প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৯ মার্চ ২০২৩ ০১:৩৪ এএম
আপডেট : ১৯ মার্চ ২০২৩ ০১:৫০ এএম
‘অপারেশন অগ্নিপথ’ সিনেমার একজন প্রযোজক রহমত উল্লাহ। তিনি ছবির নায়ক শাকিব খানের বিরুদ্ধে শিডিউল ফাঁসানো এবং এক নারী সহকারী প্রযোজককে ধর্ষণের অভিযোগ এনেছেন। ১৫ মার্চ এই প্রযোজক এফডিসির তিন সমিতি বরাবর লিখত অভিযোগ এনেছেন।
অভিযোগের পর ১৬ মার্চ বিকেলে প্রযোজক সমিতির সাবেক সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু এবং ওই প্রযোজককে নিয়ে সমঝোতার জন্য বৈঠকে বসেন শাকিব। ঘণ্টাব্যাপী সেই আলোচনায় কোনো সমাধান আসেনি।
তাই সেই প্রযোজকের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শাকিব খান। ১৮ মার্চ রাতে তিনি গুলশান থানায় মামলা করতে যান। প্রায় দুই ঘণ্টা বসে থেকে মামলা না করেই ফিরেছেন তিনি।
জানা গেল, ১৮ মার্চ রাত ১১টার দিকে ওই প্রযোজকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করতে গুলশান থানায় যান শাকিব। তবে তার অভিযোগপত্রে ত্রুটি থাকায় মামলা নেয়নি পুলিশ। তারা শাকিবকে কোর্টে গিয়ে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছেন।
আজকালের মধ্যেই কোর্টে গিয়ে শাকিব মামলা করবেন বলে জানা গেল।
এদিকে শাকিব খান মামলা করতে যাচ্ছেন বলে গণমাধ্যমকর্মীদের গুলশান থানায় ডেকে নেন। সেখানে সাংবাদিকদের অপেক্ষার প্রায় দুইঘণ্টা পর ১১টার দিকে পৌছান শাকিব। এরপর থানার ভেতরে দীর্ঘক্ষণ অবস্থানের পর সাংবাদিকের সামনে কথা বলতে আসেন শাকিব। এসে বলেন, ‘আমাদের সাথে প্রথমে কোনো ক্রাইম হলে প্রথমেই আমরা থানায় যাবো। থানায় যদি সেটা না নেওয়ার মত হয় অন্য কোথাও যাওয়ার পরামর্শ দেন আমরা সেখানে যাবো। থানায় আমার সাথে সেই বিষয়েই আলোচনা হচ্ছে।
গণমাধ্যমকর্মীরাও অপেক্ষা করতে থাকেন। এরপর মামলা না করতে পেরে রাত ১টা ১৫ মিনিটের দিকে বেরিয়ে আসেন শাকিব।
জানা গেছে, মামলা না করতে পারলেও একটি সাধারণ ডায়েরি লিপিবদ্ধ করেছেন শাকিব খান।
এর আগে শাকিবের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগে রহমত উল্লাহ লেখেন, ‘তিনি (শাকিব খান) আমাদের একজন নারী সহপ্রযোজককে কৌশলে ধর্ষণ করেন। নির্যাতিতা নিজেও একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নারী। এ ব্যাপারে অস্ট্রেলিয়া পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন তিনি। আমি সেই ফৌজদারি অভিযোগের সাক্ষী ছিলাম। এ ঘটনার পর তিনি ও তার পরিবার সামাজিকভাবে যে গ্লানি এবং কুৎসার শিকার হন, তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। ধর্ষণের বিচার চাইতে গিয়ে একটা পর্যায়ে তার নিজের ও তার পরিবারের টিকে থাকাটাই অসম্ভব হয়ে পড়ে।'
সেই ঘটনার মধ্যে শাকিব খান কৌশলে অস্ট্রেলিয়া থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসেন বলে দাবি করেছেন ওই প্রযোজক। ২০১৮ সালে আবারও অস্ট্রেলিয়ায় গেলে শাকিব খানকে পুলিশ গ্রেপ্তারও করেছিল বলে দাবি করেন রহমত উল্ল্যাহ। তার ভাষ্যে, ২০১৮ সালে তিনি আবার অস্ট্রেলিয়ায় এলে ধর্ষণের অভিযোগে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। সামাজিক চাপে এবং আরও নিগ্রহের ভয়ে নির্যাতিতা প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি না হওয়ায় শাকিব সেই যাত্রায় ছাড়া পেয়ে যান।
অভিযোগে রহমত উল্লাহ লিখেছেন, ‘দুটি ভিন্ন দেশের আদালতে আইনি এখতিয়ারের সীমাবদ্ধতার কারণে ধর্ষণের বিচার হয়তো বিচারিক আদালতে সম্ভব হবে না। অর্থ, স্বপ্ন ও সম্মান- সব হারিয়ে আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। আপনি এর দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেবেন, এই প্রত্যাশা রইল।’
ধর্ষণ ছাড়াও তার অপেশাদার আচরণের কারণে সিনেমার নির্মাণ ব্যয় বেড়ে গিয়েছিল বলে জানান রহমত উল্লাহ।
১৫ মার্চ অভিযোগের পর ১৬ মার্চ বিষয়টির সমঝোতা করতে উদ্যোগ নেন শাকিব খান। সেদিন প্রযোজক গণমাধ্যমে বলেন, 'শাকিব নিজেই উদ্যোগী হয়ে মীমাংসায় বসেন। কিন্তু ঘটনার এখনো কোনো মীমাংসা হয়নি। তবে শাকিব আমাকে আলোচনার মাধ্যমে আশ্বাস দিয়েছেন, হয়তো তিনি ছবি করে দেবেন অথবা তিনি বিনিয়োগ করা টাকা ফেরত দেবেন। তখন আমি তাকে বলেছি, অনেক পুরনো হয়ে গেছে। এখন আর আমি ছবিটি করব না। তখন শাকিব খান নিজ থেকেই বলেছেন, ‘আমরা প্রযোজক খুঁজে সিনেমাটির কাজ শেষ করব।’ প্রযোজক দাবি করেন, শাকিব খান ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি আছেন। তিনি এ সময় জানান, তার সিনেমায় লগ্নিকৃত অর্থের পরিমাণ দুই কোটি টাকা। ঘটনার মীমাংসায় উপস্থিত ছিলেন প্রযোজক সমিতির নেতা খোরশেদ আলম। তিনি বলেন, ‘আমরা বিকেল ৫টা থেকে ৬টা পর্যন্ত মীমাংসার জন্য বসেছিলাম। আমাদের আলোচনা সবে শুরু হয়েছে। কিন্তু এখনো কোনো মীমাংসা হয়নি।'
এরপর দুইদিন পেরিয়ে গেলেও সমঝোতা না হওয়ায় শনিবার নিজেই আইনের দ্বারস্থ হন শাকিব। এ বিষয়ে শাকিবের পক্ষ থেকে জানানে হয়, প্রযোজক নামধারী এই প্রতারক যেন দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে সেই কারণে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। মিথ্যে অভিযোগ তোলার সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত যেন দেশ ছাড়তে না পারে সেই কারণে আইনি ব্যবস্থা নিতে চলেছেন এ নায়ক।