প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২২ মে ২০২৫ ১৪:৩২ পিএম
গত কয়েক বছরে মুক্তি পাওয়া কিছু গুণগতমানের সিনেমা দেশীয় প্রেক্ষাগৃহে সাড়া ফেলেছে।
একসময় আন্তর্জাতিক বাজারে সিনেমা মুক্তি ছিল কেবল হলিউড কিংবা বলিউডের একচেটিয়া আয়োজন। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তামিল ও তেলেগু সিনেমাও সেই সারিতে জায়গা করে নিয়েছে। এমনকি ভারতের আঞ্চলিক ভাষার সিনেমাগুলোও আজ বিশ্বজুড়ে মুক্তি পাচ্ছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সেই পথ থেকে অনেকটাই দূরে ছিল ঢালিউড, বাংলাদেশের সিনেমা জগৎ। দর্শক টানতে ব্যর্থতা, বাজেট ও নির্মাণগুণে ঘাটতির কারণে প্রযোজকরা বিদেশে সিনেমা মুক্তির চিন্তা করতেও সাহস পেতেন না।
তবে সময় বদলেছে। দর্শকের রুচি যেমন বদলেছে, তেমনই উন্নতি হয়েছে নির্মাণশৈলীতেও। গত কয়েক বছরে মুক্তি পাওয়া কিছু গুণগতমানের সিনেমা দেশীয় প্রেক্ষাগৃহে সাড়া ফেলেছে। এ সফলতার ঢেউ পৌঁছেছে বিদেশেও। প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যেও এসব সিনেমা নিয়ে দেখা দিয়েছে আগ্রহ। সামাজিক মাধ্যমে তারা একাধিকবার আবেদন করেছেন প্রেক্ষাগৃহে বসে দেশের সিনেমা উপভোগ করার জন্য। এই আগ্রহ থেকেই সম্ভবত তৈরি হয়েছে নতুন একটি বাজারের সম্ভাবনা- বাংলা সিনেমার আন্তর্জাতিক বাজার।
এই সম্ভাবনাকে সামনে রেখে প্রযোজক-পরিবেশকরা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন ও আত্মবিশ্বাসী। বিদেশে বাংলা সিনেমা মুক্তির পথটা আর স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা। ‘অস্তিত্ব’ সিনেমার মাধ্যমে ২০১৬ সালে যে যাত্রা শুরু হয়েছিল, তা এখন পরিণত হয়েছে ধারাবাহিকতায়। এরপর ‘শিকারি’, ‘আয়নাবাজি’, ‘নবাব’, ‘দেবী’, ‘ঢাকা অ্যাটাক’, ‘পরাণ’, ‘হাওয়া’-সহ একের পর এক সিনেমা মুক্তি পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।
২০২৩ সালে ‘প্রিয়তমা’, ‘সুড়ঙ্গ’, ‘রাজকুমার’, ‘দেয়ালের দেশ’, ‘ওমর’-এর মতো সিনেমাগুলো মুক্তি পেয়েছে এমন সময়, যখন হলিউড সিনেমার বড় মৌসুম চলছে। তবুও বাংলা সিনেমা বিদেশি প্রেক্ষাগৃহে জায়গা করে নিয়েছে নিজের মতো করে। এবার ২০২৪ সালে ঈদ উপলক্ষে মুক্তি পাওয়া ছয়টি সিনেমার মধ্যে তিনটি- ‘বরবাদ’, ‘দাগি’ ও ‘জংলী’ বিদেশে রিলিজ পেয়েছে এবং এখনও চলছে প্রেক্ষাগৃহে।
সবশেষে মোশাররফ করিম অভিনীত ‘চক্কর ৩২০’ নামের থ্রিলারধর্মী সিনেমাটি এবার অস্ট্রেলিয়ায় মুক্তি পাচ্ছে ২৫ মে। বঙ্গজ ফিল্মস পরিবেশনায় অস্ট্রেলিয়ার ছয়টি হলে সাতটি শো প্রদর্শিত হবে। নির্মাতা শরাফ আহমেদ জীবন জানান, ধীরে ধীরে দর্শক সিনেমার সঙ্গে সংযুক্ত হচ্ছেন, গল্প আর অভিনয় মানুষকে নাড়া দিচ্ছে। তাই আন্তর্জাতিক মুক্তির এই পদক্ষেপ।
‘দাগি’ সিনেমার নির্মাতা শিহাব শাহীন বলেন, ‘বিদেশে থাকা প্রবাসীরা দেশি সিনেমার জন্য উদগ্রীব থাকেন। তারা যেন উৎসবের মতো করে সিনেমা উপভোগ করেন। তাই সিনেমাকে গ্লোবাল ভাষায় পৌঁছানোর চেষ্টাও জরুরি।’ একই সুরে কথা বলেছেন ‘বরবাদ’ সিনেমার নির্মাতা মেহেদি হাসান হৃদয়। তার মতে, ‘বিদেশে সিনেমা মুক্তি দেশের জন্য যেমন সম্মানজনক, তেমনি ভবিষ্যতের জন্যও আশাব্যঞ্জক।’
অন্যদিকে ‘আয়নাবাজি’র নির্মাতা অমিতাভ রেজা বলেন,‘আমার সিনেমা যখন বিদেশে মুক্তি পেয়েছিল, তখন বড় কোনো ব্যবসায়িক সাফল্য আসেনি। কিন্তু এখন একটা স্ট্রাকচার তৈরি হয়েছে। বাজার বড় হচ্ছে। তবে হলিউড-বলিউডের সঙ্গে পাল্লা দিতে হলে কনটেন্টের মানের দিকেই সবচেয়ে বেশি জোর দিতে হবে।’
পরিবেশক সংস্থাগুলোর মতে, বিদেশে সিনেমা মুক্তির পথ খুব একটা জটিল নয়। ভালো কনটেন্ট, টু-কে রেজুল্যুশন ও সাবটাইটেল থাকলেই অনেক প্রেক্ষাগৃহ আগ্রহ দেখায়। সিনেমার প্রচার-প্রচারণা ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয়ভার নেয় পরিবেশক প্রতিষ্ঠানগুলোই।
সব মিলিয়ে বলা যায়, বিদেশে বাংলা সিনেমার এই নতুন দিগন্ত একসময় কল্পনার মতো ছিল। আজ তা বাস্তব। ঢাকাই সিনেমার এই নবযাত্রা শুধু গর্বের নয়, একটি সম্ভাবনাময় অধ্যায়েরও সূচনা।