বিনোদন প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৬:৫২ পিএম
আপডেট : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২০:০৮ পিএম
আর দশটা সাদামাটা যুবকের মতোই তিনি। তবে আলাদা এটুকুতে--চলনে বলনে তিনি সিনেমাকে লালন করতেন। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার ভাবনার বিষয়। টঙ্গী রেলস্টেশন দেখে দেখে বেড়ে ওঠা যুবকের বিশেষ দুর্বলতা রেললাইন ঘিরে বৈচিত্র্যময় মানুষের জীবনযাপনের প্রতি৷ যাই দেখতেন তাতেই সিনেমার দৃশ্য কল্পনা করতেন।
একটা সময় বুকের ভেতর লালন করা সেই স্বপ্নটাকে বাস্তবে রূপ দিতে চাইলেন। নেমেও গেলেন কাঁধে ক্যামেরা নিয়ে। কিন্তু বাধ সাধল অর্থায়ন৷ কথায় বলে, ভালো কাজ আটকে থাকে না। ‘আদিম’ সিনেমা দিয়ে মস্কো জয় করে ফেরা স্বপ্নবাজ যুবক যুবরাজ শামীমও আটকাননি।
গণ-অর্থায়নে নির্মাণ করে ফেলেছেন সিনেমা। তার সিনেমার শিল্পী অল্প কজন--বাদশা, দুলাল, সোহাগী ও সাদেক। তাদের নিয়েই এখানে ওখানে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন৷ লোকজন অবজ্ঞার চোখে তাকায়। নানাভাবে হেয় করে। এমন চালচুলোহীন সিনেমার পরিচালক ও সাদামাটা সিনেমার শিল্পী দেখে তারা অভ্যস্ত নন। তাদের ধারণায় 'কাজ নেই অকাজ করছেন শামীমরা'। সিনেমাটা করতে গিয়ে চেনা-অচেনা মানুষদের কাছে এসব তাচ্ছিল্য ছাড়া আর কিছুই জোটেনি৷
আজ মস্কো জয়ের পর সেই মানুষের ভাবনাগুলো বদলে গেছে৷ যারা একদিন অবজ্ঞা ও অবহেলায় পাশ কাটাতেন, শামীমদের সিনেমা বিটিভির পেছনে দেখা যাবে বলে টিপ্পনি কাটতেন, তাদের সবার আগ্রহ এখন যুবরাজ শামীম ও তার সিনেমা নিয়ে। তার সিনেমার শিল্পীরাও চেনা গণ্ডি হয়ে উঠেছেন বিশেষ কেউ। সবাই আগ বাড়িয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন, ছবিটা কোথায় দেখা যাবে জানতে চাইছেন। এসব উপভোগ করছেন তারা।
আজ ৮ সেপ্টেম্বর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত ফিল্ম আর্কাইভের সেমিনার হলে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিজ্ঞতার কথাই তুলে ধরলেন ‘আদিম’ ছবির পরিচালক ও শিল্পীরা।
‘আদিম’ ছবিটি মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের ৪৪তম আসরে জিতে নিয়েছে ‘নেটপ্যাক জুরি অ্যাওয়ার্ড’। এই পুরস্কার নিতে মস্কোতে হাজির ছিলেন বাংলা সিনেমার নতুন যুবরাজ। সেখানে যাওয়া-আসা এবং পুরস্কার জয়ের অভিজ্ঞতা জানাতেই আজ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন যুবরাজ শামীম।
তিনি বলেন, ‘আজ আমরা একত্র হয়েছি আমার মস্কো ঘুরে আসা সম্পর্কে অভিজ্ঞতা জানাতে। আপনাদের ধন্যবাদ জানাতে, যারা বিশ্বাস করে আমার পাশে ছিলেন। আমার শিল্পীরা, আমার প্রযোজকেরা, আমার প্রিয় মিডিয়ার ভাইবোনেরা; সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
‘পাঁচটা বছর অনেক বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দোলায় দুলেছি। যখন মস্কো থেকে আমন্ত্রণ পেলাম--মনে হলো কিছু একটা করতে পেরেছি৷ তবে আমি ভাবিনি সেখানে পুরস্কার পাব, আমার ছবিটি প্রশংসিত হবে। আজ আমার সব পরিশ্রম, কষ্ট সার্থক।’
যুবরাজ শামীম জানান, তার ছবির নির্মাণ বাজেট প্রায় ১৫ লাখ। তবে এর মধ্যে পরিচালক, শিল্পী, এডিটিং ব্যয়সহ আনুষঙ্গিক অনেক কিছুই অন্তর্ভুক্ত নয়।
ছবির শিল্পীরাও আনন্দে আত্মহারা--তাদের ছবি বিদেশে পুরস্কার পাওয়ায়। অনেকটা আবেগপ্রবণও আজ কথা বলতে গিয়ে। বারবার তাদের মনে পড়ছে শুটিং চলাকালীন নানাজনের নানা রকম কটুকথা। সব ভুলে আজ তারা তাদের ক্যাপ্টেন যুবরাজ শামীমের কাছে কৃতজ্ঞ। আরও অনেক ভালো কাজের সুযোগ চান।
প্রসঙ্গত, টঙ্গীর একটি বস্তিতে হয়েছে ‘আদিম’-এর শুটিং। ছবির কাহিনিও বস্তিকে কেন্দ্র করেই। ছবির চরিত্ররাও বস্তিতেই বাস করেন। গণ-অর্থায়নে নির্মাতার নিজস্ব প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘রসায়ন’-এর ব্যানারে নির্মিত এবং সহপ্রযোজক হিসেবে সিনেমাকার ও লোটাস ফিল্ম যুক্ত আছেন।
‘আদিম’-এর বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন বাদশা, দুলাল, সোহাগী, সাদেক প্রমুখ। চলচ্চিত্রটির চিত্রগ্রহণে ছিলেন আমির হামযা এবং সাউন্ড ও কালার করেছেন সুজন মাহমুদ।
প্রবা/এলএ/এমআই