এ ভালোবাসা চলতেই থাকুক

ঈদুল ফিতরে মুক্তি পেয়েছে সিয়াম আহমেদ অভিনীত সিনেমা ‘জংলি’। মুক্তির পর থেকে সিনেমাটি দর্শক হৃদয় বেশ ভালোভাবেই স্পর্শ করে। বেড়ে যায় এর চাহিদা। হলমালিকরাও বাধ্য হয়ে হলসংখ্যা বাড়ান। বাড়তে থাকে আয়ও। ঈদে শাকিব খানের ‘বরবাদ’ ও নিশোর ‘দাগি’র সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আয় করেছে জংলি। দর্শকের ভালোবাসায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন জংলি অভিনেতা সিয়াম আহমেদ।

তিনি বলেন, ‘পরিবারের সবাই একসঙ্গে হাসছে, একসঙ্গে কাঁদছে বাংলা সিনেমা দেখে, জংলি দেখে। আমরা নিশ্চিত আমরা আরও হাজারো-লাখো পরিবারের হাসিকান্নার কারণ হব।’ জংলির ১৬ দিনের টোটাল গ্রস কালেকশন ২ কোটি ৬ লাখ টাকা প্রায়। এ ভালোবাসা চলুক, চলতেই থাকুক। সাধারণ দর্শক থেকে শুরু করে এ ছবি মনে ধরেছে অভিনয়শিল্পী, নির্মাতা ও পরিচালকদেরও।

এবার জংলি সিনেমা দেখে নিজের দীর্ঘ অভিব্যক্তি প্রকাশ করলেন নির্মাতা দীপংকর দীপন। বুধবার সন্ধ্যায় ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘জংলি দেখলাম আজ। অনেক দিন পর বাংলা সিনেমা দেখে ইমোশনাল হলাম। সিয়ামকে জংলি ক্যারেকটারাইজেশনে অসাধারণ লেগেছে। সিয়াম ক্যারেকটারটা খুব ভালো ক্যারি করেছে, সিয়ামকে ক্যারেকটারটায় খুব ভালো লেগেছেও। পাখি চরিত্রটি যে করেছে তাকে আমি ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড দিয়ে দিলাম, কর্তৃপক্ষও দেবে নিশ্চয়ই। বুবলী, দীঘি সবাই খুব সততার সঙ্গে অভিনয় করেছে।’ নির্মাতা লেখেন, ‘পোস্টার ও প্রমোশনের অ্যাপ্রোচ দেখে আমার ধারণা ছিল সাউথের মতো ভায়োলেন্ট কোনো সিনেমা হবে জংলি। আমি খুবই খুশি যে আমাকে ভুল প্রমাণ করে একটি খুব মানবিক-আবেগপ্রবণ-সমাজের জন্য প্রয়োজনীয় একটি সিনেমা বানিয়েছে পুরো টিম। আরও যে কঠিন কাজটি করেছে তা হলো মানবিক সিনেমাটিকে এন্টারটেইনিং করে তুলেছে। যেটা খুব কঠিন একটা কাজ। সেই কাজটা খুব ভালোভাবে করেছে জংলি।’ দীপংকর লেখেন, ‘জংলি বাণিজ্যিক সফলতার দিকেই এগোচ্ছে। আজকেও অফিস ডেতেও উত্তরা সেন্টার পয়েন্টে সকাল ১১টার শো প্রায় হাউসফুল ছিল। প্রচুর মানুষের সঙ্গে বসে সিনেমা দেখেছি। সিনেমাটা দেখতে দেখতে অজান্তেই নির্মাতা থেকে দর্শক হয়ে গেছি, ভেজা চোখে সিনেমা হল থেকে বেরিয়েছি। আমাদের দর্শক এই তো চায়।’

এ নির্মাতা আরও লেখেন, ‘রাহিম, মুখতার, মুন সবার ডেডিকেশন লেভেল যে কী চূড়ান্ত তা নিয়ে আমার ব্যক্তিগত লেভেলে ধারণা আছে। সেই ডেডিকেশনের রিটার্ন আছে এ সিনেমাটিতে। জংলি দর্শক মাথায় বহন করবে শেষ হওয়ার পরেও। অভি, আজাদ ভাইকে ধন্যবাদ এ রকম একটি সিনেমার পাশে দাঁড়ানোর জন্য। ঈদের বাকি সিনেমাগুলো নিয়েও কথা হবে শিগগিরই। ঈদের এতদিন পরে এসেও পছন্দসই সময়ে পছন্দসই ভেন্যুকে সিনেমার টিকিট না পাওয়ার বিড়ম্বনা আমাকে আনন্দিত করে তোলে, আশাবাদী করে তোলে। বাংলা সিনেমার এ সাফল্যের মুকুটে জংলির মতো একটি সিনেমার পালক যোগ করার জন্য পুরো জংলি টিমকে অভিবাদন।’

সবশেষ নির্মাতা উল্লেখ করেন, ‘সিয়াম, যতটা সিনেমায় পারিস দাড়িটা রেখে দিস, অ্যাংরি লুকটাও তোকে খুব মানিয়েছে। একটা অন্য লেভেলের অ্যাকটিং দিয়েছিস তুই, কিপ ইট আপ ব্রো।’

জংলি সিনেমায় প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন সিয়াম আহমেদ। এ সিনেমায় অভিনেতা একাধিক লুকে দর্শকের সামনে হাজির হন। সিনেমায় সিয়ামের বিপরীতে অভিনয় করেছেন প্রার্থনা ফারদিন দীঘি ও শবনম বুবলী। সিনেমায় গানের সুর ও সংগীত আয়োজনের দায়িত্ব পালন করেছেন প্রিন্স মাহমুদ। এদিকে সম্প্রতি স্বামী-স্ত্রী মিলেই প্রেক্ষাগৃহে হাজির হয়েছিলেন সিয়ামের জংলি সিনেমা দেখবেন বলে। সেই সিনেমা দেখার পরই তারা সিদ্ধান্ত নিলেন, বাচ্চা দত্তক নেবেন। ঘটনাটি আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এ বিষয়ে আবির নামে ওই যুবক বলেন, ‘আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজনই দ্বিতীয়বার জংলি দেখলাম এবং উপলব্ধি করলাম শুধু জন্ম দিলেই বাবা-মা হওয়া যায় না। জন্ম না দিয়েও আদর্শ বাবা-মা হওয়া সম্ভব। সেটা জংলি ছবিতে পরিচালক সাহেব দারুণভাবে উপলব্ধি করাতে পেরেছেন। আমরা দীর্ঘদিন ধরেই বাচ্চা দত্তক নেওয়ার পরিকল্পনা করছিলাম। কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না। নানাবিধ প্রতিকূলতা। সেটা সামাজিক কারণেও বলতে পারেন। কিন্তু এ ছবি দেখার পর আমরা উভয়ে সিদ্ধান্ত নিই। সমাজের কে কী বলল সেটা ভাবার দরকার নেই। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, দৃঢ়ভাবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা বাচ্চা দত্তক নেব। ইতোমধ্যে একটি আশ্রমের সঙ্গে কথাও হয়েছে।’