× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

হল সংকট সিনেমা নির্মাণে বড় বাধা: জসিম আহমেদ

লিমন আহমেদ

প্রকাশ : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৩:২৬ পিএম

আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৩:৩৪ পিএম

হল সংকট সিনেমা নির্মাণে বড় বাধা: জসিম আহমেদ

জসিম আহমেদ। ইউরোপ, আমেরিকাসহ নানা অঞ্চলের আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে তার নির্মিত ‘অ্যা পেয়ার অব স্যান্ডেল’, ‘দাগ’ ও ‘চকোলেট’ প্রদর্শিত হয়েছে। জয় করেছে অনেক প্রশংসা ও স্বীকৃতি। এবার তিনি ‘মায়ার জঞ্জাল’ দিয়ে এলেন প্রযোজনায়। সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রতিদিনের বাংলাদেশের মুখোমুখি হলেন। লিখেছেন লিমন আহমেদ

প্রশ্ন : একজন চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন আছে ঝুলিতে। নিজে পরিচালনায় না গিয়ে প্রযোজনায় এলেন কেন?

পেশাদার পরিচালকদের একটা বড় অংশ বিনিয়োগকারীর মেজাজ-মর্জি এবং ফরমায়েশে ছবি বানাতে বাধ্য হন। কিছু মেধাবী এবং গুরুত্বপূর্ণ নির্মাতা আছেন যারা নিজের মতো করে গল্প বলতে চান। তাদের ছবির জন্য বিনিয়োগকারী পাওয়া মুশকিল। মার্কেটের বিনিয়োগকারীরা এসব ছবিতে বিনিয়োগ করতে ভয় পান। তাদের মনে হয় ফরমুলার বাইরে গিয়ে বানালে অথবা একটু নিরীক্ষা করলে সেই ছবি দর্শক নেবে না কিংবা সে রকম পরিণত দর্শক দেশে তৈরি হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে সুযোগ ও সামর্থ্য থাকলে নির্মাতাদেরই প্রযোজনা এবং বিনিয়োগে এগিয়ে আসা উচিত। সেই ভাবনা থেকেই আমি প্রযোজনায়। আমি চাই দু-চারটি নিরীক্ষাধর্মী ছবি অন্তত তার দর্শক খুঁজে পাক।

প্রশ্ন : মায়ার জঞ্জাল যৌথ প্রযোজনার ছবি। আপনার প্রযোজনায় আসার ভাবনার সঙ্গে যৌথ প্রযোজনার সম্পর্ক কী?

একটা ভালো চলচ্চিত্র নির্মাণে যথেষ্ট পরিমাণ বাজেটের প্রয়োজন হয়, যা বাংলাদেশের ছোট মার্কেট থেকে তুলে আনা কঠিন। এ ক্ষেত্রে যৌথ প্রযোজনা হলে খরচটা ভাগ হয়ে যায়। দুই দেশের জনপ্রিয় ও ভালো শিল্পীদের সংযুক্ত করা যায়। কারিগরি সহায়তার আদান-প্রদানের পাশাপাশি বিপণনের সুবিধাও থাকে তাতে। ধরুন, আপনি ২ কোটি টাকা একটি ছবিতে বিনিয়োগ করে বাংলাদেশ থেকে ১ কোটি টাকা ওঠাতে পারলেন, বাকি ১ কোটি টাকা লোকসান হলো। এভাবে লোকসান দিয়ে আপনি পরবর্তী কাজ করতে পারবেন না। যৌথ প্রযোজনার ছবিতে ২ কোটি টাকা খরচ হলে অর্ধেক টাকায় আপনি একটি ভালো ছবি পেয়ে গেলেন। আর বাজারটাও বড় হলো।

প্রশ্ন : প্রথম প্রযোজনা হিসেবে ‘মায়ার জঞ্জাল কেন বেছে নিলেন?

ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরী ও আমার বন্ধুত্ব দীর্ঘদিনের। আমাদের উভয়েরই আগ্রহের জায়গা সিনেমা। আমাদের পরিকল্পনা ছিল আমরা এমন একটা ছবি বানাতে চাই, যা বাংলা সিনেমার ব্র্যান্ড পারসেপশন বদলাতে সহায়ক হবে। এ পরিকল্পনায় যখন চিত্রনাট্যের প্রথম ড্রাফট হলো, শুরুর দৃশ্য পড়েই আমি চমকে গেলাম। এভাবে দৃশ্যের পর দৃশ্য আমাকে অভিভূত করল। সবাই জানেন, মায়ার জঞ্জাল মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুটি ছোটগল্প থেকে অনুপ্রাণিত। সাধারণত আমরা কী দেখি? একাধিক গল্প নিয়ে সিনেমা তৈরি হলে একটার পর একটা গল্প বলার চেষ্টা হয়। এখানে দুটি গল্প সমান্তরালভাবে বলতে বলতে এক বিন্দুতে এনে মিলিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই মিলিয়ে দেওয়াটা পরিকল্পনা করেই হয়েছে। অথচ মনে হবে এটা উদ্দেশ্যমূলক নয়, অ্যাক্সিডেন্টাল! সত্যি বলতে প্রযোজকের কাজটাই তো হলো ঠিকঠাক প্রজেক্ট নির্বাচন করতে পারা আর সে অনুযায়ী বাস্তবায়ন করা। বাকিটা দর্শকই বুঝতে পারবেন, এ ছবিটা কেন গুরুত্বপূর্ণ।

প্রশ্ন : অনেক বড় ফেস্টিভ্যালে সিনেমাটির সিলেকশন ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জনকে কীভাবে দেখছেন?

ছবিটির গল্প দেশভাগের সময়ের হলেও নির্মিত হয়েছে এখনকার প্রেক্ষাপটে। পরিচালক আমাদের এখনকার সমাজবাস্তবতায় গল্প বলেছেন নিজের মতো করে, নিজস্ব চিত্রভাষায়। এমন ছবির আন্তর্জাতিক সাফল্য পাওয়া খুবই কঠিন ছিল। তবু পেয়েছে ইউনিক গল্পকথন এবং নির্মাণশৈলীর কারণে। কিন্তু আমাদের সবচেয়ে বড় সাফল্য হবে বাংলা ভাষাভাষী দর্শকদের ভালোবাসা পাওয়া, যা এখনও অধরা। আর তা পেয়েই আমরা পুরোপুরি খুশি হতে চাই।

প্রশ্ন : আপনি কি মনে করেন এটা ‘মায়ার জঞ্জাল’ মুক্তির সঠিক সময়?

আমরা যখন সিনেমা শেষ করি, বিশ্বব্যাপী করোনার প্রকোপ শুরু হয়। লকডাউন এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে পৃথিবীতে সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যায়। বাতিল হয় সমস্ত ফেস্টিভ্যাল। ২০২০ সালে প্রথম শ্রেণির ফেস্টিভ্যালের মধ্যে সাংহাই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, কার্লোভি ভেরিÑ এ তিনটি উৎসব বিলম্বিত হলেও অনুষ্ঠিত হয়। এর দুটিতে আমাদের ছবি মনোনীত ও প্রদর্শিত হয়। আমাদের দেশসহ পৃথিবী স্বাভাবিক হতে চলে যায় ২০২১ সালের পুরোটা। এরপর আমরা ছবি মুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করি। যেহেতু প্রথম থেকেই আমাদের ইচ্ছা ছিল আমরা অন্তত ভারত ও বাংলাদেশে এক দিনে ছবি মুক্তি দেব। এজন্য দুই দেশে আমরা একই দিনে মুক্তির তারিখের অপেক্ষায় ছিলাম, যা আমরা পেয়েছি এ বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি।

প্রশ্ন : ওপার বাংলার অভিনেতা ঋত্বিকের সঙ্গে অপি করিমের জুটি তৈরির ভাবনাটা জানতে চাই।

সিনেমার সোমা চরিত্রে পরিচালকের প্রথম পছন্দই অপি করিম ছিলেন। তিনি কেন সোমা চরিত্রে রাইট চয়েস, ছবিটি দেখলেই বুঝতে পারবেন দর্শক। আরেকটা কথা, আমার মনে হয়েছে অপি করিম মানে বিশ্বাস করেন, সংখ্যায় নয়। ঋত্বিকও বেছে বেছে কাজ করেন। দুজনের অভিনয়শক্তির দিকটি ভেবেই তাদের নিয়ে এ যাত্রা।

প্রশ্ন : প্রযোজনায় নিয়মিত হচ্ছেন তাহলে?

আমরা নিয়মিত প্রযোজনায় আছি। হাতেও অনেক প্রজেক্ট আছে। অতি সম্প্রতি আমরা একটা দুর্দান্ত প্রজেক্ট শেষ করেছি এবং একটা হাই-টিকিট ফেস্টিভ্যালের অফিসিয়াল সিলেকশন আশা করছি। খুব শিগগিরই এর ব্যাপারে আমরা বিস্তারিত তথ্য দিতে পারব। এ ছাড়া আরও কয়েকটি ছবি এখন ডেভেলপমেন্ট পর্যায়ে রয়েছে।

প্রশ্ন : স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমায় আপনি একজন সফল নির্মাতা। নির্মাতা জসিম আহমেদের কাছ থেকে আমরা ফিচার ফিল্ম বা পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা কবে পাব?

আমি তো নির্মাণের মধ্যেই আছি। প্রযোজনা তো আর নির্মাণের বাইরে নয়। একজন প্রযোজকের তো কাজ অনেক। ডেভেলপমেন্ট থেকে শুরু করে পরিবেশনা পর্যন্ত চাপ অনেক। চাপমুক্ত না হলে পরিচালনা বা লেখায় মনোযোগ দেওয়া সহজ নয়। আগে চাপমুক্ত হই, তারপর পরিকল্পনা করব।

প্রশ্ন : বর্তমানে তো সিনেমা হল সংকট। প্রযোজক হিসেবে এ বিষয়টাকে কীভাবে দেখেন?

এ সমস্যা সিনেমা নির্মাণের জন্য একটা বড় বাধা। তার চেয়ে বড় বাধা হলো, সিঙ্গেল স্ক্রিন থেকে টাকার হিসাব না পাওয়া। এমনকি পরিবেশনার সামান্য যে খরচ হয়, সেই টাকাও সিঙ্গেল স্ক্রিন থেকে আসে না। তাহলে এসব হলে সিনেমা দিয়ে বিশাল একটা হল সংখ্যায় ছবি মুক্তির খবর আর ভুয়া সুপার হিটের তকমা লাগানোর উদ্দেশ্য কী? তার চেয়ে এসব হলে ছবি না দেওয়াই ভালো, যেমনটি আমরা দিচ্ছি না। তার ওপর আছে পাইরেসির ভয়। হল সংখ্যা বাড়ানোর সঙ্গে এগুলোকে একটা সিস্টেমে আনা দরকার। দিন শেষে সিনেমা একটা ব্যবসা, চ্যারিটি না।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা