× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সিনেমা রিভিউ

কেমন হলো বরবাদ ও দাগি

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৪ এপ্রিল ২০২৫ ১৩:৪৬ পিএম

ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

ঈদুল ফিতরে দেড় শতাধিক প্রেক্ষাগৃহে আলোর মুখ দেখেছে ছয়টি নতুন ছবি। সিনেমাগুলো নিয়ে আলোচনাও হয়েছে বেশ। আলোচনার শীর্ষে ছিল শাকিব খানের ‘বরবাদ’ ও আফরান নিশোর ‘দাগি’। কেমন ছিল সিনেমা দুটি। আজ থাকছে সেই গল্প।

রুপালি পর্দার ফিনিক্স পাখি বরবাদ

শাকিব খান বরাবরই ঢালিউডের সুপারস্টার, তবে ‘প্রিয়তমা’র পর যেন তিনি নতুন এক অধ্যায়ে প্রবেশ করেছেন। একরকম দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করা এ শাকিবকে আরও উজ্জ্বল করে তুলেছিলেন রায়হান রাফী ‘তুফান’ দিয়ে। কিন্তু এবার সেই ইনিংসকেও ছাপিয়ে গেলেন মেহেদী হাসান হৃদয়! বরবাদে শাকিব খানকে এমনভাবে তুলে ধরেছেন, যা আগে কেউ কল্পনাও করেনি। একদম নতুন এক রূপে, যেন রুপালি পর্দায় ফিনিক্স পাখির মতোই পুনর্জন্ম হলো তার!

বরবাদ গল্পে জটিলতা নেই, কিন্তু গভীরতা রয়েছে। এটি মূলত এক বিত্তশালী পরিবারের বখে যাওয়া সন্তান আরিয়ান মির্জার গল্প, যে ভালোবাসে নীতুকে। তার জন্য সে পুরো দুনিয়া তছনছ করতেও প্রস্তুত! তবে সেই নীতুর কারণেই একসময় সে গ্রেপ্তার হয়। চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলতে শাকিব খান ভয়েস মডুলেশন, সংলাপ বলার ধরন, দেহভঙ্গিমা— সবকিছুতেই এক অনন্য আকর্ষণ তৈরি করেছেন।

শুধু শাকিব নন, ইধিকা পালও বেশ চমক দেখিয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ কিছু দৃশ্যে তিনি এমনভাবে শাকিবের বিপরীতে দাঁড়িয়েছেন যে দর্শক অবাক না হয়ে পারেনি। সাপোর্টিং কাস্টেও মিশা সওদাগর, শ্যাম ভট্টাচার্য, ফজলুর রহমান বাবু এবং মানব সচদেব দারুণ পারফর্ম করেছেন। সিনেমার গানগুলোর মধ্যে ‘মহামায়া’ ও ‘নিঃশ্বাস’ বিশেষভাবে হৃদয়ে গেঁথে যাওয়ার মতো।

তবে দারুণ সব মুহূর্তের মাঝেও কিছু দুর্বলতা চোখে পড়ে। গ্রিন স্ক্রিনের ব্যবহার অনেক জায়গায় একটু কৃত্রিম লেগেছে। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক আরও কিছুটা শক্তিশালী হলে সিনেমার ইমপ্যাক্ট আরও বাড়ত। তবে সবচেয়ে বড় আফসোস যীশু সেনগুপ্তকে নিয়ে। তার চরিত্রটি যতটা ভয়ংকরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছিল, পর্দায় সেই শক্তিশালী উপস্থিতি ঠিকঠাক ফুটিয়ে তোলা হয়নি। অনেকেই সন্দিহান ছিলেন, নবাগত পরিচালক মেহেদী হাসান হৃদয় কি পারবেন শাকিব খানকে নতুনভাবে হাজির করতে? কিন্তু বরবাদ দেখার পর সে সন্দেহের বিন্দুমাত্র অবকাশ থাকছে না। তিনি শুধু শাকিবকে ‘লারজার দ্যান লাইফ’ ক্যারেক্টারে প্রেজেন্ট করেননি, বরং তার ভেতরের স্টারডমকে এক নতুন উচ্চতায় তুলে দিয়েছেন। বাণিজ্যিক সিনেমার বুনিয়াদি সেনসিবিলিটিতে তিনি নিজের দক্ষতার ছাপ রেখেছেন স্পষ্টভাবেই। সর্বোপরি বরবাদ শুধু একটি সিনেমা নয়, এটি শাকিব খানের ক্যারিয়ারে আরেকটি মাইলফলক! আর এমন অসাধারণ ক্যানভাসে তাকে হাজির করার জন্য বরবাদ টিম নিশ্চিতভাবেই প্রশংসার দাবিদার!

মনে দাগ কাটা দাগি

ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত দাগি শুধু একটি সিনেমা নয়, এটি বাংলাদেশের সিনেমাপ্রেমীদের জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা। শিহাব শাহীন পরিচালিত এ ছবিটি রোমান্স, অ্যাকশন, থ্রিলার ও সাসপেন্সের অনন্য সমন্বয়, যা দর্শককে শেষ দৃশ্য পর্যন্ত আটকে রাখে। গল্পের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে নিশান (আফরান নিশো), একজন দাগি আসামি। তবে তার শরীরের কাটা দাগের চেয়েও অতীতের ক্ষত বেশি গভীর। পুলিশ তাকে অপরাধী মনে করে, কিন্তু সত্য আসলেই কী? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে দর্শক আবিষ্কার করে এক জটিল অথচ হৃদয়ছোঁয়া কাহিনী। দাগির গল্প বর্তমান ও অতীতের মাঝে অনবদ্য সেতু তৈরি করে, যা নিশানের জীবনসংগ্রাম আরও তীব্র ও বাস্তবসম্মত করে তোলে। ১৪ বছর কারাগারে কাটানোর পর নিশান যখন মুক্ত হয়, সমাজ তখনও তাকে গ্রহণ করতে প্রস্তুত নয়। নিজের ভুল থেকে বেরিয়ে নতুন জীবন গড়তে চাইলেও প্রতিটি পদক্ষেপে বাধার সম্মুখীন হয় সে।

আফরান নিশো নিশানের চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন। তার চোখের ভাষা, সংলাপের গভীরতা, শরীরী অভিব্যক্তি একেবারে চরিত্রের সঙ্গে মিশে গেছে। বিশেষ করে যখন নিশান তার অতীতের যন্ত্রণা ও বর্তমানের লড়াইয়ের মাঝে দোদুল্যমান, তখন তার অভিনয় দর্শকের হৃদয়ে নাড়া দেয়।

তমা মির্জা (জেরিন) তার চরিত্রে এক অভূতপূর্ব আবেগ যোগ করেছেন। নিশানের প্রতি তার নিঃস্বার্থ ভালোবাসা, কষ্ট ও আশার দোলাচল তিনি দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। শহীদুজ্জামান সেলিম, রাশেদ অপু এবং সুনেরাহ বিনতে কামালও তাদের চরিত্রে দারুণ পারফর্ম করেছেন। বিশেষ করে রাশেদ অপুর সংলাপ মাঝে মাঝে সিনেমায় প্রাণবন্ত মুহূর্ত তৈরি করেছে।

সিনেমার প্রযুক্তিগত দিকও প্রশংসার দাবি রাখে। দৃষ্টিনন্দন সিনেমাটোগ্রাফি, নিখুঁত কালার গ্রেডিং এবং সংলাপের সঙ্গে মানানসই ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক প্রতিটি দৃশ্য বাস্তবসম্মত করেছে। বিশেষ করে অ্যাকশন দৃশ্যগুলোতে হাতাহাতি ও বন্দুকযুদ্ধের কোরিওগ্রাফি এতটাই নিখুঁত ছিল যে দর্শক এক মুহূর্তের জন্যও দৃষ্টি সরাতে পারেনি।

সিনেমার শেষাংশ একদম হৃদয় ছুঁয়ে যায়। নিশানের আত্মত্যাগ, পরিবারের প্রতি তার নিঃস্বার্থ ভালোবাসা এবং বিশেষ করে তার মেয়ের সঙ্গে দৃশ্যগুলো এক আবেগী ব্যঞ্জনা তৈরি করে। এটি এমন এক গল্প যা শুধু পর্দায় সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং দর্শকের মনে দীর্ঘস্থায়ী দাগ রেখে যায়।

দাগি নিছক একটি সিনেমা নয়, এটি আবেগ, লড়াই ও আত্মপরিচয়ের গল্প। নিশো প্রমাণ করেছেন তিনি শুধু ছোটপর্দার নন, বড়পর্দারও এক বলিষ্ঠ নাম। তার চরিত্রের জটিলতা, বেদনা ও শক্তি অনন্য ছাপ রেখে গেছে।

এ সিনেমায় গান তিনটি। ‘আমায় ছেড়ে কোথায় যাবে তুমি’ গানটি সিনেমার আবেগের গভীরতা বাড়িয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া ট্রেলারে যে গানটির কিছু অংশ শোনা গেছে, সেটি বেশ শ্রুতিমধুর ছিল। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের কাজ বেশ ভালো হয়েছে। সিনেমাটোগ্রাফি চোখের আরাম দিয়েছে। কিছু কিছু ভিজ্যুয়ালস বেশ ভালো ছিল। কালার গ্রেডিং জুতসই।

এবার নেগেটিভ দিকগুলোয় আসি। গল্পের প্রথমার্ধ কিছু অনুমান করা যাচ্ছিল। যদিও সেটার উপস্থাপন ভালো। দ্বিতীয়ার্ধ বোধহয় আরেকটু ছোট করা যেত। কিছু সিক্যুয়েন্সে সময় কমানো যেত। তবে সব মিলিয়ে ক্যারিয়ারের সবকিছু ছাপিয়ে গেছেন নিশো।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা