× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বাংলাদেশি সিনেমায় নাচের বিপ্লব এনেছিলেন নায়ক জাভেদ

লিমন আহমেদ

প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০২২ ১৭:০৮ পিএম

আপডেট : ৩০ আগস্ট ২০২২ ১৮:৩২ পিএম

ছবি : মোহসীন আহমেদ কাওছার

ছবি : মোহসীন আহমেদ কাওছার

পারিবারিক নাম ইলিয়াস। তবে এদেশের দর্শকের কাছে তিনি অভিনেতা জাভেদ নামেই পরিচিত। দীর্ঘদিন তিনি রয়েছেন আড়ালে। কোনো অনুষ্ঠানে তার দেখা মেলে না। আসেননি সর্বশেষ শিল্পী সমিতির নির্বাচনেও। বারবার খোঁজ নিতে গেলে মোবাইল ফোনে অল্পবিস্তর কথা বললেও সাক্ষাতের প্রশ্ন উঠলে গণমাধ্যমকেও ফিরিয়ে দিয়েছেন। অবশেষে তিনি দেখা দিলেন। কথাও বললেন প্রতিদিনের বাংলাদেশের সঙ্গে। জানালেন তার জানা-অজানা অনেক গল্প। গেল ২৪ আগস্ট ‘বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘তুই তো বাংলার দীলিপ কুমার’ : জাভেদ’--এই শিরোনামে প্রকাশ হয় এই আলোচনার প্রথম পর্ব। আজ দ্বিতীয় পর্ব দিয়ে শেষ হচ্ছে সাক্ষাৎকারটি। লিখেছেন লিমন আহমেদ

জাভেদের বয়স যখন মাত্র ১৪, ‘নয়া জিন্দেগী’ নামে এক সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি নাসিমা খান ও অঞ্জনার বিপরীতে। কিন্তু সিনেমাটি মুক্তি পায়নি। এরপর আরও বেশ কয়েকটি সিনেমায় অভিনয় করার পর ১৯৭০ সালের ৩০ জানুয়ারি মুক্তিপ্রাপ্ত উর্দু সিনেমা মুস্তাফিজ পরিচালিত ‘পায়েল’ সিনেমাতে দর্শক তাকে লুফে নেয়। এই সিনেমাতে আরও ছিলেন নায়করাজ রাজ্জাক, শাবানা। ছবিটি একইসঙ্গে উর্দু ও বাংলায় নির্মিত হয়। বাংলায় ছবিটির নাম ছিল ‘নূপুর’। সুপারহিট ছিল সে ছবি। ১৯৭০ থেকে ১৯৮৯ পর্যন্ত নায়কদের মধ্যে জাভেদ ছিলেন অসম্ভব জনপ্রিয়। শাবানা, ববিতা, অঞ্জু ঘোষ, রোজিনা, সুজাতা, সুচরিতা প্রমুখ ছিলেন তার নায়িকা। ‘নিশান’ সিনেমা দিয়ে নায়ক হিসেবে জাভেদ তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করেন। এরপর বহু সিনেমায় তিনি নায়ক হয়ে দর্শকের মন জয় করেছেন। 

তবে শুধু নায়ক হিসেবেই নয়, নৃত্য পরিচালক হিসেবেও একসময় ছিল তার ব্যস্ততা। নিজে নাচতেন, নায়িকাদের নাচিয়ে পর্দা কাঁপিয়ে তুলতেন। বলা চলে তার হাত ধরে এ দেশের সিনেমায় নাচের বিপ্লব এসেছিল। জাভেদের ভাষায়, ‘আমাদের সিনেমায় নাচটা একটু দুর্বল ছিল। উপমহাদেশের সিনেমায় আমরা যেসব নাচ দেখতাম সেগুলো ছিল না। আমাদের নাচগুলো ছিল নায়ক ও নায়িকা হাঁটবে, একটু হাত নাড়াবে। চোখ ও মুখের এক্সপ্রেশন দিয়েই চলতো সব। আর নাচের প্রতি আমার আগ্রহটা ছোটবেলা থেকেই। সেই আগ্রহই আমাকে বম্বে (মুম্বাই) টেনে নিয়ে গেল। আমার ওস্তাদ ছিলেন সাধু মহারাজ। উনার সঙ্গেই আমি পাকিস্তান থেকে ঢাকায় এসেছিলাম। উনিই আমাকে নিয়ে গেলেন বম্বে। তার ওস্তাদ শম্ভু মহারাজের কাছ থেকে বিভিন্ন রকম নাচের ওপর তালিম নিলাম। উনার ছাত্রী ছিলেন বলিউডের কিংবদন্তি নৃত্যশিল্পী ও কোরিওগ্রাফার প্রয়াত সরোজ খান। আমরা একসঙ্গে নাচ শিখেছি। উনি ছিলেন চমৎকার একজন শিল্পী। বিনয়ী মানুষ। যোগাযোগ হতো মাঝেমধ্যে। যদি এদেশের কারোর দেখা পেতেন তিনি আমার কথা জিজ্ঞেস করতেন। আমাকে ডাকতেন গুরুভাই।’

মুম্বাই থেকে নাচের ওপর বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি দেশে ফেরেন পঁচাত্তরের পরপর। অভিনয়ের পাশাপাশি নাচে মনোযোগ দেন অভিনেতা জাভেদ। প্রায় সব ছবিতেই তিনি মনোমুগ্ধকর কোরিওগ্রাফিতে নাচের নানা রকম উপস্থাপনে সিনেমায় নতুন যুগের সূচনা করলেন। তার সেইসব নাচ লুফে নিতে থাকল দর্শক। স্বাভাবিকভাবেই জাভেদের নাচের চাহিদা বেড়ে গেল। প্রচুর ফোক ঘরানার সিনেমা তৈরি হচ্ছিল তখন। সেসব ছবিতে কবরী, শাবানা, ববিতা, রোজিনা, অঞ্জু, সুচরিতা থেকে শুরু করে প্রায় সব নায়িকাই তার কোরিওগ্রাফি ও দিকনির্দেশনায় সিনেমায় নাচের ঝড় তুলেছেন। শহুরে সিনেমাতেও গানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নাচ নিয়ে হাজির হতেন তারা, জাভেদের শেখানো-দেখানো নাচের মুদ্রায়। কেউ কেউ আলাদা আলাদা করে নাচের কৌশল রপ্ত করতেন জাভেদের কাছ থেকে। কারণ তখন প্রতিযোগিতা ছিল তুঙ্গে। ভালো নাচ দিয়ে কে কাকে টেক্কা দেবেন সেই চেষ্টা থাকত। জাভেদ মনে করেন, সে সময়ের সব নায়িকাই খুব ভালো নাচ করতেন। অঞ্জু ঘোষের নাচে আধ্যাত্মিক ব্যাপার ছিল। তার নাচ খুবই উপভোগ করত দর্শক।

শুধু নায়িকারাই নন, নায়ক রাজ্জাক, আলমগীর, সোহেল রানা, ওয়াসিম, উজ্জ্বল, ফারুক, জাফর ইকবাল, ইলিয়াস কাঞ্চনেরাও নাচ শিখেছেন জাভেদের কাছে। ইন্ডাস্ট্রিতে রাজ্জাক ছিলেন জাভেদের সিনিয়র। আর বাকিরা প্রায় সবাই তার সমসাময়িক। কেউ কেউ এসেছেন তারও পরে। তবে নাচের জায়গায় সবাই তাকে গুরু বলে মানেন, অনেকে ওস্তাদ বলেও ডাকেন। জাভেদ বলেন, ‘আমি নাচের মানুষ হিসেবে সবসময় সম্মান পেয়েছি সিনেমায়। রাজ্জাক ভাই আমার সিনিয়র। কিন্তু দেখা হলে প্রথমে তিনি আমাকে ‘ওস্তাদ’ বলে বুকে জড়িয়ে নিতেন। কুশল বিনিময়ের পর তুই ডাকতেন বা দুষ্টুমি করতেন। সিনেমা কীভাবে দর্শককে বেশি বেশি দেখানো যায় সে নিয়ে নায়করাজের মতো আর কোনো নায়ক এত সিরিয়াস ছিলেন না। তিনি সিনেমায় নাচ নিয়েও খুব সিরিয়াস ছিলেন। অনেক নায়িকাও সিরিয়াস ছিলেন। অনেকে ছিলেন যারা সুপারস্টার, কিন্তু নাচের গুরু হিসেবে তারা আমাকে সম্মান করতেন।’

অনেক কোরিওগ্রাফার জন্ম নিয়েছেন এদেশের সিনেমায় জাভেদের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে। বিষয়টি নিয়ে জাভেদের স্ত্রী ডলি জাভেদ বলেন, ‘নৃত্য পরিচালক আমির হোসেন বাবু এদেশের গুণী একজন কোরিওগ্রাফার। তার কোরিওগ্রাফিতে অনেক নায়ক-নায়িকা হিট হয়েছে। সেই বাবু ভাই ওস্তাদ হিসেবে শ্রদ্ধা করেছেন আজীবন। কোনো শুটিংয়ে গেলেই দোয়া নিতেন। আর যদি এমন হতো যে এফডিসিতে দুজনেই একসঙ্গে কাজ করছেন, তবে ক্যামেরা ওপেন করার আগে জাভেদ সাহেবকে নিয়ে যেতেন। উনাকে চেয়ারে বসিয়ে কাজ শুরু করতেন। আসলে এগুলো এফডিসিতে সবাই জানে। নায়ক হিসেবে যেমন, নাচের গুরু বলি বা সফল কোরিওগ্রাফার; জাভেদ ছিলেন সুপারস্টার। অনেকেই হয়তো আজকাল তার কথা বলে না বা স্মরণ করে না। কিন্তু যারা সত্যিকারের শিল্পী তারা করে, আজীবন করবেও। শাবানা আপা, ববিতা আপা এখনও খোঁজ নেন উনার। ববিতা আপা প্রায়ই ফোন দিয়ে কথা বলেন। কবরী আপা বেঁচে থাকতে নিয়মিত যোগাযোগ হতো। তিনিও খুব সম্মান করতেন।’

অনেকদিন সিনেমায় নেই। কারও সঙ্গে যোগাযোগ হয়? এর উত্তরে জাভেদ বলেন, ‘রাজ্জাক ভাই যতদিন বেঁচে ছিলেন বড় ভাইয়ের মতো, বন্ধুর মতো খোঁজ নিয়েছেন। আলমগীর আমার দুধভাই। আমরা এক গ্লাসে দুধ পান করে ভাই হয়েছি। আমার সকল বিপদে তিনি পাশে থাকেন। সবার আগে ছুটে আসেন। তার স্ত্রী লিজেন্ডারি সিঙ্গার রুনা লায়লাও সজ্জন মানুষ। একটা বিষয় কি, আমার লিপে যত গান হিট আছে বা বলতে পারি আমার লিপে সিনেমার সবচেয়ে বেশি গান গেয়েছেন খুরশিদ আলম। উনার সঙ্গে আমার একটা জুটি ছিল। আরেকটা জুটি ছিল রুনা লায়লার সঙ্গে। উনার গানের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি নাচের কোরিওগ্রাফি করেছি আমি। সেগুলোর প্রায় সবই হিট। উনাদের সঙ্গে সম্পর্কটাও আমার বেশ ভালো। এ ছাড়া মিয়া ভাই নায়ক ফারুক আমার বন্ধুর চেয়েও বেশি। ইলিয়াস কাঞ্চন আমার ভাই, বন্ধু; সব। আমরা একে অপরকে মিতা বলে ডাকি। আমি ইলিয়াস জাভেদ আর সে ইলিয়াস কাঞ্চন। আমি প্রযোজনা করেছি এক সময়। আমার প্রযোজিত প্রথম ছবি ‘বাহরাম বাদশাহ’। সেখানে নায়ক ছিল কাঞ্চন। সোহেল রানা, উজ্জল ভাইরাও খুব কাছের মানুষ। ওয়াসিমের সঙ্গেও যোগাযোগ হতো। জীবন-যৌবন তো তাদের সঙ্গেই কাটিয়েছি। প্রতিটি মুখ, প্রতিটি মানুষ আমার কাছে একেকটি বই, একেকটি জগৎ। দেশ, জাতি ও পরিবার ছেড়ে এই মানুষগুলোর বন্ধুত্ব ও ভালোবাসাই আমাকে সবসময় প্রেরণা দিয়েছে এই দেশে থেকে যাওয়ার, কাজ করার।’

যাদের কথা বললেন সবাই তো আপনার সমসাময়িক। এর পরের প্রজন্ম বা নতুন প্রজন্মের কারও সঙ্গে যোগাযোগ হয় না? ডলি জাভেদ উত্তরে জানান, ‌‘এখন যে যোগাযোগ সেটা প্রায় পুরোটাই নির্বাচনকেন্দ্রিক। শাকিব খান, মিশা সওদাগর যখন নির্বাচন করত, যোগাযোগ করত। ভোটের জন্য। আমি একটু ঝামেলা নিয়ে গিয়েছিলাম। তেমন কোনো উপকার করতে না পারলেও পরামর্শ দিয়েছিল। ওমর সানী, মৌসুমী, জায়েদ খানরা নির্বাচন উপলক্ষে যোগাযোগ করে।’

অকালে গত হয়েছেন এমন আরও কয়েকজন নায়ক সম্পর্কে জানতে চাই আপনার কাছে। জসীম, জাফর ইকবাল, সালমান শাহ ও মান্না। আপনার দেখা ও অভিজ্ঞতায় এই নায়কেরা কেমন ছিলেন? ‘জসীম সাহেব ভালো মানুষ ছিলেন। আমি যেমন এদেশের সিনেমায় নাচ নিয়ে কাজ করেছি তেমনি তিনি অ্যাকশনের নতুন যুগের দুয়ার খুলে দিয়েছিলেন। তার অ্যাকশন দর্শক পছন্দ করত। সেই জনপ্রিয়তা দেখে অনেক নায়কই অ্যাকশনের প্রতি সিরিয়াস হয়েছিলেন। কেউ কেউ তো অ্যাকশন হিরো হিসেবে পরিচিতিই পেয়েছেন। আর জাফর ইকবালের কথা বলছেন? ওর কথা কী বলব। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে খাঁটি একটা নায়ক। আমার কলিজার দোস্ত ছিল ও। যখন তখন এসে পড়ত আমার বাসায়। নতুন কী পোশাক সংগ্রহ করেছি, কী স্টাইল করা যায় নতুন করে, এসব নিয়ে আলাপ হতো। খুবই স্মার্ট ও স্টাইলিশ ছিল সে। তার মতো নায়ক অকালে চলে গিয়ে আমাদের অনেক ক্ষতি হলো। এরপর সালমান শাহ ও মান্নার কথা বলতে গেলে বলব, তাদের সঙ্গে অতটা সখ্যতা ছিল না আমার। তবে দুজনেই যার যার সময়ে সেরা হিট নায়ক ছিলেন। সালমানের মৃত্যুটা খুব ভুগিয়েছিল ইন্ডাস্ট্রিকে। অনেক টাকা লগ্নি করা ছিল তার পেছনে। কী থেকে কী হয়ে গেল, আল্লাহ ভালো জানেন। ও একটা অন্যরকম ছেলে ছিল।’

আপনি কিছুক্ষণ আগে সিনেমায় আপনার জুটি সম্পর্কে বলছিলেন। অঞ্জু ঘোষের সঙ্গে আপনার জুটি নিয়ে অনেক আলোচনা হয়। এমনকি আপনাদের মধ্যে বিশেষ সম্পর্ক ছিল বলেও চাউর আছে। প্রশ্নটা এটুকু শোনেই জাভেদ পত্নী ডলি বলেন, ‘দেখুন মজার ব্যাপার কি এটা তো সিনেমা। এখানে অনেক রসাল গল্প জন্ম দেওয়া হয়। কখনও সিনেমার স্বার্থে, কখনও হিংসা বা ক্ষোভে। যেভাবেই হোক অঞ্জু ঘোষকে নিয়ে উনার সঙ্গে প্রেমের নানা গল্প তৈরি হয়েছে ইন্ডাস্ট্রিতে। মজার বিষয় হলো, অঞ্জু ঘোষ উনাকে আব্বু বলে ডাকেন। আজও ডাকেন। আমি উনার স্ত্রী হিসেবে বলছি, আমার স্বামী কখনও কোনো নায়িকার সঙ্গে প্রেমে মজেনি। তার একটাই প্রেম ছিল, সেটা এই ডলি। প্রেম করেছি, বিয়েও করেছি। অঞ্জুর সঙ্গে আমাদের দুজনের সম্পর্কটাই দারুণ। অঞ্জু আর আমি সমসাময়িক নায়িকা। আমি ২০টির মতো সিনেমা করেছি। জাভেদ, ইলিয়াস কাঞ্চনসহ অনেক নায়কের সঙ্গে। আমি ইন্ডাস্ট্রিটা চিনি ও জানি বেশ ভালো করেই। অঞ্জু উনাকে বাবার মতো মানতেন। উনাদেরকে আমি এক বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখেও কখনও সন্দেহের চোখে তাকাইনি। এমন সুন্দর ও পবিত্র ছিল সম্পর্কটা। আমরা সবাই একসঙ্গে সিনেমাও করেছি। ১৯৮৪ সালের সিনেমা ‘চন্দন দ্বীপের রাজকন্যা’। সেখানে একটা জুটি ছিল ওয়াসিম ও অঞ্জু আরেকটি জুটি আমি আর জাভেদ। অঞ্জু ফোন দিয়ে বলল আব্বুকে বলো রেডি হতে, আমরা সিনেমা দেখতে যাব। ও একটা কথা বললে সেটা এড়ানো যেত না। নাছোড়বান্দা। সে, আমি আর জাভেদ সাহেব মিলে গেলাম সাভারের একটি হলে। অঞ্জু গাড়ি আনেনি। আমাদের একটা নতুন গাড়ি ছিল। সেটা করে গেলাম। আগেই হল মালিকের সঙ্গে আলাপ ছিল যে আসব আমরা। তিনি নিরাপত্তা নিয়ে রেখেছিলেন। গিয়ে দেখি হায়রে মানুষ। গাড়িটা দাঁড় করাতেই টের পেলাম গাড়ি থামেনি। আমরা চলছি। খানিক পর দেখলাম গাড়ি ভিড়ের ঠ্যালায় হলের গেটে চলে এসেছে। নামতে যাব সে উপায় নেই। আমি আর জাভেদ সাহেব নামলাম আগে। আমাদের পেছনে বোরকা পরা অঞ্জু। লোকে চিৎকার করে জানতে চাইছে বোরকাওয়ালি কে। জাভেদ সাহেব জোরে চিৎকার করে উত্তর দিলেন, ‘উনি আমার শাশুড়ি। উনাকে ধাক্কা দিয়েন না।’ অঞ্জু তো হেসেই খুন। আমাদের সম্পর্কটা এমন ছিল। পারিবারিক এবং বন্ধুত্বের।’

সর্বশেষ কবে দুজনে সিনেমা হলে গিয়েছেন? ডলি জাভেদ বলেন, ‘সে প্রায় ২০১৪-১৫ সাল হবে। ‘মা বাবা সন্তান’ এই নামের একটি সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন উনি। সেটা দেখতে টঙ্গীর আনারকলি হলে গিয়েছিলাম। খুব কষ্ট পেয়েছিলেন উনি সেদিন। হলে মাত্র কয়েকজন দর্শক ছিল। খুব আফসোস করছিলেন এই অবস্থা দেখে। আসলে আমরা যারা ওই সময়টায় এসেছি, কাজ করেছি আমরা হলে হলে, মানুষের সমুদ্র দেখেছি। আপনি ভাবতে পারেন কত মানুষ একসঙ্গে জমায়েত হলে একটা গাড়ি মাথার ওপর দিয়ে চলতে পারে!’

জাভেদের সর্বশেষ অভিনীত সিনেমাও ‘মা বাবা সন্তান’। এরপর আর কখনও ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানো হয়নি তার। ইচ্ছে করে কাজ করতে। কিন্তু সময় আজ প্রতিকূলে। রুপালি পর্দার তুমুল জনপ্রিয় নায়ক জাভেদ আজ বয়সের ভারে নুয়ে গেছেন। নানা রকম অসুখ বিসুখ তাকে রাজ্য হারানো এক রাজায় পরিণত করেছে। দিনে দিনে অনেক রঙই মুছে গেছে, ধূসর হয়ে গেছে রঙিন জীবনের নিশান! আলাপে গল্পে ফুরিয়ে যায় সময়। আসে বিদায়ের ক্ষণ। কিংবদন্তির আশীর্বাদ মাথায় নিয়ে বেরিয়ে এলাম। দূর থেকে ভেসে আসা আসরের আজানের ধ্বনি জানিয়ে দিয়ে গেল, দিনেরও বিদায় নেওয়ার সময় হয়েছে। 

প্রবা/এলএ/এমজে

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা