সাক্ষাৎকার
লিমন আহমেদ
প্রকাশ : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৩:৩৯ পিএম
কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেতা ঋত্বিক চক্রবর্তী। দুই বাংলায়ই তার দর্শক ও ভক্ত অগুনতি। যৌথ প্রযোজনার ‘মায়ার জঞ্জাল’ সিনেমাটি ২৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ও ভারতে একসঙ্গে মুক্তি পাবে। সিনেমার প্রচারে ঋত্বিক ঢাকায় আসেন ১৯ ফেব্রুয়ারি রাতে। কাজ সেরে ফিরে যাবেন আজ। ফিরে যাওয়ার আগে প্রতিদিনের বাংলাদেশের সঙ্গে একান্ত আড্ডায় মেতেছিলেন তিনি। লিখেছেন লিমন আহমেদ
‘মায়ার জঞ্জাল’ সিনেমার জন্য এবারের আগমন। দর্শকের সঙ্গে সিনেমাটিকে পরিচয় করিয়ে দিন
খুব সুন্দর একটি গল্পের সিনেমা ‘মায়ার জঞ্জাল’। দুই বাংলার যৌথ প্রযোজনায় এপার থেকে প্রযোজক হিসেবে আছেন জসীম আহমেদ। কলকাতার ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরী এটি নির্মাণ করেছেন। তার সঙ্গে এর আগে আমি ‘ফড়িং’সহ কিছু সিনেমায় কাজ করেছি। বরাবরই চমৎকার অভিজ্ঞতা। সব সিনেমাই আমার ভালো লেগেছে। এটাও ভালো লাগার একটি কাজ হয়েছে। আমি আছি চাঁদু চরিত্রে। বেশ জটিল পরিবেশ ও পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করা একটি চরিত্র। এক ছেলে আছে। তাকে নিয়ে স্বপ্ন আছে। চাঁদু তার স্ত্রীকে প্রচুর ভালোবাসে। কিন্তু তার প্রকাশটা থাকে ঝগড়াটে। এখানে আমার স্ত্রী সোমা চরিত্রে অভিনয় করেছেন বাংলাদেশের অত্যন্ত গুণী অভিনেত্রী অপি করিম। আরও আছেন দুই বাংলার অনেকেই।
খাদ্য, অর্থ, রাজনীতি, সংস্কৃতিসহ চলমান জীবনযাত্রায় এখন নানামাত্রিক সংকট। এসবের ভিড়ে ‘মায়ার জঞ্জাল’ সিনেমার সঙ্গে বাঙালি দর্শক নিজেদের কতটা সংযোগ ঘটাতে পারবে?
আমার তো মনে হয় সম্পূর্ণভাবেই সংযোগটা ঘটবে। এ সিনেমা দেখে দর্শক হয়তো বলবেন এমন সিনেমাই তারা দেখতে চেয়েছেন। বাঙালির প্রান্তিক জীবনযাপনই এখানে উঠে এসেছে। প্যারালাল দুটি গল্প কিছু চরিত্র নিয়ে এগোবে। একটা সময় মনে হবে দুটি গল্প এক হয়েছে বা হয়নি এটাও ভাবতে পারেন অনেকে। নিত্যদিনে নানান প্রয়োজন নিয়ে জটিলতা, মানসিক টানাপড়েন, ভালোবাসতে গিয়ে ঘৃণা করে ফেলা বা ঘৃণা করতে গিয়ে ভালোবেসে ফেলা; এগুলোই তো হয় আমাদের। তাই না? এ সিনেমায় দর্শক এগুলো দেখবেন, নতুন গল্পে। নতুন ফ্রেমে।
এই যে প্রান্তিক জীবনযাপনের কথা বললেন, সাধারণত দেখা যায়, যে প্রান্তিক শ্রেণির জন্য সিনেমা বানানো হচ্ছে সেই শ্রেণির কাছেই সিনেমাটি পৌঁছায় না...
ভালো বলেছেন। এটা হয় আসলে। যাদের গল্প সিনেমায় বলা হয় তাদের কাছে সিনেমাটি পৌঁছায় না। তারা সেই সিনেমাটি দেখেন না বা দেখতে পারেন না। তবে আমার বিশ্বাস মায়ার জঞ্জাল দুই বাংলার সব দর্শকের কাছে পৌঁছাবে এবং তাদের ভালো লাগবে। মায়ার জঞ্জাল সহজ ভাষার সিনেমা, সহজ গল্পের সিনেমা, সহজে বোঝবার সিনেমা। যারা দেখবেন তারা সিনেমাটি উপভোগ করবেন।
অপি করিমের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
অসাধারণ। তিনি গুণী একজন অভিনেত্রী। সিনেমার শুটিংয়ে শুধু নিজের অংশটুকু শেষ হলেই যে দায়িত্ব শেষ হয় না, সেটাও দারুণভাবে অপির মধ্যে দেখলাম। তিনি নিজের শুটিং শেষ করেও সহকর্মীর সংলাপ বা এক্সপ্রেশনটা যেন পারফেক্ট হয় সেজন্য অভিনয় চালিয়ে যান। আমাদের পরিচালক ইন্দ্রনীল কিন্তু সেটে কথা কম বলেন। কে কীভাবে কোন দৃশ্যটা করবে, এসব নিয়ে এত ডিটেইলস বলেন না। তিনি যেটা করেন শুটিংয়ের আগে একটা রিহার্সেলের মতো করে নেন। সে ক্ষেত্রে অপি আর আমি কাজ করতে গিয়ে নিজেদের মধ্যে একটা বোঝাপড়া তৈরি করেছি। এটা তখনই সম্ভব হয় যখন আপনি খুব ডায়নামিক সহশিল্পীর সঙ্গে কাজ করবেন। অপি ঠিক সেটাই।
সিনেমার আজকের বাজারে যৌথ প্রযোজনাকে কীভাবে দেখেন?
আমার তো মনে হয় এটা পজিটিভ। বিশেষ করে যখন সিনেমাটি কলকাতা ও ঢাকার মধ্যে হয়। কারণ আমাদের ভাষা থেকে সংস্কৃতি সবকিছুতেই দারুণ একটা মিল রয়েছে। আমি এককালে দেয়ালে দেয়ালে বাংলাদেশের বিভিন্ন নাটকের পোস্টার মেরে প্রচার করে দলবেঁধে নাটক দেখতাম। বহুব্রীহি আমার খুব প্রিয় একটি নাটক। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে দুই বাংলার মধ্যে সংস্কৃতির দেওয়া-নেওয়া ব্যাপারটা তো খারাপ নয়। আপনারা আমার ছবি দেখে মুগ্ধ হন। আরও অনেকেই আছেন কলকাতার যারা এখানে খুব জনপ্রিয়। আবার এখানকার অনেকে কলকাতায় ভীষণ জনপ্রিয়। ওটিটির কল্যাণে সীমানার প্রাচীরটা কিন্তু ভেঙেছে বলে মনে হয় আমার। এসব কারণেই আমি মনে করি যৌথ প্রযোজনার সিনেমা নিয়মিত হওয়া উচিত। এখানে লাভ বই লস কিছু নেই।
একটা বিষয় প্রায়ই আলোচনায় আসে যে বলিউডের সিনেমার জন্য কলকাতার বাংলা সিনেমাগুলো হলবঞ্চিত হয়, নানান প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ে। এটা কীভাবে দেখেন?
বিষয়টি আসলে জটিল। শাহরুখ খানের ‘পাঠান’ মুক্তির সময় সেটা হয়েছে। ছবির প্রযোজক হলমালিকদের বলেছেন সিনেপ্লেক্সের সব স্ক্রিনেই তাদের সিনেমা চালাতে হবে। নইলে পাঠান দেওয়া হবে। এটি বড় ছবি। হলমালিক জানেন ব্যবসা হবে। তাই শর্ত মেনে পাঠান চালিয়েছেন। বাংলা ছবিগুলো বঞ্চিত হয়েছে। এখানে সাম্যের কথা বলতে গেলে বলব অন্যায় হয়েছে। কিন্তু দেখুন শক্তির মাজেজা তো থাকবেই। যখন টালিগঞ্জে শক্তিশালী কারও সিনেমা মুক্তি পায় সেও কিন্তু শক্তি দেখায়। তার চেয়ে দুর্বল সিনেমাটি হল পায় না বা প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়। সেদিক থেকে বলিউডের সিনেমা নিয়ে আলাদা করে আমার কোনো ক্ষোভ নেই। আমার মতে ইন্ডাস্ট্রির জন্য মায়ার জঞ্জাল যেমন দরকার পাঠান সিনেমাও লাগবে।
আমাদের এখানেও খুব শিগগিরই বলিউডের সিনেমা আসতে যাচ্ছে। এটি ঢালিউডে কেমন প্রভাব ফেলবে বলে আপনি মনে করেন..
এটা বলা মুশকিল আমার জন্য। তবে মনে হয় খারাপ কিছু হবে না। এখানে ওই ছবিগুলোর চাহিদা আছে বলেই আমদানি করা হচ্ছে। রমরমা ব্যবসা হবে। ইন্ডাস্ট্রি চাঙ্গা থাকবে। স্বাভাবিকভাবে সিনেমারই লাভ। সিনেমা নির্মাণ বাড়বে। হলগুলো সচল থাকবে। প্রযোজকরা নতুন সিনেমা নিয়ে সাহস পাবেন।