× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

জল ও প্রকৃতি বন্দনার ছবি ‘সাঁতাও’

তানিয়া সুলতানা

প্রকাশ : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৯:৪৮ এএম

জল ও প্রকৃতি বন্দনার ছবি ‘সাঁতাও’

সাঁতাও অর্থ সাত দিন ধরে চলমান বৃষ্টি বোঝালেও, সিনেমায় আমরা সে অর্থে বৃষ্টি দেখি না। বরং খরা দেখি, যেখানে পানির অভাবে কৃষক মাঠে সোনা ফলাতে পারছে না। এমন খরায় গর্ত খুঁড়ে খুঁড়ে সামান্য পানি বের করলেও জমিতে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটা শুষে নেয় বালি। এমন দীনতায় বৈষম্যের চক্রের ভেতর ফজলু ধান চাষ করে। বাংলার শস্যভাণ্ডার বলে খ্যাত উত্তরবঙ্গের এই চিত্র ফুটে ওঠে তিস্তা ব্যারেজের পানির ওপর দিয়ে নেওয়া একটি দ্রোণ শটের ভেতর দিয়ে। ব্যারেজের একপাশে পানিতে টইটুম্বর। আর ঠিক অন্যপাশে ধু ধু প্রান্তরে কতিপয় শিশু দৌড়ে বেড়াচ্ছে। এই একটি শট পুরো সিনেমার সারবস্তুকে হাজির করে। 

তাই সাঁতাও আসলে খরার গল্প। যা প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট নয়, কৃত্রিম। যেটা আমাদের মনে করিয়ে দিতে চায়, এককালে এই ভূখণ্ডে ছিল জলের প্রবাহ, নৌকাবাইচ আর মাছ ধরার উৎসব। ছবিটির ইংরেজি নাম খেয়াল করলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হয়Ñ ‘মেমোরিজ অব গ্লুমি মুনসুনস’। সাঁতাও এখন নেই। 

এখন একে তো খরা, তার ওপর একটু ভারী বর্ষণ হলে ব্যারেজ খুলে দেওয়া হয়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মানুষের ফসল ভেসে যায়, ঘরবাড়ি ছেড়ে নিজের আর গবাদিপশুর জীবন বাঁচানোই সংকট হয়ে দাঁড়ায়। নিঃস্ব মানুষকে একেবারে আবার শূন্য থেকে শুরু করতে হয়। এভাবে উন্নয়নের ফুটোর দিকে ফ্রেমের পর ফ্রেম সাজায় খন্দকার সুমন। সেই ফ্রেম থেকে উন্নয়ন সংস্থার মহাজনি কায়দার কূটকৌশলও এড়িয়ে যায় না। উন্নয়নের এই ধাক্কায় কীভাবে গ্রাম থেকে নিজের ভিটে-স্বজনদের কাছ থেকে ছিটকে পড়ে বেঘোরে প্রাণ হারায়, সেই সুতোগুলোর সূক্ষ্ম সাবপ্লট আকারে গ্রন্থিত হয়েছে। ফলে সাঁতাও যেমন রাজনৈতিকভাবে গুরুত্ব বহন করে, আবার একই সঙ্গে বাংলাদেশের সিনেমার ইতিহাসে আঞ্চলিক সিনেমা হিসেবেও বারবার নাম নিতে হবে গণঅর্থায়নে তৈরি এই ছবিটির।

আঞ্চলিক গানের ব্যবহার ছবিটিকে মাটির অনেক কাছে নিয়ে গেছে। গল্পের বাঁকে বাঁকে গান যেন সিনেমাকে জ্যান্ত করে তুলেছে, এর ভেতর দিয়ে গল্পের ঘটনাপ্রবাহ এবং চরিত্রগুলোকে স্পর্শ করতে পেরেছে দর্শক। এসব কিছুর মধ্য দিয়ে নারী-পুরুষ এবং তাদের সঙ্গে প্রকৃতির সম্পর্ক ডালপালা মেলে ধরে। এখানে পুতুল এবং প্রকৃতি আর ফজলুর সঙ্গে প্রকৃতির সম্পর্ক দুটি আলাদা রূপকে দেখা যেতে পারে। ছবির দ্বিতীয় ভাগে সম্পর্কগুলো আগের মতো ততটা সহজাত নয়। অনেক ক্ষেত্রে জীবনসঙ্গী কিংবা নতুন কোনো মানুষের থেকে প্রাণ-প্রকৃতির সঙ্গে অব্যক্ততায় সম্পর্ক তৈরি হয়। সে সম্পর্ক দেনা-পাওনার ঊর্ধ্বে, সংজ্ঞাহীন, গভীরতর। পুতুলের সঙ্গে লালুর যে সম্পর্ক ধীরে ধীরে পর্দায় উন্মোচিত হবে সেটা কেবল মাতৃত্ব নয়, বরং নারীর সঙ্গে প্রকৃতির মিথজীবিতার সম্পর্ক। এরা একে অপরের অবলম্বন। অন্যদিকে ফজলুর সঙ্গে প্রকৃতির সম্পর্ক সাধারণ ছকে বাঁধা। সে বিলে মাছ ধরে, অক্লান্ত শ্রমে-ঘামে এবং চরম বৈষম্যের মধ্য দিয়ে ফসল ফলায় জীবিকার স্বার্থে। পুতুলের মতন এই সম্পর্কটি কেবলই নিঃস্বার্থ বা পারস্পরিক নয়। 

মানবসভ্যতার এই অগ্রযাত্রায় প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের সবার অবস্থাও হয়েছে ফজলুর মতন। আমরা যূথবদ্ধ জীবন থেকে যত পুঁজির দিকে এগিয়েছি তত বেশি চড়াও হয়েছি, সওয়ার হয়েছি প্রকৃতির ওপর। ‘সাঁতাও’ মুগ্ধ করে নির্মাণের মুন্সিয়ানায়। চরিত্রবিন্যাস, সংলাপ, সাউন্ড, পোশাক ও রূপসজ্জা, লাইটিংসহ খুঁটিনাটি বিষয়গুলো সঠিকভাবে জুড়ে একটি মজবুত টিম দিয়ে ছবিটি নির্মাণ করতে পেরেছেন খন্দকার সুমন।


লেখক : শিক্ষক, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ

স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা