জন্মদিন
প্রবা প্রতিবেদন
প্রকাশ : ০৪ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:১৮ এএম
আপডেট : ০৪ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:১৯ এএম
এন্ড্রু কিশোর
বর্ণাঢ্য সংগীতজীবন তার। বেশ কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের অসংখ্য জনপ্রিয় গানের গায়ক ছিলেন তিনি। কণ্ঠে তুলেছেন প্রায় ১৫ হাজার গান। এর মধ্যে জনপ্রিয় গানের সংখ্যা যে কত; তাও গুনে শেষ করা যাবে না। তার কণ্ঠ নিঃসৃত গান শোনেননি, বাংলাদেশে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। সিনেমার গানে তো তিনি অদ্বিতীয়। সেজন্যই তাকে বলা হয় বাংলা সিনেমার
‘প্লেব্যাক সম্রাট’। তিনি কিংবদন্তি এন্ড্রু কিশোর। আজ তার জন্মদিন।
১৯৫৫ সালের ৪ নভেম্বর রাজশাহীতে জন্মগ্রহণ করেন কিংবদন্তি এই শিল্পী। এন্ড্রু কিশোরের বাবা ক্ষীতিশ চন্দ্র বাড়ৈ এবং মাতা মিনু বাড়ৈ রাজশাহী মহানগরীর বুলনপুর মিশন গার্লস হাই স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। মাতা মিনু বাড়ৈ ছিলেন সংগীত অনুরাগী, তার প্রিয় শিল্পী ছিলেন কিশোর কুমার। প্রিয়
শিল্পীর নামানুসারে সন্তানের নাম রাখেন কিশোর। মায়ের স্বপ্নপূরণ করতেই সংগীতাঙ্গনে পা রাখেন এন্ড্রু কিশোর।
মায়ের দেওয়া কিংবদন্তির নামের ছায়া পেরিয়ে নিজেই আইকন হয়ে ওঠা এন্ড্রু কিশোরের সংগীতজীবনের শুরু হয়েছিল রাজশাহীর ‘সুরবাণী’ সংগীত বিদ্যায়তনে। সেখানে ওস্তাদ আব্দুল আজিজ বাচ্চুর কাছে হাতেখড়ি এবং সংগীতের পাঠ নিয়েছেন এন্ড্রু কিশোর। সেখান থেকেই পেয়েছিলেন সংগীতজীবনের শক্ত ভিত। এক সাক্ষাৎকারে এন্ড্রু কিশোর নিজেই জানিয়েছিলেন, ‘আমার ওস্তাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সে অর্থে তেমন ছিল না। তবে তিনি কণ্ঠ নিয়ে চমৎকার গবেষণা করতেন।
রাজশাহীতে জন্ম নেওয়া কিশোর সেখানেই বেড়ে ওঠেন। পড়াশোনা করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের পর নজরুলসংগীত, রবীন্দ্রসংগীত, আধুনিক, লোকসংগীত ও দেশাত্মবোধক গানের শিল্পী হিসেবে রাজশাহী বেতারে তালিকাভুক্ত হন।
এন্ড্রু কিশোর চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক শুরু করেন ১৯৭৭ সালে আলম খান সুরারোপিত ‘মেইল ট্রেন’ চলচ্চিত্রের ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তার কেউ’ গানের মধ্য দিয়ে। তার রেকর্ডকৃত দ্বিতীয় গান বাদল রহমান পরিচালিত ‘এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী’ চলচ্চিত্রের ‘ধুমধাড়াক্কা’।
তবে এন্ড্রু কিশোরকে আলোচনায় আনে এজে মিন্টু পরিচালিত ১৯৭৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘প্রতিজ্ঞা’ চলচ্চিত্রের ‘এক চোর যায় চলে’ গানটি। সেসময় গানটি অনেক শ্রোতাপ্রিয়তা লাভ করে।
১৯৮২ সালে ‘বড় ভালো লোক ছিল’ চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করে প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন এন্ড্রু কিশোর। মহিউদ্দিন পরিচালিত এই চলচ্চিত্রে সৈয়দ শামসুল হকের লেখা ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’ গানটিতে কণ্ঠ দেন তিনি।
১৯৮৪ সালে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের কথা ও সুরে ‘নয়নের আলো’ চলচ্চিত্রের তিনটি গানে কণ্ঠ দেন তিনি। গানগুলো হলো— ‘আমার সারা দেহ…’, ‘আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন…’ ও ‘আমার বুকের…’। এমন অসংখ্য গানে কণ্ঠ দিয়েছেন এই শিল্পী, যা এখনও মানুষের মুখে মুখে।
ভারতের খ্যাতিমান সংগীত পরিচালক আর ডি বর্মণের সুরে ‘সুরজ’ নামে সিনেমায় এন্ড্রু কিশোর হিন্দিগান গেয়েছিলেন। এ ছাড়া তার সুরে আরও দুটি বাংলা গান করেছেন।
এন্ড্রু কিশোরের জনপ্রিয় গানের তালিকা করাও ভীষণ কঠিন কাজ। তবুও কয়েকটি গানের নাম উল্লেখ করা প্রয়োজন। যেমনÑ ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’, ‘সবাই তো ভালোবাসা চায়’, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘বেদের মেয়ে জোসনা আমায় কথা দিয়েছে’, ‘তুমি আমার জীবন আমি তোমার জীবন’, ‘ভালো আছি ভালো থেকো’, ‘তুমি মোর জীবনের ভাবনা’, ‘চোখ যে মনের কথা বলে’, ‘ভেঙেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা’, ‘তুমি বন্ধু আমার চিরসুখে থাকো’, ‘পড়ে না চোখের পলক’, ‘ও সাথী রে যেও না কখনও দূরে’, ‘কী যাদু করেছো বলো না’, ‘প্রতিদিন ভোর হয়’, ‘তুমি মোর জীবনের ভাবনা’, ‘এতো প্রেম ছিল’, ‘চাঁদের সাথে আমি দেব না’, ‘আকাশেতে লক্ষ তারা’, ‘কারে দেখাবো মনের দুঃখ’ ইত্যাদি।
ব্যক্তিগত জীবনে লিপিকা এন্ড্রু ইতির সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এন্ড্রু কিশোর। এ দম্পতির সংজ্ঞা ও সপ্তক নামের দুটি সন্তান রয়েছে।
গান গেয়ে এন্ড্রু কিশোর আকাশছোঁয়া খ্যাতি পেয়েছেন। সেই সঙ্গে জিতেছেন বহু পুরস্কারও। শ্রেষ্ঠ গায়ক হিসেবে তিনি আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, পাঁচবার বাচসাস পুরস্কার ও দুইবার মেরিল প্রথম আলো পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ২০২০ সালের ৬ জুলাই না ফেরার দেশে পাড়ি জমান কিংবদন্তি এই কণ্ঠশিল্পী।