প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০৩ মার্চ ২০২৫ ১৪:২৬ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
ফিলিস্তিনি আন্দোলনকর্মী বাসেল আদ্রার সংগ্রামের গল্প নিয়ে নির্মিত তথ্যচিত্র ‘নো আদার ল্যান্ড’ জিতেছে ৯৬তম অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডসে সেরা ডকুমেন্টারি ফিচার পুরস্কার। রোববার (৩ মার্চ) হলিউডের ডলবি থিয়েটারে আয়োজিত জমকালো অনুষ্ঠানে ছবির দুই নির্মাতা—ফিলিস্তিনি বাসেল আদ্রা ও ইসরায়েলি নাগরিক সাংবাদিক ইউভাল আব্রাহাম পুরস্কার গ্রহণ করেন।
পুরস্কার গ্রহণের সময় নির্মাতারা ফিলিস্তিনের চলমান সংকটের বিষয়ে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ইউভাল আব্রাহাম বলেন, ‘আমরা চাই গাজা ও তার জনগণের বিরুদ্ধে চলমান ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ হোক। এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে আমরা আমাদের কণ্ঠস্বর আরও জোরালো করেছি।’
চার বছরের নির্মাণযাত্রা ও প্রতিরোধের চিত্র
২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে নির্মিত ‘নো আদার ল্যান্ড’ তথ্যচিত্রে দেখানো হয়েছে মাসাফের ইয়াত্তায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞ এবং আদ্রার সংগ্রামের মুহূর্তগুলো। ইসরায়েলি বাহিনী ওই অঞ্চলকে সামরিক প্রশিক্ষণ ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহারের পরিকল্পনা করলেও সেখানে দীর্ঘদিন ধরে বসবাসরত ফিলিস্তিনিরা নিজেদের ভূমি রক্ষায় প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।
তথ্যচিত্রে আদ্রার ব্যক্তিগত ক্যামেরায় ধারণ করা বিভিন্ন ফুটেজ ব্যবহার করা হয়েছে, যেখানে স্থানীয় স্কুল, বসতবাড়ি ধ্বংসের চিত্র উঠে এসেছে। ছবির নির্মাণ শেষ হয় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের ঠিক আগে, যেদিন হামাস ইসরায়েলে হামলা চালায় এবং গাজায় যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়। নির্মাতারা ছবিতে রাজনৈতিক সমাধানের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিলেও মূলত এটি ফিলিস্তিনিদের দুঃসহ বাস্তবতাকে তুলে ধরে।
অস্কারের আগে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি
অস্কারে জয়ের আগে ‘নো আদার ল্যান্ড’ ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ‘দর্শক পুরস্কার’ এবং ‘সেরা ডকুমেন্টারি ফিল্ম’ পুরস্কার অর্জন করে। ছবিটি ইতোমধ্যে ২৪টি দেশে মুক্তি পেয়েছে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কোনো পরিবেশক না থাকায় লিংকন সেন্টারে এক সপ্তাহের জন্য প্রদর্শন করেই এটি অস্কারের জন্য যোগ্যতা অর্জন করে।
বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়া ও নির্মাতাদের বার্তা
ইউভাল আব্রাহাম বলেন, ‘এই ছবির মাধ্যমে আমরা ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে রাজনৈতিক সমাধানের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছি। দুই জাতির জাতীয় অধিকার রক্ষার ভিত্তিতেই শান্তির পথ খুঁজতে হবে।’
বাসেল আদ্রা বলেন, ‘আমরা সারা বিশ্বের মানুষকে আহ্বান জানাই, যেন তারা এই অন্যায় বন্ধ করার উদ্যোগ নেয় এবং ফিলিস্তিনিদের জাতিগত নির্মূলের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়।’
‘নো আদার ল্যান্ড’ কেবল একটি ডকুমেন্টারি নয়, এটি দখলদারিত্ব ও প্রতিরোধের এক বাস্তব চিত্র, যা বিশ্ববাসীর সামনে ফিলিস্তিনের সংগ্রামের চিত্র তুলে ধরেছে।