প্রবা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ এপ্রিল ২০২৫ ১৯:২০ পিএম
চিত্রনায়িকা পরীমণি। ফাইল ছবি
আলোচিত চিত্রনায়িকা পরীমণির এক বছরের মেয়ে সন্তানকে খাবার খাওয়ানোকে কেন্দ্র করে গৃহকর্মীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে এ নায়িকার বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পিংকি আক্তার রাজধানীর ভাটারা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এরপর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। অভিযোগের বিষয়ে চিত্রনায়িকা পরীমনিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।
ভুক্তভোগী গৃহকর্মী পিংকি আক্তারের অভিযোগ তদন্ত করছেন ভাটারা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, লিখিত অভিযোগ আমরা পেয়েছি, তবে এখনও সেটি নথিভুক্ত করা হয়নি। প্রাথমিক তদন্তের পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে যে এটি জিডি না কি মামলা হিসেবে নেওয়া হবে।
এসআই আরিফুল বলেন, প্রাথমিকভাবে পরীমণির তরফে বলা হয়েছে, তার শিশুসন্তানকে ফেলে দিয়েছিলেন ওই গৃহকর্মী। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে চিত্রনায়িকা তাকে বকুনি দেন। আমরা ধারণা করছি, এর জের ধরে হয়তো চড়- থাপ্পরের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। তবে ভুক্তভোগীর অভিযোগ, তাকে বেধড়ক পেটানো হয়েছে। তদন্তে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে।
নির্যাতনের কথা তুলে ধরে গৃহকর্মী পিংকি আক্তার জানান, এক মাস আগে আমি কাদের নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে চিত্রনায়িকা পরীমণির বাসায় কাজ পাই। আমার দায়িত্ব ছিল পরীমণির এক বছর বয়সি মেয়ের দেখাশোনা করা এবং তাকে খাবার খাওয়ানো। ওনার বাচ্চাকে প্রতি দুই ঘণ্টা পরপর খাওয়ানোর নিয়ম। আমি সেটা মেনে প্রতিদিন বাচ্চাকে দুই ঘণ্টা পরপর খাবার খাওয়াই। তবে আমাকে বাচ্চার দেখাশোনার জন্য নিয়ে যাওয়া হলেও, বাসার অন্য কাজও করানো হতো।
গত ২ এপ্রিল আমি পরীমণির বাসায় তার বাচ্চাটিকে বসিয়ে বাজারের লিস্ট করছিলাম- তার কী কী লাগবে। এ সময় বাচ্চাটা কান্না শুরু করে। এরমধ্যে কান্না শুনে সৌরভ নামে এক ব্যক্তি, যিনি পরীমণির পরিচিত এবং মাঝেমধ্যেই তার বাসায় আসেন, আমাকে বললেন, বাচ্চাটাকে একটু সলিড খাবার দাও। তখন আমি সৌরভ ভাইকে বললাম, ভাই, বাচ্চাটা কিছুক্ষণ আগে সলিড খাবার খেয়েছে, দুই ঘণ্টা হয়নি এখনও। আমি একটু কাজ করি, তারপর তাকে দুধ খাওয়াই।
পিংকি বলেন, আমি এখানে এসে জেনেছি, আমার আগে যে গৃহকর্মী ছিলেন, তিনিও বাচ্চাটা কান্না করলে মাঝেমধ্যে দুধ দিতেন। এ কথা বলে আমি বাচ্চাটার জন্য দুধ রেডি করছিলাম। এরই মধ্যে চিত্রনায়িকা পরীমণি মেকআপ রুম থেকে বের হয়ে আমাকে তুই-তোকারি করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন- আমি কেন বাচ্চার জন্য দুধ নিয়েছি। আমি তখন তাকে বললাম, যেহেতু সলিড খাবার দেওয়ার সময় এখনও হয়নি, তাই আমি দুধ নিয়েছি। তখন পরীমণি আমাকে গালি দিয়ে বলেন, বাচ্চাটা কি তোর না আমার? এরপরই তিনি আমাকে ক্রমাগত থাপ্পড় দিতে থাকেন এবং মাথায় জোরে জোরে আঘাত করতে থাকেন।
ভুক্তভোগী গৃহকর্মী বলেন, তিনি যখন আমাকে থাপ্পড় দিতে শুরু করেন, তখন আমি হতবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। আমি ভেবেছিলাম, তিনি হয়ত দুয়েকটি থাপ্পড় দিয়ে থেমে যাবেন। কিন্তু তিনি থামলেন না- উল্টো আমার মাথায় আরও জোরে আঘাত করতে থাকলেন। তার মারধরে আমি তিনবার ফ্লোরে পড়ে যাই। এরপর তিনি আমার বাম চোখে অনেক জোরে একটি থাপ্পড় মারেন। এ থাপ্পড়ের কারণে আমি এখনও বাম চোখে কিছু দেখতে পাই না। ভয়ংকর এ মারধরের পর আমি জোরে জোরে কান্না করতে থাকি এবং তাকে বলি, আমি আর পারছি না, আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। তখন তিনি আমাকে অকথ্য ভাষায় গালি দিয়ে বলেন, তুই এখান থেকে কোথাও যেতে পারবি না। তোকে এখানেই মারব এবং এখানেই চিকিৎসা করব। এ কথা বলে তিনি আবার আমাকে মারতে আসেন। তখন সৌরভ তাকে বাধা দেন। তিনি কেন বাধা দিলেন, এ কারণে পরীমণি ওনাকেও গালিগালাজ করেন। একপর্যায়ে আমি অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে যাই।
পিংকি আক্তার অভিযোগ করে আরও বলেন, প্রায় এক ঘণ্টা পর আমার জ্ঞান ফেরে। তখন বাসার আরেকজন গৃহকর্মী, বৃষ্টিকে আমি বলি, আমাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা কর। তখন বৃষ্টি আমাকে বলেন, পরীমণি ঘুমিয়েছেন, তাকে এখন ডিস্টার্ব করা যাবে না। তখন আমি কাদের ভাইকে লুকিয়ে বাথরুমে গিয়ে ফোন দিই, তাকে পুরো ঘটনা জানাই এবং সাহায্য চাই- সে যেন আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু সেও আমাকে বলেন, পরীমণি এখন যদি ঘুমিয়ে থাকেন, তাহলে তাকে ডিস্টার্ব করা যাবে না। আর কোনো উপায় না দেখে আমি বাধ্য হয়ে জাতীয় জরুরি সেবার নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করি এবং পুলিশকে জানাই যেন তারা আমাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, এরই মধ্যে আমি আমার এক কাজিনকে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানাই। তিনিও ঘটনা জানতে পেরে পরীমণির বাসার সামনে আসেন। একই সময় পুলিশও আসে পরীমণির বাসার সামনে। এসব ঘটনা পরীমণি জানার পর তিনি বাসার আরেক গৃহকর্মী বৃষ্টিকে বলেন, আমাকে বাসার নিচে নামিয়ে দিতে। পরে বৃষ্টি আমাকে বাসার নিচে নামিয়ে দেন। আমি তখন রিকশা নিয়ে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নিই। তার মারধরের কারণে আমি এখনও অসুস্থ। আমি প্রাথমিকভাবে থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছি, পরবর্তীতে আমি আরও আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করব তার বিরুদ্ধে।