লিমন আহমেদ
প্রকাশ : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৩:৩৭ পিএম
আপডেট : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৩:৩৭ পিএম
সময়ের আলোচিত অভিনেত্রী আইনুন নাহার পুতুল। গল্পনির্ভর ‘সাঁতাও’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে নিজের জাত চিনিয়েছেন। আজ থেকে ছবিটির দ্বিতীয় সপ্তাহ শুরু, দেখা যাবে সিরাজগঞ্জের রুটস সিনেক্লাব, নারায়ণগঞ্জের সিনেস্কোপ, সাভারের সেনা অডিটোরিয়াম, দিনাজপুরের মডার্ন ও রংপুরের শাপলা টকিজে। এখন পর্যন্ত ক্যারিয়ারের সেরা সাফল্য এনে দেয়া ছবিটি নিয়ে অভিনেত্রী পুতুল কথা বলেছেন প্রতিদিনের বাংলাদেশের সঙ্গে।
‘সাঁতাও’ কতটা ভালোবাসা দিতে পারল?
অসাধারণ, অভূতপূর্ব, অভাবনীয়। এ সিনেমায় অভিনয় করে আমি যে ভালোবাসা পেয়েছি তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। বলতে গেলে আমি জীবনে এমন ভালোবাসা পাইনি কখনও। গোয়া চলচ্চিত্র উৎসব থেকে শুরু করে ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবÑ সবখানে সিনেমাটি দর্শকের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছে। চলচ্চিত্রের বোদ্ধারাও সাঁতাও নিয়ে মুগ্ধতা প্রকাশ করেছেন। অনেকে আমার অভিনয়ের প্রশংসা করেছেন। ফোন দিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন। এগুলো আমার কাছে অনেক বড় অর্জন। এসব ভালোবাসার আবেগে চোখ ভিজেছে বারবার।
আজ প্রেক্ষাগৃহে দ্বিতীয় সপ্তাহ শুরু করছে সাঁতাও। প্রথম সপ্তাহে দর্শক সাড়া কেমন পেলেন?
এ সিনেমাটি বাণিজ্যিক বা মসলাদার নয়। তাই প্রেক্ষাগৃহের যে জমজমাট ব্যবসা, সেটা এখানে হবে না এটাই স্বাভাবিক। তবে যে কটি হলে ছবিটি চলেছে, সবাই প্রশংসা করেছেন। আমরা প্রথম থেকে চেয়েছিলাম দর্শক হলে আসুক, সিনেমাটি দেখুক। আমাদের গল্পটি সম্পর্কে জানুক। বলতে গেলে এ জায়গায় আমরা সফল। যারাই আমাদের সিনেমাটি দেখেছেন গল্প, নির্মাণ ও শিল্পীদের অভিনয়ের প্রশংসা করেছেন। ফেসবুকেও অনেক প্রতিক্রিয়া পেয়েছি ইতিবাচক। ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রিমিয়ারের সময় আমি কেঁদে ফেলেছিলাম দর্শকের রেসপন্স দেখে। সেখানে অনেক দর্শক সিট না পেয়ে ফ্লোরে বসেও সাঁতাও দেখেছেন। এটা আমার কাছে খুবই স্পেশাল মনে হয়েছে।
সাঁতাওয়ের শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
আমার জীবনের সেরা অভিজ্ঞতা নিয়ে এসেছে ছবিটি। অনেক উপভোগ করে অভিনয় করেছি। ছবির পরিচালক খন্দকার সুমন ভাই চমৎকার একটি টিম তৈরি করেছেন। যেখানে সবাই খুব আন্তরিক ছিল। অনেক মুহূর্ত আছে যা অনেক দিন মনে থাকবে। একটা মুহূর্ত আছে, সিনেমায় আমি আমার সন্তানকে হারিয়ে ফেলি। সেখানে আমার কান্নার দৃশ্য আছে। শুটিং শুরু হতেই আমি ছেলে হারানোর আর্তনাদ করতে থাকি। এরপর পরিচালক কাট বললেও আমার কান্না থামছিল না। সবাই আমাকে শান্ত করছিল, কিন্তু আমি কান্না থামাতে পারছিলাম না।
এ সিনেমায় আপনার চরিত্রটিকে কীভাবে বিশ্লেষণ করবেন?
আমার কাছে মনে হয়েছে চরিত্রটি ইউনিভার্সাল। খুব কমন আর চেনা, কিন্তু উপস্থাপনায় নতুনত্ব আছে। প্রতিটি মায়ের জীবনেই এমন যুদ্ধ চলমান। আমি সিনেমায় চরিত্রের মাধ্যমে সেই যুদ্ধের চিত্রটা নতুনভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। সন্তানের জন্য পৃথিবীর প্রতিটি মা বাস্তবে এমন চরিত্রে অভিনয় করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। এজন্য ছবিটি যেসব নারী বা মা দেখেছেন, তারা নিজেকে খুঁজে পেয়েছেন। ছবিটি দেখার জন্য অন্যদের উৎসাহিত করেছেন।
দেশে-বিদেশে প্রশংসা, দর্শকের ভালোবাসা জুটেছে সাঁতাও দিয়ে। ছবিটি আপনার ক্যারিয়ার কতটা এগিয়ে দিতে পেরেছে বলে মনে করেন?
আমি তো মনে করি অনেক এগিয়েছে। এ সিনেমার জন্য ক্যারিয়ার নিয়ে অনেক কিছু ভাবছি। সবে ছবিটি মুক্তি পেয়েছে। আমার অভিনয় নিয়ে সবাই খুব প্রশংসা করছেন। এখনই এ ছবি দিয়ে ক্যারিয়ার বিবেচনার সময় আসেনি বলে মনে করি। তবে আমি এও মনে করি, সাঁতাও আমার ক্যারিয়ারের সেরা অর্জন বা সাফল্য। এখন দর্শক চাইলে নিয়মিত অভিনয় করব।
আপনার এ সাফল্য পরিবার কীভাবে দেখছে?
তারাও উপভোগ করছেন। প্রধান অভিনেত্রী হিসেবে তারা আমাকে প্রথম কোনো চলচ্চিত্রে দেখেছেন। এটা আমার জন্য যেমন আনন্দের, আমার পরিবারের জন্যও। কারণ পরিবার বরাবরই আমার সাপোর্ট করেছেন অভিনয়ের পথচলায়। তারাই আমার শক্তি। আমার মা, ভাইয়া-ভাবি সবাই আমার অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্নকে সাহস জুগিয়েছেন। তাদের ভালোবাসার জন্যই আজকে সাঁতাও চলচ্চিত্র দিয়ে প্রশংসা পাওয়া এই অভিনেত্রী পুতুলের জন্ম হয়েছে।
ভবিষ্যতে নিজেকে অভিনেত্রী হিসেবে কোন অবস্থানে দেখতে চান?
আমি অভিনেত্রী, অভিনয়টা নিয়মিত করে যেতে চাই। সিনেমায় কাজ করতে চাই। কাজের পরিবেশ, শক্তিশালী গল্প, মজবুত চরিত্র পেলে সিনেমার ধাঁচ বা আমেজ নিয়ে আমার কোনো আপত্তি নেই। অভিনয়ে নিজেকে প্রমাণের সুযোগ আছে এমন সব ধরনের সিনেমায়ই আমি কাজ করব। কিছু কাজের ব্যাপারে কথা হচ্ছে। ওটিটিতেও কাজ হবে। শিগগিরই নতুন খবর আসবে।