প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১২ এপ্রিল ২০২৫ ১৫:১৩ পিএম
সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা, নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেছেন, নববর্ষের এবারের শোভাযাত্রার থিম হবে কৃষক, যা বাংলাদেশের কৃষি ও কৃষকের প্রতি সম্মান জানাতে চিহ্নিত করা হবে। এটি কৃষকের অবদান ও তাদের সংগ্রামকে স্বীকৃতি প্রদান করবে।
এবার বাংলা নববর্ষে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের জন্য শান্তি কামনা করে উৎসব উদ্যাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা সেমিনার কক্ষে চৈত্রসংক্রান্তি ও নববর্ষ ১৪৩২ উদ্যাপন উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, ‘বিশ্বের একটি দেশ ফিলিস্তিন। সেখানে যেভাবে গণহত্যা চলছে, এ পরিস্থিতিতে শুধু দেশের জন্য শুভকামনা করে নববর্ষ উদ্যাপন করতে পারি না। তাই আমরা সারা বিশ্বের শান্তি কামনা করে এবারের নববর্ষ বা বৈশাখের অনুষ্ঠান উদ্যাপন করব।’
ফারুকী বলেন, ‘এবারের শোভাযাত্রায় দেশের ২০০ ব্যান্ড তারকা উপস্থিত থাকবেন। “ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সি” গান গেয়ে শোভাযাত্রা শুরু হবে। আশা করছি ৫০০ মিউজিশিয়ান এতে যোগ দেবেন।’ তিনি বলেন, ‘সারা দেশে নানা বয়সি মিউজিশিয়ান ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন। তারা তাদের গিটার ও একটি প্যালেস্টাইনের পতাকা নিয়ে নববর্ষে শান্তি কামনা করে শোভাযাত্রায় অংশ নিতে পারেন।’ এ ছাড়া শোভাযাত্রায় অন্য মিউজিশিয়ানদের অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। বাংলা ব্যান্ড মিউজিশিয়ানস ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলা ব্যান্ড মিউজিশিয়ানসের পক্ষ থেকে ওয়ারফেজ ব্যান্ডের সদস্য শেখ মনিরুল আলম টিপু বলেন, চৈত্রসংক্রান্তি ও নববর্ষ কেন্দ্র করে অন্তর্বর্তী সরকার যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তা নিঃসন্দেহ আশাবহ। এ বছর চৈত্রসংক্রান্তি ও নববর্ষের শোভাযাত্রা আরও বড় পরিসরে ও বৈচিত্র্যপূর্ণ করার লক্ষ্যে কিছু আকর্ষণীয় ও ভিন্ন আয়োজন রয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম তারুণ্যনির্ভর ব্যান্ডসংগীতের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি। সময়োপযোগী ও ভিন্ন কিছু বার্তা নিয়ে শোভাযাত্রায় শতাধিক শিল্পী হাজির হবেন।
চৈত্রসংক্রান্তি উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রয়েছে কনসার্ট। বিকাল ৩টা থেকে সেখানে গান গাইবে গারো সম্প্রদায়ের ব্যান্ড এফ মাইনর, মারমা সম্প্রদায়ের লা রং, ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ইমাং, খাসিয়া সম্প্রদায়ের ইউনিটি, চাকমা সম্প্রদায়ের ইনভোকেশন, বাঙালির মাইলস, ওয়ারফেজ, ভাইকিংস, অ্যাভয়েড রাফা, দলছুট, স্টোনফ্রি।
সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের কালচারাল ফিলসফি কী, কেন আমরা এটা করছি? আমাদের সরকারের সব কাজের পেছনে দুটি ব্যাপার কাজ করে। একটি হচ্ছে কালচারাল হিলিং (সাংস্কৃতিকক্ষত পূরণ), আরেকটি হচ্ছে কালচারাল ইনক্লুসিভনেস (সাংস্কৃতিকভাবে অন্তর্ভুক্তি)। আমরা দীর্ঘদিন বিভাজনের মধ্যে ছিলাম। একটা গোষ্ঠীর সঙ্গে আরেকটি গোষ্ঠীর দূরত্ব, সংশয়, অবিশ্বাস ছিল। সেটা থেকে হিলিংয়ের একটা ব্যবস্থা করা হয়েছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রথমবার শিল্পকলা একাডেমি চাঁদরাতে অনুষ্ঠান করেছে। সামনে সারা দেশে হবে। শুধু মুসলমানদের উৎসব ঘিরে নয়, অন্য ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উৎসবগুলোও দেশব্যাপী উদ্যাপিত হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সব জাতিগোষ্ঠীকে নিয়ে একত্রে উৎসব করার চেষ্টা করছি। এর মূল কারণ কালচারাল ইনক্লুসিভনেস। আমাদের শক্তি ও সৌন্দর্য হচ্ছে বৈচিত্র্য। এ বৈচিত্র্যকে আমরা সেলিব্রেট করতে চাই। আমাদের দেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর উৎসবগুলো চৈত্রসংক্রান্তি ঘিরে হয়। আমাদের উৎসবটাও তাই এবার চৈত্রসংক্রান্তি থেকে শুরু হচ্ছে।’
এ ছাড়া চৈত্রসংক্রান্তি উপলক্ষে ১৩ এপ্রিল শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে দেশের ১২ জেলায় সাধুমেলা হচ্ছে। জেলাগুলো হলো চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, বরিশাল, সিলেট, ঢাকা, মাগুরা, কুমিল্লা, কুড়িগ্রাম ও বগুড়া। সেখানে সাধুসঙ্গ ও আধ্যাত্মিক গানের অনুষ্ঠান হবে। অনুষ্ঠান শুরু হবে সন্ধ্যা ৬টায়। এ দিন শ্রীমঙ্গল ও মৌলভীবাজারে বসবে ফাগুয়া উৎসব।
ঢাকার আয়োজন
১৩ থেকে ১৯ এপ্রিল বিকাল ৩টা থেকে বিভিন্ন জেলার স্থানীয় পালাগান, কবিগান, পুথিপাঠ, জারিগান, পুতুলনাচ, লাঠিখেলা, ঢাকিনৃত্য ও লোকনাট্য উৎসব।
১৫ থেকে ৩০ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭টা থেকে অ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শনী সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, নোয়াখালী, ফেনী, হাতিয়া ও লক্ষ্মীপুরে।