গোলাম কিবরিয়া
প্রকাশ : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১১:৫৮ এএম
আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১২:২১ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলন শুধু একটি অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই ছিল না; এটি ছিল বাঙালির জাতিসত্তা ও আত্মপরিচয়ের ভিত্তি। সেই চেতনা থেকেই পরবর্তী প্রতিটি আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল। অথচ, এ ঐতিহাসিক অর্জন নিয়ে আমাদের সিনেমা জগতে তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয়নি।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঐতিহাসিক ঘটনাবলি ও আন্দোলন নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের চল বহুদিনের। এসব সিনেমা কেবল বিনোদন নয়, বরং দেশ ও জাতির গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাসের দলিল হয়ে থাকে। এমনকি এসব সিনেমা বক্স অফিসেও সফল হয়। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, বাংলা ভাষার অধিকার আদায়ের আন্দোলন নিয়ে পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্রের সংখ্যা একেবারেই নগণ্য।
মাত্র তিনটি পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্র!
বিগত ৭৩ বছরে মাত্র তিনটি সিনেমায় ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট এসেছে।
১৯৭০ সালে মুক্তি পায় ‘জীবন থেকে নেয়া’। জহির রায়হান নির্মিত এ সিনেমাটি একমাত্র চলচ্চিত্র যেখানে ভাষা আন্দোলনের প্রভাব সুস্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। এ ছবিতে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ গানটি ব্যবহৃত হয়, যা একুশের আবেগ পর্দায় জীবন্ত করে তোলে। ছাত্র আন্দোলন, একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, পুলিশি নির্যাতন সবই ছিল এর গল্পের ভেতর।
২০০৬ সালে মুক্তি পায় ‘বাঙলা’ সিনেমাটি। শহীদুল ইসলাম খোকনের পরিচালনায় ভাষা আন্দোলন নিয়ে নির্মিত দ্বিতীয় চলচ্চিত্র। আহমদ ছফার উপন্যাস ‘ওঙ্কার’ অবলম্বনে নির্মিত এ সিনেমায় অভিনয় করেন হুমায়ুন ফরীদি, মাহফুজ আহমেদ ও শাবনূর।
ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ২০১৯ সালে নির্মিত হয় ‘ফাগুন হাওয়ায়’ সিনেমা। তৌকীর আহমেদের পরিচালনায় নির্মিত এ সিনেমা টিটো রহমানের গল্প ‘বউ কথা কও’ অবলম্বনে তৈরি। এটি ৪৪তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা চলচ্চিত্রসহ তিনটি বিভাগে পুরস্কৃত হয়।
এ ছাড়া সরকারিভাবে ভাষা আন্দোলন নিয়ে ‘হৃদয়ে একুশ’ ও ‘বায়ান্নর মিছিল’ নামে দুটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মিত হয়েছে।
কেন ভাষা আন্দোলন নিয়ে সিনেমা হয় না?
সিনেমাসংশ্লিষ্টরা মনে করেন, ভাষা আন্দোলনের মতো ঐতিহাসিক ঘটনা যথাযথভাবে পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে হলে গবেষণা, সময় ও বিশাল বাজেট দরকার। শুধু আবেগ দিয়ে এ ধরনের ছবি তৈরি সম্ভব নয়। এ ছাড়া ঐতিহাসিক গল্প নিয়ে নির্মাণের ক্ষেত্রে নিখুঁত বাস্তবতা তুলে ধরতে প্রচুর গবেষণা প্রয়োজন হয়, যা অনেক নির্মাতা করতে চান না।
সরকার প্রতি বছর সিনেমার জন্য অনুদান দেয়। সে বাজেট থেকে ভাষা আন্দোলন নিয়ে সিনেমা নির্মাণে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। সময় এসেছে ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়গুলো সংরক্ষণের জন্য বড় পরিসরে কাজ করার। একুশের চেতনা শুধু প্রামাণ্যচিত্র নয়, পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমার মাধ্যমে বড়পর্দায় তুলে ধরা দরকার, যাতে নতুন প্রজন্ম এর গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারে। ভাষা আন্দোলনের গল্প শুধুই ইতিহাস নয়, এটি আমাদের অস্তিত্বের কথা। তাই এ চেতনা বড়পর্দায় নতুন করে প্রাণ দেওয়া এখন সময়ের দাবি!