× ই-পেপার প্রচ্ছদ সর্বশেষ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি শিক্ষা ধর্ম ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

‘বাংলার মায়াভরা পথে’ আর হাঁটবেন না তিনি

প্রবা প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১১:৩০ এএম

প্রতুল মুখোপাধ্যায় : ১৯৪২-২০২৫

প্রতুল মুখোপাধ্যায় : ১৯৪২-২০২৫

দীর্ঘ দিন ধরে অসুস্থ ছিলেন বর্ষীয়ান সঙ্গীতশিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায়। তাঁর প্রয়াণের খবরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে বাংলার সঙ্গীত জগতে। বঙ্গীয় রাজনীতির অনেক উথালপাথালের সাক্ষী প্রতুল রাজনৈতিক বিশ্বাসে ছিলেন সমাজতন্ত্রের শরিক। কিন্তু তা সত্ত্বেও বোধহয় মানুষ আর মানবতাকে তাঁর গানে সবার আগে রাখতেন।

সুরের জাদুকর

১৯৪২ সালের ২৫ জুন অবিভক্ত বাংলার বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন প্রতুল মুখোপাধ্যায়। তার বাবা প্রভাতচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ছিলেন সরকারি স্কুলের শিক্ষক, মা বাণী মুখোপাধ্যায়। দেশভাগের পর তাদের পরিবার চলে যায় পশ্চিমবঙ্গে, যেখানে শৈশব ও কৈশোর কাটান প্রতুল। সংগীতের কোনো প্রথাগত শিক্ষা না থাকলেও ছোটবেলা থেকেই নিজের কবিতায় সুর বসাতেন। হৃদয়ের অনুভূতিগুলো গানে রূপ দিতেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে। তার গানে ছিল সমাজের প্রতিচ্ছবি, ছিল যন্ত্রণা, ভালোবাসা আর আত্মদর্শনের গভীরতা।

কালজয়ী সৃষ্টি

প্রতুল মুখোপাধ্যায় অজস্র গান রচনা করেছেন, তবে তাকে চিরকাল বাঁচিয়ে রাখবে ‘আমি বাংলায় গান গাই’। ২০১১ সালে প্রকাশিত এ গানটি কেবল সংগীত নয়, বাঙালির আবেগ, আত্মপরিচয়ের অনন্য উদ্‌যাপন। এ গানে বাংলার ভাষা, সংস্কৃতি ও চেতনা নতুনভাবে তুলে ধরেছিলেন তিনি। তার সংগীত জীবনজুড়ে বাংলা আধুনিক গান, জাপানি সুরের প্রভাব, এমনকি হিন্দি ছবির গান থেকেও অনুপ্রেরণা পাওয়া গেছে। কিন্তু প্রতিটি গানের মধ্যেই ছিল নিজস্বতার ছাপ।

বিদ্রোহী সুরস্রষ্টা

প্রতুল মুখোপাধ্যায় শুধু একজন গায়ক বা গীতিকার ছিলেন না, ছিলেন এক বিপ্লবী সুরের কারিগর। তার সৃষ্টিতে ছিল প্রতিবাদের ভাষা, সাধারণ মানুষের অনুভূতির প্রতিফলন। সুর আর কথার মেলবন্ধনে বাংলা গানের জগতে তিনি রেখে গেছেন চিরস্মরণীয় অধ্যায়। তিনি চলে গেলেও তার গান রয়ে যাবে মানুষের হৃদয়ে, বাংলার পথের ধুলায়, গাছের পাতায়, নদীর জলে। বাংলার মায়াভরা পথে আর হাঁটবেন না প্রতুল মুখোপাধ্যায়, কিন্তু তার সুর বাজবে চিরকাল।

সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া

সুরস্রষ্টার বিদায়ে দুই বাংলার সাংস্কৃতিক অঙ্গনে যেন নেমে এসেছে শোকের ছায়া। সংগীতশিল্পী লোপামুদ্রা মিত্র ‘প্রতুলদাকে নিয়ে আজ লিখেছি, আপনি তাঁদের মধ্যে একজন, যাঁদের জন্য আমি বাংলায় গান গাই।’ স্মৃতি হাতড়ে গায়িকা বলেন, ‘প্রতুলদা আমাদের থেকে অনেকটা বড়। অনেক দিন ধরে চিনি। কিন্তু প্রথম দিন থেকেই তিনি আমার কাছে “প্রতুলদা”। ওঁর বন্ধুদের একটা দল ছিল। সেই দলের সকলকেই কাকা বলে ডাকতাম। কিন্তু প্রতুলদাকে দাদা বলতাম। ১৯৯৩ সালের বইমেলায় প্রতুলদার সঙ্গে প্রথম আলাপ হয়েছিল। বইমেলায় খালি গলায় গানের আসর বসত। পরে আবার রবীন্দ্রসদনের একটি অনুষ্ঠানে ওঁর সঙ্গে একই মঞ্চে গান গাওয়া। সেই অনুষ্ঠানে সুমন-নচিকেতা-অঞ্জনও ছিলেন। প্রতুলদা নিজে কবিতায় সুর দিয়ে গান তৈরি করতেন। সব মিলিয়ে আমার কাছে বড় অনুপ্রেরণা ছিলেন তিনি।’ শিল্পীর প্রয়াণে অনুপম রায় বলেন, ‘প্রতুলদার আমি বড় ভক্ত। সত্যিই গুণী শিল্পী এবং খুবই ব্যতিক্রমী শিল্পী ছিলেন। তিনি যে সময়ের মানুষ বা ওঁর যা ভাবনাচিন্তা, তা বর্তমানের শিল্পীদের মধ্যে নেই। এখন হয়তো অন্য রকমের কাজ তৈরি হবে। ওঁর সময়েও কিন্তু তিনি ব্যতিক্রমী ছিলেন।’

উল্লেখ্য, প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের জনপ্রিয় অ্যালবামের মধ্যে রয়েছে ‘পাথরে পাথরে নাচে আগুন’ (১৯৮৮), ‘যেতে হবে’ (১৯৯৪), ‘ওঠো হে’ (১৯৯৪), ‘কুট্টুস কাট্টুস’ (১৯৯৭), ‘স্বপ্নের ফেরিওয়ালা’ (২০০০), ‘তোমাকে দেখেছিলাম’ (২০০০), ‘স্বপনপুরে’ (২০০২), ‘অনেক নতুন বন্ধু হোক’ (২০০৪), ‘হযবরল’ (২০০৪), ‘দুই কানুর উপাখ্যান’ (২০০৫), ‘আঁধার নামে’ (২০০৭)। বাংলাদেশে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন থেকে প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের একটি অ্যালবাম প্রকাশিত হয় ২০১১ সালের মার্চে। অ্যালবামটির নাম ‘আমি বাংলায় গান গাই’।


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : মোরছালীন বাবলা

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা