের।