মহিউদ্দিন মাহি
প্রকাশ : ২৬ জানুয়ারি ২০২৩ ১৫:০৭ পিএম
আপডেট : ২৬ জানুয়ারি ২০২৩ ১৫:৪১ পিএম
১০ বছর আগে ২০১২ সালে বাংলাদেশের চাকমা ভাষায় তৈরি হয় ‘মর থেঙ্গারি’ বা ‘আমার বাইসাইকেল’ শিরোনামে একটি চলচ্চিত্র। যেটি বাংলাদেশে চাকমা ভাষায় নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র। সিনেমাটি সে সময় সেন্সরে জমা দেওয়া হয়। দীর্ঘ সময় ধরে সেন্সরে পড়ে থাকা এ সিনেমাটি এখনও আলোর মুখ দেখেনি।
সিনেমাটি মুক্তিতে বাধার কারণ জানিয়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের তখনকার ভাইস চেয়ারম্যান জাকির হোসেইন বলেছিলেন, ‘মর থেঙ্গারি সেন্সরের জন্য সূচিভুক্ত হওয়ার অপেক্ষায় আছে, অচিরেই এটির সেন্সর করা হবে। তবে চলচ্চিত্রটি নিয়ে একটি অভিযোগ রয়েছে যে, সেন্সরবিহীন অবস্থায় জাতীয় জাদুঘরে ছবিটির প্রদর্শনী করা হয়েছে। তদন্তে সেই অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।’ ছবিটির কোনো বিষয় নিয়ে আপত্তি প্রসঙ্গে পরিচালককে চিঠি দেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যখন সেন্সর হবে, তখন সেন্সর বোর্ডের সদস্যরাই দেখবেন চলচ্চিত্রটিতে কী আছে না আছে।’
এরপর আর সে বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়নি। জানাও যায়নি েকেন আটকে আছে ‘আমার বাইসাইকেল’। এ বিষয়ে প্রতিদিনের বাংলাদেশের সঙ্গে কথা হয় নির্মাতা অং রাখাইনের সঙ্গে। শুরুতেই তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আর কথা বলতে চাই না। আমি খুবই ক্লান্ত। সিনেমাটি নিয়ে অনেকের কাছেই গিয়েছি কিন্তু কোনো সমাধান পাইনি। বলতে গেলে এক প্রকার আশা ছেড়ে দেওয়ার মতো অবস্থায় আছি আমি। অনেক গণমাধ্যমের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। সবাই শুধু আমার কাছে মুক্তি না পাওয়ার কারণ জানতে চায়। আমি কীভাবে কারণ বলব! সেটা সেন্সর দেখবে।’
এ সময় রাখাইন নিজের দ্বিতীয় সিনেমার বিষয়ে জানান। যার শুটিং ইতোমধ্যে শুরু করেছেন। এটাও আদিবাসী শিল্পীদের নিয়ে বানানো হচ্ছে। নাম ‘ম্রু’। সিনেমাটির শুটিং নিয়ে ব্যস্ত এই নির্মাতা আরও জানান, ‘আমি আমার দ্বিতীয় সিনেমা নিয়ে কাজ শুরু করেছি। ২০২৬ সালে মুক্তি দেওয়ার ইচ্ছা আছে। এখন আপাতত নতুন সিনেমার কাজ নিয়েই ব্যস্ত সময় পার করছি।’
এ প্রসঙ্গে গিয়াস উদ্দিন সেলিম বলেন, আমি একজন শান্তিপ্রিয় মানুষ। এসব ঘটনা আমাকে কষ্ট দেয়। একজন নির্মাতার কাছে তার সিনেমাটি একটি সন্তানের মতো। সেই সন্তানকে যদি পৃথিবীতে মুক্ত হতে না দেওয়া হয়, সেই কষ্টের কথা বলাও তো কষ্টের। আমি অং রাখাইনের বাইসাইকেল সিনেমাটির বিষয়ে আগে থেকেই জানি। সিনেমাটি কেন মুক্তি পাচ্ছে না তা সেন্সরের জানানো উচিত। এ ছাড়া আমি এই সেকেলে সেন্সরের পক্ষে কখনও ছিলাম না, এখনও নেই। সেন্সর কখনও এভাবে সিনেমা আটকাতে পারে না।
নির্মাতা মেজবাউর রহমান সুমন বলেন, ‘আমি কখনই কোনো সিনেমার মুক্তিতে বাধা আসুক চাই না। সিনেমা হচ্ছে পৃথিবীর সম্পদ। সমাজে সবার জন্য আমরা সিনেমা বানাই। সেই সিনেমাটি সেন্সরে আটকে গেলে কষ্টটা শুধু নির্মাতাই জানেন। আমি চাই প্রতিটি সিনেমা নিশ্চিন্তে মুক্তি পাক। আর যদি মুক্তি না দেওয়ার বিষয়ে সেন্সরের কোনো সিদ্ধান্ত থাকে, তাহলে সেটা অবশ্যই নির্মাতাকে জানাতে হবে। আমি ‘বাইসাইকেল’ সিনেমার বিষয়ে অনেক আগে থেকেই জানি। সেন্সরকে জানাতে হবে কেন তারা সিনেমাটি মুক্তি দিচ্ছে না। আমি যতটুকু জানি, সিনেমার গল্পে কোনো সমস্যা নেই। যদি সমস্যা থাকেও, সেটি নির্মাতাকে জানিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সিনেমাটি মুক্তি দেওয়া হোক।’
পরিচালক সানি সানোয়ার বলেন, ‘বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ভীষণ সেনসেটিভ। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট অন্য দেশের মতো নয়। আমাদের দেশের কন্টেন্ট এখনকার অবস্থার বিবেচনায় হতে হবে। অন্য দেশে সিনেমায় অনেক কিছু তুলে ধরে। যেহেতু তাদের মূল্যবোধ, দেশপ্রেম সবকিছু আমাদের চাইতে আলাদা। দেশের কথা মাথায় রেখে সিনেমা বানানো উচিত। এসব বিষয় মাথায় রেখে সিনেমা বানালে কোনো ধরনের সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’
গিয়াস উদ্দিন সেলিম বলেন, ‘আমি একজন শান্তিপ্রিয় মানুষ। এসব ঘটনা আমাকে কষ্ট দেয়। একজন নির্মাতার কাছে তার সিনেমাটি একটি সন্তানের মতো। সেই সন্তানকে যদি পৃথিবীতে মুক্ত হতে না দেওয়া হয়, সেই কষ্টের কথা বলাও তো কষ্টের। আমি অং রাখাইনের বাইসাইকেল সিনেমাটির বিষয়ে আগে থেকেই জানি। সিনেমাটি কেন মুক্তি পাচ্ছে না তা সেন্সরের জানানো উচিত। এ ছাড়া আমি এই সেকেলে সেন্সরের পক্ষে কখনও ছিলাম না, এখনও নেই। সেন্সর কখনও এভাবে সিনেমা আটকাতে পারে না।’
অং রাখাইন বাংলাদেশের সংখ্যালঘু রাখাইন গোষ্ঠীর সদস্য। ২০১২ সালে তিনি ছবির নির্মাণ শেষ করেন। এরপর ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে ঢাকার একটি চলচ্চিত্র উৎসবে প্রথমবারের এটি প্রদর্শন করেন। পরে ঢাকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও ফিল্ম ক্লাবগুলোয় ঘরোয়াভাবে ছবিটি প্রদর্শন করেছিলেন তিনি।
পার্বত্য অঞ্চলে চাকমা জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা নিয়ে মর থেঙ্গারির গল্প। যেখানে একটি বাইসাইকেল কেন্দ্র করে কাহিনি আবর্তিত হয়েছে। ৬৪ মিনিটের এ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন চাকমা সম্প্রদায়ের সদস্যরা।